শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ দুইটি উপজেলার বিএনপির কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীর মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে

সাইফুল ইসলাম.
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার দুইটির একাংশের বিএনপি কমিটি নিয়ে বিরোধ-কোন্দল রয়েছে নেতৃমূল নেতাকর্মীর মধ্যে। এই বিরোধের কারণে আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন নেতৃমূল নেতাকর্মীরা।
বিএনপির উপজেলা ও পৌরসভা কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন ও সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামীলীগের দালাল দিয়ে গঠিত এই অবৈধ কমিটি বাতিল করে সত্যিকারের বিএনপি নেতাদের কমিটিতে স্থান দিয়ে কমিটিকে দালালমুক্ত করা হোক বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাজী মজিবুর রহমান চৌধুরী হাজী মুজিব।
জানা যায়,গত ৩০ আগস্ট ২০১৮ইং তারিখে জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো.আতাউর রহমান লাল হাজী স্বাক্ষরিত দলীয়প্যাডে আবু ইব্রাহিম জমসেদকে সভাপতি ও মো.শফিকুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমলগঞ্জ পৌর বিএনপির কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন।
অপরদিকে একই তারিখে গোলাম কিবরিয়া শফি সভাপতি ও মো.আলম পারভেজ চৌধুরী সোহেল সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয়তা বাদী দল বিএনপি কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপি কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।
এদিকে,জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বকশী মিছবাহুর রহমান এর স্বাক্ষরিত দলীয়প্যাডে মো.আতাউর রহমান লাল হাজীকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মো.ইয়াকুব আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয়তা বাদী দল বিএনপি শ্রীমঙ্গল উপজেলার শাখা কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।
হাজী মুজিব বলেন,‘এই কমিটি বিএনপির একাংশের কমিটি না। এটি আওয়ামীলীগের বি-টিম।’ শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসীন মিয়া মধু আমাকে ডির্স্টাব করার জন্য মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের কাছ থেকে একটা কমিটি নিয়া আসছে। নাসের রহমান কমিটি দেয়ার যোগ্যতা নাই। কারণ উনার কমিটি ম্যাডাম ফেলে রাখছে,অনুমোদন দেয় নাই।
ম্যাডাম ৩০ সদস্য বিশিষ্ট একটি সুপার কমিটি গঠন করে দিয়েছিল। সেখানে মিজানকে সেক্রেটারী ও এম নাসের রহমানকে সভাপতি করে বলেছিল যে একমাসের মধ্যে পূণাঙ্গ কমিটি নিয়ে আস এবং কেন্দ্র থেকে অনুমোদন করে নিয়ে যায়।
সেখানে নাসের রহমান ম্যাডামের কথা অমান্য করিয়া জেলা সেক্রেটারী মিজানের নাম বাদ দিয়ে সেখানে জেলা বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট আশিক মোশারফকে সেক্রেটারী হিসেবে তালিকা করে পূণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রেতে সাবমিট করছে। সেই কমিটি হাতে পেয়ে ম্যাডাম বলেছে,আমি যেহেতু সুপার কমিটি করে দিলাম,এই কমিটিতে নাসেরের হাত দেয়ার কথা না?। এই কমিটির ফাইল ম্যাডাম ফেলে রাখছে, বলেছে যাহাতে কোনোভাবে এই কমিটি অনুমোদন দেয়া না হয়। যার ফলে নাসের রহমান এতোদিন উনি নিরব ছিল। এরআগে নাসের একটা আহবায়ক কমিটি দিয়ে ছিল,হয়তো আপনারা জানেন। পূণাঙ্গ কমিটি দিতে হলে আগে জেলার পূণাঙ্গ কমিটি থাকতে হবে। যখন জেলার পূণাঙ্গ কমিটি পাওয়া যাবে, তখন ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা ও পৌর কমিটি দিতে পারবেন। আসলে উনার কোনো কমিটি নাই। কিন্তু এখন নাসের রহমান দেখছে যে, আমি মাঠ গোছাইয়া উঠছি, আমার একটা প্ল্যান ছিল আমি এখন কমিটি করবো না। আমি সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করবো। নির্বাচনে সবাই থাকবে। পদ-পদবীতো বুঝেন ১/২টা। আমার কথা ছিল যাহা ভাল এক্টিভেষ্টি দেখাবে তাহাকে আগামীতে কমিটিতে পদ দেয়া হবে। কিন্তু আমার এই কথার উপর প্রত্যেক নেতাকর্মী রাজি হইছে এবং মাঠে কাজও করছে।
