সাইফুল ইসলাম,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুটি রেল প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন।
আজ ১০ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্প দুটো বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলওয়ে অংশের সংস্কার এবং আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ (বাংলাদেশ অংশ) নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করা হবে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো.তোফায়েল ইসলাম এতথ্য নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর অংশের সংস্কার এবং আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে অর্থায়ন করবে।
ট্রান্স এশিয়া রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর অংশের সংস্কার প্রকল্প বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেলসংযোগ পুনঃস্থাপিত করবে।
প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫৩ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন, সেতু ও কালভার্ট একাধিক স্টেশন ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে এবং স্থাপন করা হবে নন-ইন্টারলকড কালার লাইট সিগন্যাল-ব্যবস্থা।
এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। মোট ব্যয়ের ৫৫৫ কোটি ৯৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ভারত সরকারের ঋণ। বাদ-বাকি ব্যয় বহন করবে বাংলাদেশ সরকার।
দ্বিতীয় প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন, কালভার্ট, যাত্রী প্ল্যাটফর্ম, প্ল্যাটফর্ম ছাউনি, শুল্ক ও ইমিগ্রেশন ভবন ও রেস্ট হাউস নির্মাণ করা হবে। এতে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪০ কোটি ৯০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। ভারতীয় মঞ্জুরি সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আহসান জাবির বলেন, ‘ভিডিও সম্মেলনটি নির্ধারিত সময়ে কুলাউড়া জংশন রেলস্টেশন চত্বরে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে সর্বসাধারণকে দেখানোর হবে। ইতিমধ্যে রেলপথটির শাহবাজপুর প্রান্তে নতুন রেল সেতু নির্মাণের জন্য পুরাতন সেতু ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গেছে। কয়েক মাসের মধ্যেই এ কাজ দৃশ্যমান হবে।’
মৌলভীবাজার ৪,আসনের সাংসদ ও সরকারী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ ড.আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে কুলাউড়া ও শাহবাজপুর সেকশন পূণর্বাসন প্রকল্প নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমি নিজেই আজ দুপুরের দিকে কুলাউড়ায় যাচ্ছি। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ দুইটি দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সু-সম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি দুটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে এবং এই জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে।’
প্রসঙ্গত: কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটির দৈর্ঘ্য ৫৩ কিলোমিটার। ১৮৮৫ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে অংশ হিসেবে চালু হয়েছিল। এটি ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এ রেলপথটি এক সময় ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এঅবস্থায় ২০০২ সালের ৭ জুলাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই রেল পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার লোকজন দুর্ভোগে পড়ে যান। পরবর্তীতে রেলপথটির সংস্কারকাজ করে পুনরায় ট্রেন চলাচল চালুর দাবিতে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্প অনুমোদন হয়। গত ১৬ আগস্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ পরিদর্শন করেছেন। ১০ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেলের পুরাতন ব্রিজ ও রেললাইন ওঠানোর কাজ শুরু করেছেন। গত জানুয়ারি থেকে রেল লাইনের ওপর জন্মানো ঝোঁপঝাড় পরিষ্কার করা হয়। ইতোমধ্যে কাজের যন্ত্রপাতি পৌঁছে গেছে। দক্ষিণভাগ ও শাহবাজপুর এলাকায় মালামাল রাখা হয়েছে। এখন থেকে কাজ চলমান থাকবে।
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে ছয়টি স্টেশন রয়েছে। সেগুলো হলো, কুলাউড়া, জুড়ী, দক্ষিণভাগ, কাঁঠালতলি, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর। ছয়টি রেলস্টেশনের মধ্যে চারটি বি ও দুটি ডি শ্রেণির হবে। রেলপথটিতে ১৭টি বড় সেতু ও ৪২টি ছোট সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। ভারতের ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’ প্রতিষ্ঠান দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পেয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন ভারতের ‘বালাজি রেল রোড সিস্টেমস’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান।