শ্রীমঙ্গল থানায় দীর্ঘ ১৪ মাস পর স্বপ্না বেগম খুনের মূল রহস্য উদঘাটন। খুনী পরকীয়া প্রেমিক গ্রেফতার

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ শ্রীমঙ্গল থানাধীন সাইটুলা বস্তিতে স্বপ্না বেগম নামে একজন মহিলাকে গলাটিপে হত্যা করে ঘরের ভিতর ফেলে রাখা হয়েছে।  উক্ত সংবাদ পাইয়া শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম নজরুল, ইন্সপেক্টর অপারেশন মোঃ সোহেল রানা, এসআই মোঃ রফিকুল ইসলাম, এসআই মোঃ জাকারিয়া ও সঙ্গীয় ফোর্স সহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া মৃত স্বপ্না বেগম (৩৫) এর মৃতদেহ পাইয়া উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে সুরতহাল প্রস্তুত করতঃ মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য লাশ ময়না তদন্তের নিমিত্তে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, মৌলভীবাজার বরাবর প্রেরণ করেন। ভিকটিমের বোন স্বপ্না বেগমের স্বামী গফুর মিয়া সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামী করে শ্রীমঙ্গল থানার মামলা নং- ০২, তারিখ- ০২/০৮/২০১৭ইং, ধারা- ৩০২/৩৪ দঃ বিঃ দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার ইন্সপেক্টর অপারেশন, মোঃ সোহেল রানা’র উপর অর্পণ করা হয়। ভিকটিমের স্বামী গফুর মিয়া’কে গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করিয়া প্রকৃত খুনীকে সনাক্ত করেন এবং ভিকটিম স্বপ্না বেগমের পরকীয়া প্রেমিক আজাদ মিয়া (২৮), পিতা- মৃত হবিব মিয়া, সাং- সাইটুলা, থানা- শ্রীমঙ্গল, জেলা- মৌলভীবাজার ঘটনার পর হতে পলাতক ছিল। ৭ সেপ্টেম্বর শুত্রুবার সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সসহ আজাদ মিয়া’কে গ্রেফতার পূর্বক থানায় আনিয়া ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, তাহার সহিত সাইটুলা বস্তির তার খালাতো ভাই সম্পর্কীয় গফুর মিয়ার পরিবারের সদস্যেদের সাথে প্রায় দশ বছর পূর্ব হইতে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রায় প্রতিদিনই আসামী আজাদ মিয়া বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন কাজে কর্মে গফুর মিয়াকে সহায়তা করে। এভাবে আনুমানিক সাড়ে তিন বছর পূর্বে গফুর মিয়ার বাড়িতে আসামী যাতায়াত করতে করতে এক পর্যায়ে গফুর মিয়ার স্ত্রী স্বপ্না বেগম (৩৫) এর সহিত আসামীর ঘনিষ্ট প্রেম ভালাবাসার সম্পর্ক তৈরি করে। আনুমানিক তিন বছর পূর্বে গফুর মিয়ার সহিত তাহার স্ত্রী স্বপ্না বেগমের মধ্যে বাড়ির জমি নিয়া ঝগড়া-ঝাটি হয়। স্বপ্না বেগম ঝগড়ার বিষয়টি আসামী আজাদ মিয়াকে জানাইলে সে সিএনজি যোগে স্বপ্না বেগম’র ছোট মেয়ে এবং ছেলে সন্তান সহ রাজনগরস্থ তার পিতার বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। তখন থেকে গফুর মিয়া আজাদ মিয়া’র সাথে তাহার স্ত্রী স্বপ্না বেগমের সম্পর্কের বিষয়টি সন্দেহ করে। স্বপ্না বেগম প্রায় ০৫ (পাঁচ) মাস পিতার বাড়িতে অবস্থান করে এবং পরবর্তীতে আদমজী নারায়ণগঞ্জ গিয়া গার্মেন্টস্’এ চাকরী নেয়। স্বপ্না বেগম সেখানে যাওয়ার কিছুদিন পর আজাদ মিয়া সেখানে যায়। সেখানে স্বপ্না বেগম তাহার দুই সন্তান ও তার মায়ের সাথে আজাদ মিয়া একই কক্ষে স্বামী-স্ত্রীর মত বসবাস করতে শুরু করে। এভাবে প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হওয়ার পর স্বপ্না ও গফুর মিয়ার আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় মুরুব্বীদের মধ্যস্থতায় তারা পুনঃরায় ঘর সংসার করার সিদ্ধান্ত হইলে স্বপ্না বেগম আদমজী নারায়ণগঞ্জ হইতে তাহার পিতার বাড়িতে চলে আসে এবং পরে গফুর মিয়ার বাড়িতে এসে ঘর সংসার শুরু করে। এর প্রায় ১৫/২০ দিন পর আজাদ মিয়াও বাড়ি চলে আসে। আজাদ মিয়া বাড়ি এসে একদিন স্বপ্না বেগমের সাথে দেখা করে কথাবার্তা বলে। তারপর ৩১/০৭/২০১৭ইং তারিখ রাত আনুমানিক ১০.০০ ঘটিকার দিকে আজাদ মিয়া গফুর মিয়ার বাড়িতে গিয়ে ঘরের টিনের বেড়ায় টোকা দিলে স্বপ্না বেগম জানালা খুলে। আজাদ মিয়া তার সহিত বাইরে কোথাও কথা বলতে চাইলে আনুমানিক ১০.৩০ ঘটিকার দিকে সে দরজা খুলে বাইরে আসে এবং ঘরের দক্ষিণ দিকে কাঠাল গাছের নিচে বসে কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে স্বপ্না বেগমের নিকট আজাদ মিয়া’র পাওনা ২,০০০/- টাকা চাইলে স্বপ্না বেগম টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং সে স্বপ্না বেগমের কাছে কোন টাকা পাইবেনা বলে জানায়। এতে আজাদ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে দুই হাত দিয়ে স্বপ্না বেগমের গলা ধরে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে তার গলা চেপে ধরে এবং ৫/৬ মিনিট চেপে ধরে রাখে। কিছুক্ষণ পর সে নিস্তেজ হয়ে যায়। কোন নড়াচড়া না দেখে আজাদ মিয়া বুঝতে পারে সে মারা গিয়েছে। আজাদ মিয়া তার মৃতদেহ টেনে হিচড়ে ঘরের ভিতর দরজার পাশে ফেলে রেখে দরজা বন্ধ করে দ্রুত পালিয়ে আসে।

 

 

 

শেয়ার করুন