শহর প্রতিনিধি॥ দেশে আর কত দিন ভোট লইয়া মারা মারি হইব। এবার নৌকা আর ধানছড়ার ভোট অইবনি। এমন প্রশ্ন আর কৌতুহল এজেলার চা শ্রমিক, কৃষিজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষসহ সবার। এখন জেলার হাটে ঘাটে মাঠে। অল্প করে হলেও স্থান পাচ্ছে নির্বাচনী আলোচনা। তর্ক বির্তক আর যুক্তি গল্পও হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘীরে। লোক সমাগমের স্থান গুলোতে দীর্ঘদিন পর ধীরে ধীরে সরব হচ্ছে এমন আলোচনা। আলোচনায় উঠে আসছে দেশের চলমান রাজনীতি,গণতন্ত্র,ভোট ও উন্নয়ন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শহরের মানুষের মত গ্রামের মানুষেরও উদ্বেগ উৎকন্ঠার শেষ নেই। নির্বাচন হবে কি না। বিএনপি তার শরিকদল ও ১৪ দলীয় জোটের বাহিরে থাকা অনান্য সংগঠন গুলো নির্বাচনে যাবে কিনা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের মত আবারো দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় কি না। ঘুরে ফিরে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে এমন প্রশ্ন আর নানা শঙ্কা ও সংশয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষন এখনো চূড়ান্ত না হলেও সময় ঘনিয়ে আসায় শুরু হয়েছে নির্বাচনী তৎপরতা। ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিতে সরব হচ্ছেন রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও ভোটার। কিন্তু কিছুতেই নির্বাচন নিয়ে অভয় পাচ্ছেন না তৃণমুলের কৃষিজীবী ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলাপে এমনটিই আভাস দিচ্ছেন তারা। গণতন্ত্র রক্ষায় তারা সবাই অবাধ সুষ্ট নিরপেক্ষ ও সবদলের অংশগ্রহনের নির্বাচন চান। কিন্তু তা কি আদৌও হবে। কি হবে না। এমন সন্দেহ আর কৌতুহল তাদের। আর কত দিন ভোট লইয়া মারা মারি হইব ? দেশে কি নৌকা আর ধান ছড়ার ভোট আইবো না। বাবুজি ভোট না আইলে বুজি দেশে শান্তি আইবো না।
সম্প্রতি কমলগঞ্জের মাধপুর লেক দেখতে গেলে একসাথে কয়েকজন সাংবাদিক দেখতে পেয়ে একজন সাংবাদিকের কাছে কয়েকজন চা শ্রমিকের প্রশ্ন ছিল এমন। তাদের মত একই প্রশ্ন লুহাইউনি,হলিছড়া,সিরাজনগর,দিলখোশ ও প্রেমনগরসহ জেলার ৯২টি চা বাগানের শ্রমিকদের। কিন্তু তাদের এমন যুক্তিসঙ্গত প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা ছিলনা ওই সংবাদকর্মীর। কুলাউড়া মৌলভীবাজার সড়কে সিএনজি চালক কাইয়ুম মিয়া,সালাম মিয়া, জেলা শহরের রিকশা চালক তফুর আলী, শফিক ও বাদল মিয়া, কমলগঞ্জ এলাকার কৃষক মাসুক মিয়া, শরীফ আহমদ, নমই মিয়া, জুড়ী এলাকার সমই মালাকার, মুসলিম মিয়া, আনর আলী, কুলাউড়ার মুদি দোকানী আলফু মিয়া, সুজাত রহমান সবজি দোকানী উত্তম দেব, করিম মিয়া, ও বাজিদ আলী, চা দোকানী লিমন খন্দকার ও আরজদ আলী জানালেন একাদশ জতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। কারন হিসেবে জানালেন সব দলের অংশগ্রহনে নির্বাচন না হলে দেশে মারামারি হয়। হরতাল ধর্মঘট হয়। আয় রোজগার কমে যায়। ভয় ভীতি বাড়ে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বাড়াতে তখন সংসার চালানো কষ্ঠকর হয়ে উঠে। প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলার প্রবাসীরাও এমন পরিস্থিতে দেশে আসতে চান না। এমনকি টাকা পয়সাও পাঠান না। তারা