ছয়ফুল আলম সাইফুলঃ
লোকবল সংকটের কারণে প্রায় ৯ বছর ধরে কুলাউড়া উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ চারটি রেলস্টেশন বন্ধ রয়েছে। স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। রেলওয়ে এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লোকবলের অভাবে আখাউড়া-সিলেট রেললাইনের কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও, ভাটেরা, মনু ও ছকাপন স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ভাটেরা ও টিলাগাঁওয়ে ওয়ানওয়ে লাইন চালু রেখে স্টেশন বন্ধ ঘোষণা করে রেল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ছকাপন ও মনু স্টেশনে টিকিট কার্যক্রম আগে চালু থাকলেও তিন বছর ধরে সেই কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। তবে এসব স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে লোকাল মেইল, জালালাবাদ, কুশিয়ারা ও কমিউটার (ডেমু) চারটি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে। একসময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে এসব স্টেশন ব্যবহার করত। কিন্তু স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এসব স্টেশনে লোকাল ট্রেন থামলেও মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের মধ্যে হুইসেল দিয়ে ছেড়ে যায়। এতে যাত্রী ওঠানামা ও মালপত্র পরিবহনে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অনেক সময় তাড়াহুড়ার কারণে বড় দুর্ঘটনার শিকার হয় যাত্রীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারটি স্টেশনই তালাবদ্ধ। যাত্রী সাধারণের নেই কোনো আনাগোনা। ট্রেনের নির্ধারিত সময় অনুমান করে কয়েকজন যাত্রী লোকাল ট্রেনের অপেক্ষা করছে। তাদের জানা নেই কখন আসবে সেই ট্রেন। যাত্রীরা জানায়, একসময় এসব স্টেশনে ট্রেনের সময়সূচি ও টিকিট পাওয়া যেত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনগুলো বন্ধ। ফলে ট্রেনে যাতায়াতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। স্টেশনে টিকিট বিক্রির কোনো কার্যক্রম না থাকায় ট্রেনে উঠে সিলেট এবং অন্যান্য স্টেশনে পৌঁছার পর টিকিট চেকারদের কাছে হেনস্তা হতে হয়। অনেক সময় দ্বিগুণ টাকা দণ্ড দিয়ে তাদের কাছ থেকে ছাড়া পেতে হয়।
স্টেশনগুলো চালুর দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন, অবরোধ এবং রেল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে স্থানীয়রা। কিন্তু দাবি পূরণ হয়নি আজও। এদিকে গত ১০ সেপ্টেম্বর রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেনের মাধ্যমে রেলমন্ত্রী বরাবর কুলাউড়ার চারটি বন্ধ স্টেশন চালু ও কুলাউড়ায় আন্ত নগর ট্রেনের আসনসংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে একটি স্মারকলিপি পেশ করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন ‘কুলাউড়ার সমস্যা ও সম্ভাবনা গ্রুপ’। ভাটেরা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ এ কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ভাটেরা স্টেশন বন্ধ থাকায় যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ট্রেনযোগে সিলেট যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই স্টেশনটি আমাদের অন্যতম বাহন ছিল। স্টেশনটি সচল রাখার দাবিতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মিকাঈল সিপার ও পার্শ্ববর্তী সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদুস সামাদ চৌধুরীর কাছ থেকে ডিও লেটার নিয়ে রেলসচিবের কাছে দিয়েছি। কিন্তু আজও সেই দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। অচিরেই স্টেশনটি চালুর জন্য ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।’ হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু বলেন, ‘শতাব্দীর প্রাচীন মনু স্টেশন দিয়ে হাজীপুর, শরীফপুর, পতনঊষা, টেংরা, রহিমপুর, কামারচাক ইউনিয়নের মানুষ যাতায়াত করত। ট্রেন যাত্রায় পণ্য পরিবহন এবং জনসাধারণের চলাচলে একদিকে যেমন খরচ কম লাগে, তেমনি আরামদায়কও। কিন্তু তিন বছর ধরে এই স্টেশনটি বন্ধ থাকায় এলাকাবাসী বিরক্ত। এর মধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনেক আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।’ কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন মাস্টার মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি বছরখানেক হলো। বন্ধ স্টেশনগুলো মূলত স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্ট ম্যানের অভাবে বন্ধ রয়েছে। আশা করছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মাস্টার ও পয়েন্ট ম্যান নিয়োগ দিয়ে স্টেশনগুলো আবার চালু করবে।