শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ মৌসুম ছাড়াও সারা বছরই পাওয়া যায় বিভিন্ন শাকসবজি। বর্তমানে প্রযুক্তি আর উন্নত জাত ব্যবহারের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটিয়ে যাচ্ছে চাষিরা। তার মধ্যে টমেটো অন্যতম। এ অঞ্চলে শীত মৌসুমে সাধারণত টমেটোর চাষাবাদ হয়। একক সময় শীত ছাড়া টমেটো দেখা যেতো না বাজারে। কিন্তু এখন দর দামের একটু তারতম্য থাকলেও এখন বছর জুড়েই বাজারে মেলে এ টমেটো। দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায়ও গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদের মাধ্যমে চাষিদের নতুন দিনের যাত্রা শুরু করেছেন। মেীসুম ছাড়া এ টমেটোর বাজার দর যেমন ভালো তেমনি ক্রেতার কাছে চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। অন্যদিকে টমেটো চাষে অধিক আগ্রহী হচ্ছেন এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা।
জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা সবজি উৎপাদনে সবসময়ই অনন্য অবদান রেখে চলেছে। অন্যান্য সকল সবজি চাষের পাশাপাশি টমেটো চাষে বিপ্লব ঘটেছে এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর করেছেন কৃষক। কম বিনিয়োগে বেশি লাভজনক হওয়ায় এই সবজি চাষে ঝুঁকেছে উপজেলার অনেক চাষী। উৎপাদিত টমেটো জমি থেকেই বিক্রি হওয়ায় বাজারজাতকরণ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না চাষীদের। ফলে দিন দিন টমেটো চাষে চাষীদের আগ্রহ বাড়ছে।
সরেজমিনে উপজেলার সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় অনেকেই অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি টমেটো চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। অল্প খরচে বেশি লাভের কারণে দিন দিন টমেটো চাষীর সংখ্যা এবং জমির পরিমাণও বাড়ছে।
এদিকে টমেটো চাষে কেবল মাত্র চাষীদের ভাগ্য বদলেছে তা কিন্তু নয়; টমেটো চাষে সরকারি আরও সুযোগ সুবিধা বাড়লে এবং টমেটো চাষে সরকারি অর্থায়নে আর্থিক সুবিধা প্রদান করে টমেটো চাষে সকল ধরনের সহায়তা পেলে এ অঞ্চলের গরীব ও বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন এ অঞ্চলের বিজ্ঞ জনেরা।
উপজেলা কুঞ্জবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ডা. মো. একরামুল কবীর জানান এই এলাকার লোকজন টমেটো চাষে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। অনেকে অর্থের অভাবে চাষাবাদ করছেরন না। কেউ কেউ সরকারি সুযোগ সুবিধা পাবেন কি না তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। যদি সরকারিভাবে টমেটো চাষে আরও সহযোগীতা করেন তাহলে এ গ্রামের অনেক শিক্ষত যুবকরা বেকার থেকে দুরে থাকবে। এবং দরিদ্র থেকে গরীব মানুষেরা কর্মস্থল তৈরী করতে পারবে।
উপজেলার কয়েকটি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় টমেটো চাষে অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ। এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষে কৃষকের শ্রম ও সময় কম লাগে। খরচও কম হয়। টমেটো শীতকালীন ফসল হলেও চলতি বর্ষা মৌসুমে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আটজন কৃষক এবার মালচিং পদ্ধতিতে বারি-৪ ও ৮ টমেটোর চাষ করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে বন বেগুনের সঙ্গে গ্রাফটিং করে এই জাত উদ্ভাবন করা হয়।
সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের টিলাগাঁও গ্রামের কৃষক মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, তিনি এবার প্রথম ১০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটোর চাষ করেছেন। এ পদ্ধতিতে তিনি লাভবান হচ্ছেন। প্রতি গাছে ৫-৭ কেজি টমেটো ধরে। একদিন পর পর টেেমটো গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারে পাইকারি দর ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি করেন। তাতে তিনি লাভবান হচ্ছেন বলে জানা।
খোয়াজঁপুর গ্রামের টমেটো চাষী আলী হোসেন (লিটন) জানান তিনি প্রায় ৩০ শতাংশ জমিতে টমেটোর চাষ করেছেন। টমেটো চাষ করে তিনি লাভবান মনে করছেন। তিনি জানান সারা বছরই এখন টমেটো চাষ করা যাবে। যদি কৃষি অধিদপ্তর থেকে সর্বাত্তক সহযোগীতা পাওয়া যায় তাহলে আমার মতো টমেটো চাষে আরও অনেক চাষীরা এগিয়ে আসবেন। এবং সকলেই লাভবান হবেন।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মালচিং হলো এক ধরনের পলিথিন। পলিথিনের উপড়ের অংশ সাদা এবং নিচের অংশ কালো। যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। রোগ-জীবাণু থেকেও গাছকে রক্ষা করে। অতিরিক্ত পানি রোধ করে। গাছের গোড়ায় আগাছা হয় না।
কৃষকরা জানায় এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করতে হলে প্রথমে জমি তৈরি করে মাটির সঙ্গে প্রয়োজন মতো সার মিশিয়ে বেড তৈরি করতে হবে। বেডের প্রস্থ হবে এক মিটার। এক বেড থেকে আরেক বেডের দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার। এরপর জমিতে তৈরি করা সবকটি বেড মালচিং পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পলিথিনের নিচে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে তাই বেডের চার পাশে পলিথিনের ওপরে ভালোভাবে মাটি চাপা দিতে হবে। বেডে চারা রোপণের জন্য ১৮ ইঞ্চি দূরত্ব রাখতে হবে। চার ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ দিয়ে ছিদ্র করে ওই ছিদ্রে টমেটোর চারা রোপণ করতে হবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলে মালিচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ খুবই প্রযোজ্য। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মালচিং পদ্ধতিতে টমেটোর চাষাবাদ খুবই উপযোগী। বর্তমানে এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এতে কৃষকদের শ্রম, সময় ও অর্থ কম লাগছে। বর্তমানে ১৩টি গ্রামে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করা হয়েছে। সারা দেশেই কৃষকরা এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করতে পারবে। তিনি এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষাবাদ করার জন্য উপজেলার সকল কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সর্বাত্তক সহযোগীতা দেয়া হবে বলে জানান।