দেশে না আসাতে ও টাকা পয়সা না পাঠানোতে ব্যবসা বাণিজ্যের চরম ক্ষতি হয়। ব্যবসায়ীদের দূর্ভোগের অন্ত থাকেনা। তারা বললেন হ্যাঁ এখন ক্ষেতের জমি, গ্রামের মোড়ের চায়ের দোকান আর হাট বাজারে বলতে গেলে গেল কয়েকদিন থেকে সব জায়গায়ই মানুষ নির্বাচন নিয়ে আলাপ করছেন। তবে এই আলাপে নির্বাচনী উৎসব কিংবা আমেজের চাইতে এই ভয়ভীতির কথা গুলোই আলোচনা হচ্ছে বেশি। তারা জানালেন নির্বাচনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরাও প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। চোখে পড়ার মত স্থানে দলীয় প্রধান,নিজেদের ছবি ও দলীয় প্রতীক সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন টানাচ্ছেন। কিন্তু এসব দেখেও ঢালাও ভাবে মানুষ নির্বাচন নিয়ে সেরকম সরব হচ্ছে না অজানা শঙ্কায়। তাদের মত এজেলার বাসিন্দা ব্যবসায়ী,শিক্ষক, রাজনীতিবীদ ও নানা শ্রেণী পেশার খেটে খাওয়া মানুষের সাথে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা নানা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার কথা জানান। তারা বলেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন উৎসবের কারন হলেও আমাদের দেশে উল্টো চিত্র। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে নির্বাচন ও ভোট নিয়ে চলমান এ সংকট আরো ঘনিভূত হয়েছে। তাই ভোটের খবর আসলেই যেন অজানা শঙ্কায় ভর করে।
তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনের কথা স্মরণ করে বলেন সে সময়ে দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়ছিল প্রতিটি খাতে। হরতাল অবরোধ,গাড়ি ভাংচুর,অগ্নিসংযোগ,মানুষ হত্যা, হামলা মামলায় আর পুলিশি ধরপাকড় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। সারাদেশের মত চা ও রাবার শিল্পের রাজধানী হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের এ শিল্পগুলোতেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। চা পাতা ও রাবার সময়মত ঢাকা ও চট্রগ্রামে না পাঠাতে পারায় অধিকাংশ বাগানের কাচা মাল নষ্ট হয়েছে। সে সময় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হন মালিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা বাগান ম্যানেজার বললেন চা শ্রমিকরা নির্বাচন না হলে যে দেশে শান্তি আসবেনা আর চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাও কমবেনা এটা বুঝতে পেরেই তারা নির্বাচনের খোজঁ খবর নিচ্ছেন। কারণ ২০১৪ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরতাল অবরোধের কারনেই তাদের আদি পেশার এ শিল্পটি প্রতিদিনই ক্ষতির শিকার হয়েছিল। সবার মত তাদেরও ধারনা সবদলের অংশগ্রহনে জাতীয় নির্বাচন না হলে দেশে বয়ে চলা অশান্তি দূর হবে না। তিনি জানালেন বাগান এলাকাসহ গ্রামের কৃষিজীবী লোকজন সবসময়ই শান্তি প্রিয়। নির্বাচন নিয়ে হানা হানি কেউই পচন্দ করেনা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশ ও জনগণের কল্যাণে সকলের অংশগ্রহনে ভোটের মাধ্যমে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সমাধান চায় গ্রামীণ এ জনপদের কৃষিজীবী ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের সকল নাগরিকের মত প্রবাসী অধ্যুষিত এজেলার বাসিন্দাদেরও এটাই চাওয়া।