শ্রীমঙ্গলে একটি মার্কেটের ভূমি দখল নিয়ে দু,পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে

  • মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
    মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পৌর শহরের সাগরদীঘি সড়কের সরকারি ডিসি খতিয়ানের একটি মার্কেটের ভূমি নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধের জেরে এই ভূমির দখল বেদখল নিয়ে দুটি পক্ষের লোকজনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। উচ্ছেদ আতংকে আছেন ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
    তবে জেলা প্রশাসনের গাফলাতির কারণে এই সরকারী ভূমি নিয়ে দু,পক্ষের বিরোধ লেগেই আছে বলে জানিয়েছেন ভূমির প্রকৃত মালিক আব্দুল হালিম।
    সাগরদীঘি সড়কে সরকারী ভূমিতে নির্মিত মার্কেটের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার রুপশপুর মৌজার ‘ক’ তফশীল ভূমির আরএস ১/১ নং খতিয়ানের ৪৬৯৭ নং দাগে ০.৩৮২৪ একর, এস এ দাগে ০.৩৭০০ একর ভূমি ভিপি ‘ক’ তফশীলের ভূমি। বাংলাদেশ সরকারের ভিপি বন্দোবস্ত মোকদ্দমা ৮৬/৬৮ মূলে ১৩/০২/২০০৬ইং সালে আব্দুল হান্নান,পিং-মৃত হাজী আব্দুল গফুর,সাং-শাহীবাগ,শ্রীমঙ্গল,২৪ শতক ভূমি বন্দোবস্ত প্রাপ্ত হয়ে ভোগনির্মাণে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। পরবর্তীতে আব্দুল হান্নানের লীজ বাতিল হয়ে যাওয়ায় ২৫.০৯.২০১১ইং তারিখে ২৪ শতক ভূমির মধ্যে ১৬ শতক ভূমি লীজমানি পরিশোধ করার পর আব্দুল হালিম বাংলাদেশ সরকার থেকে বন্দোবস্ত পায়। আব্দুল হালিম এই মার্কেটের যাবতীয় পৌরকর সময়মতো পরিশোধ করেও যাচ্ছেন। তারমধ্যে ৫ শতক ভূমি তাজুল ইসলাম,পিং- আব্দুল মতলিব সাং-সাগরদীঘি রোড শ্রীমঙ্গল। আর ৩ শতক ভূমি আব্দুল ওয়াহিদ বাচ্চু,পিতা-মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকী,সাং ঘড়গাও,রাজনগর, বাংলাদেশ সরকার থেকে বন্দোবস্ত নেয়।
    এর আগে ২২.০৯.২০০৬ ইং তারিখে লন্ডন প্রবাসী আব্দুল হান্নানের ছেলে আবু বক্কর সিদিক্কী মোহন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে তার পিতার নামে বর্ণিত তফশীলে বন্দোবস্তকৃত ভূমিতে তার কোনো দাবি দাওয়া নাই মর্মে বাংলাদেশ সরকার যেকোনো ব্যক্তিকে লীজ প্রদান করিতে পারবে বলিয়া লিখিতভাবে অঙ্গীকারনামাও দিয়েছেন।
    বিগত ২০১৪ ইং সালে আবু বক্কর সিদ্দিকী মোহন লন্ডন চলে যাওয়ার পর তার মামা জেলা পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান ওই মার্কেটের ২৪ শতক ভূমির মধ্যে ১৬ শতক ভূমিতে নির্মিত মার্কেটের দোকান কোঠা দাবি করে দখলের চেষ্টা চালায়। এছাড়া আব্দুল হালিমের ভাড়াটিয়া উচ্ছেদসহ নানাভাবে হুমকী ধামকী প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে। মার্কেটে মোট আমার ১৩টি দোকান ও ১ টি অফিস রয়েছে। তারমধ্যে তিনটি দোকান কোঠা আব্দুল হালিমের খালা শিরিন আক্তার পার্টনারশীপে ব্যবসা পরিচালনাসহ মার্কেট দেখাশোনা করে যাচ্ছেন ।
    সরেজমিনে গেলে জানা যায়, ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী জিহান পোলট্রি ও আনোয়ার মেটালের অংশীদার শিরিন আক্তার বলেন, আমার বোনের ছেলে আব্দুল হালিমের নিকট থেকে শহরের সাগরদীঘি সড়কে একটি মার্কেটে তিনি ও তার ভাইসহ নয় জন ব্যবসায়ী দোকান ভাড়া নিয়া আট দশ বছর ধরে ব্যবসা করছেন। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে মশিউর রহমান রিপন, আবু বক্কর সিদ্দিকী মোহন কতিপয় লোকদের নিয়ে এসে মার্কেটের মালিকানা দাবি করে তাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করে। তারা এতে রাজি না হওয়ায় তাদের ভয় ভীতি দেখিয়ে দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়ার হুমকি দিতে থাকে। গত ১লা আগস্ট মশিউর রহমান রিপন তার ভাই লিংকন ও তার দলভুক্ত লোকজন তাদের আনোয়ার মেটাল ওয়ার্কশপে এসে দোকানে তালা দিয়ে চাবি দাবি করে। আর চাবি না দিলে তার ভাই শাহিনকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
  • এ ঘটনায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। এ বিষয়টি নিয়ে শ্রীমঙ্গল থানা ও ব্যবসায়ী সমিতির বরাবরে তারা কয়েক বার আভিযোগ করেছেন বলে জানান।
    অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান রিপন বলেন, ‘এ জমির মধ্যে আমি ৪ শতক ভূমির বৈধ মালিক। বাকি ১৬ শতক ভূমি তিন বছর ধরে কারো নামে লিজ নেই।’
    শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন বলেন, জমিজমার মালিকানা ফায়সালা করবে আদালত। তবুও ব্যবসায়ী স্বার্থে আমি দুই পক্ষকে জমির কাগজ নিয়ে আসতে বলেছিলাম। আমার ডাকে এক পক্ষ এসেছে। আরেক পক্ষ আসেনি।
  • শ্রীমঙ্গল থানার ওসি কেএম নজরুল বলেন, এ বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আদালতে বিচারাধীন আছে। বর্তমানে মার্কেটের দখল বেদখল নিয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। তা তদন্ত চলছে যাহাতে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা ঘটতে না পারে সেদিকে আমাদের পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা রয়েছে।’
  • জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলের সহকারী কমিশনার ভূমি মো.আশেকুল হক বলেন,আবুল হালিম বৈধ লীজার। লীজ নবায়নের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্দেশে তদন্ত করে উক্ত ভূমিতে ১৩টি দোকান কোঠা ভাড়াটিয়ার মাধ্যমে আব্দুল হালিমের দখলে পাওয়া যায়। তাই ১৪২৫ বাংলার জন্য লিজমানি ৮৩,৬৪০ টাকা আদায়সহ আব্দুল হালিমের নামে লীজ নাবায়নের জন্য সুপারিশ করে জেলা প্রশাসনে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়। যাহা প্রক্রিয়াধীন আছে।
  • মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো.তোফায়েল ইসলাম বলেন,মার্কেট নিয়ে বিরোধের আছে শুনেছি। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
শেয়ার করুন