কিন্তু স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক এমপির সাথে আতাত করে এম নাসের রহমান,মহসিন মিয়া মধু আমাকে ডির্স্টাব দেয়ার জন্য এই অবৈধ কমিটি দিয়েছে এইটা বলার সাথে সাথে রিজভী সাহেব তারেক জিয়াকে বিষয়টি জানালেন। তারেক জিয়া নিজে একদিন রাতে আমার ফোন নম্বরে ফোন করে বলেছে,হাজী মুজিব সাহেব আপনার টেনশনের কোনো কারণ নাই,নাসের রহমানের কোনো কথা শুনার দরকার নাই। আমরা একটা চিঠি দিয়ে দিব নাসেরকে। আর কেন্দ্রতে কমিটি জমা দিয়ে আপনার মতো করে আপনি কমিটি অনুমোদন করে নিয়া যান। তখন কোনো কিছু হইলে সরাসরি আমাকে ফোনে জানাবেন। তারেক সাহেব এই কথা বলার পর পর আমি আমার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল দুইটি উপজেলার কমিটি গোছাইছি। কয়েকদিনের মধ্যে কেন্দ্রে জমা দিব। মহাসচিব অনুমোদন দিবেন তারেক সাহেবের নির্দেশে। অনুমোদন দিবেন এবং একটা চিঠিও দিবেন সাংগঠনিক তৎপরতা জেলা থেকে আর কেউ না করে। তারা যে কমিটি অনুমোদন দিয়েছে, সেখানে শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির কমিটিতে জেলা বিএনপির সেক্রেটারী মিজানুর রহমান মিজানের স্বাক্ষর নেই। কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কমিটিতে জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান লাল হাজী স্বাক্ষরে অনুমোদন দিয়েছে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দ সালাউদ্দিন আহমদ বলেন,‘সবার মতামতের ভিত্তিতে বর্তমান কমিটি কমিটি বাতিল করে দীর্ঘদিন ধরে যারা বিএনপির রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাদের মূল্যায়ন করে নতুন করে কমিটি দেয়া হোক। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী পাঁচবারের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে তিনি দলের নেতৃমুল নেতাকর্মীকে কোনঠাসা রাখছেন। ৪/৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কোনো উৎপাদনশীল রাজনীতির সাথে তারা জড়িত না। তাদের নিজস্ব লোক নিয়ে একটি সিন্ডিকেট কমিটি করছে। এই কমিটির প্রতি নেতৃমুল নেতাকর্মীর অনাস্থা আছে।’
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, এখনো জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। আবার দুইটি উপজেলার বিএনপির কমিটি দেয়া হয়েছে,তা সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারী স্বাক্ষর ছাড়া কোনো কমিটি কেউ অনুমোদন দিতে পারে না। গঠনতন্ত্রে মোতাবেক এই ক্ষমতা আমাদেরকে দেয়া হয় নাই। ইচ্ছা করলে শুধু এককভাবে সেক্রেটারীকে বাদ দিয়ে সভাপতির স্বাক্ষরে কোনো কমিটি দেয়া হয় তাহলে সেটি হবে অবৈধ কমিটি। কিছুদিন আগে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর কাছে নালিশ করেছি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী বলেন,আমি দলের প্রতিষ্টালগ্নে থেকে দল করে আসছি। আমি কয়েকবারের সেক্রেটারী। এটি আওয়ালীমীগের দালাল কমিটি হবে কিভাবে। কয়েকদিন আগে মামলায় জড়িয়ে কারাভোগ করে আসছি। আমরা রাজপথে থাকি,সভা-সমাবেশ করি। আমরা পুলিশের হয়রানি শিকার হতে হয়। এই কমিটি বিএনপির পরীক্ষিত কমিটি। এই কমিটির প্রত্যেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৮/১০টি করে মামলা আছে।’
পৌর কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,শ্রীমঙ্গল পৌরসভা বিএনপি কমিটি খুব শিগগিরই সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা বলে তিনি জানান।’
প্রসঙ্গত: ২০১৭ সালের ২৭ মে ৪৮ সদস্য বিশিষ্ট মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির কমিটি করা হয়। এরপর দেড় বছর পার হলেও কমিটির সভাপতি এম নাসের রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের বিরোধে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি হয়নি। এই কারণে জেলা বিএনপির কোনো সাংগঠনিক ঐক্য নেই।

শেয়ার করুন