বড়লেখা প্রতিনিধি॥ বড়লেখার উত্তর বর্নি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রুবিয়া বেগমের যোগসাজসে প্রায় দেড় বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি রহিম উদ্দিন ও ৬ মাস পূর্বে বদলী হয়ে যাওয়া প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম অবৈধভাবে স্কুলের সরকারী বরাদ্দের ৪০ হাজার টাকা গোপনে ব্যাংক থেকে তুলে আত্মসাৎ করেছেন। এ অভিযোগ বর্তমান স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ও এলাকাবাসীর। উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে ¯ি¬প বরাদ্দের টাকার নয়-ছয় হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার ১৫১টি স্কুলের মত উত্তর বর্নি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েও স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (¯ি¬প) অংশ হিসেবে ৪০ হাজার টাকা সরকারী বরাদ্দ পাওয়া যায়। চলিত বছরের ৩০ জুন উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বরাদ্দকৃত টাকা স্কুলের সংশি¬ষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা দেয়া হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারী এ স্কুল থেকে সুড়িকান্দি প্রাইমারী স্কুলে বদলি হন প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পান তারই স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা রুবিয়া বেগম। প্রায় দেড় বছর পূর্বে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন রহিম উদ্দিন বুদুর। বর্তমান স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে অন্ধকারে রেখে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকা রুবিয়া বেগম, সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম ও সাবেক সভাপতি রহিম উদ্দিন বুদুর গত ৩০ জুলাই গোপনে ব্যাংক থেকে ¯ি¬পের ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। সোনালী ব্যাংক বড়লেখা শাখা তাদের ৩ জনের স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি বৃহস্পতিবার বিকেলে নিশ্চিত করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে ¯ি¬পের বরাদ্দের টাকায় স্কুলের কোন উন্নয়ন কাজের অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া যায়নি। বছরের ১৬ মার্চ অনুমোদিত স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল মোহিত জানান, শুনেছেন স্কুলের উন্নয়ন কাজের জন্য জুন মাসে ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ মিলে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকাকে এ টাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা নিতে বারবার তাগিদ দিলেও তিনি ব্যবস্থা নেননি। পরে জানতে পারেন তিনি, তার স্বামী সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম ও সাবেক সভাপতি রহিম উদ্দিন যোগসাজস করে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। স্কুলের প্রতিবেশি ছাদ উদ্দিন, নুর উদ্দিন, সুলতানা বেগম প্রমূখ অভিযোগ করেন, সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম বিগত ১৭ বছর ধরে বারবার একই ব্যক্তিকে সভাপতি করে দুইজনে মিলে স্কুলের বিভিন্ন সরকারী বরাদ্দ লুটপাট করেছেন।
স্কুলের সাবেক সভাপতি রহিম উদ্দিন বুদুর প্রায় দেড় বছর আগে তার কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে জানান, প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম গত ৩০ জুলাই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রুবিনা বেগমের নামে ৪০ হাজার টাকার একটি চেকে স্বাক্ষর নিতে তার কাছে গেলে তিনি তাতে স্বাক্ষর করে দেন। তিনি ব্যাংকে যাননি। তারাই টাকা তুলেছে। পরে টাকা দিয়ে তারা কি করলো না করলো এর কিছুই তিনি জানেন না।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রুবিয়া বেগমের নিকট এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অত্যন্ত মানসিক চাপে রয়েছেন জানিয়ে কোনকিছুই বলতে রাজি হননি।
সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রিং বাজলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার (প্রাথমিক) রফিজ মিয়া জানান, ফেব্রুয়ারী মাসে বদলি হওয়া প্রধান শিক্ষক ও দেড় বছর আগে মেয়াদ শেষ হওয়া কমিটির সভাপতির নামে এখনও স্কুলের ব্যাংক একাউন্ট বহাল এবং জুলাই মাসে টাকা তুলার ঘটনা আশ্চর্য ব্যাপার এবং এটি অবশ্যই দুর্নীতির ঘটনা। তাদের স্বাক্ষরে স্কুলের টাকা উত্তোলন সম্পুর্ণ অবৈধ। তদন্তপুর্বক তিনি দায়ীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবেন।