শ্রীমঙ্গলের অস্থায়ী আওয়ামীলীগের কার্যালয়টি তালাবদ্ধ

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-৪ সংসদীয় আসন। এ আসনে বিগত পাঁচটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী উপাধক্ষ্য মো. আব্দুস শহীদ এমপি। বলা চলে, আওয়ামীলীগের দুর্গ এ আসনটি। এছাড়া, চা শ্রমিক, নৃতাত্বিক জনজাতি গোষ্টি ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এ এলাকার জনগণ প্রগতিশীল মানসিকতা ধারণ করেন। কিন্তু, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের কোন স্থায়ী কার্যালয় নেই এ দুই উপজেলায়। শ্রীমঙ্গল উপজেলার হবিগঞ্জ রোডে একটি অস্থায়ী কার্যালয় যাও আছে সেটির অবস্থাও করুন। পুরোনো ও জরাজীর্ণ ভবনের ১ম তলায় মাত্র ৫০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে সাইনবোর্ড সর্বস্ব একটি কার্যালয় রয়েছে। নেই কোন সরঞ্জাম, নেই কোন ডিজিটাল ডিভাইস বা ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি। পড়ে আছে ভাঙ্গা ও ঘুনে ধরা কয়েকটি চেয়ার। নেই পর্যাপ্ত বসার স্থান, সুর্যের আলো প্রবেশের নেই কোন ব্যবস্থা, এককথায় আলোচনা, বৈঠক বা অনুষ্ঠানের নুন্যতম সুযোগসুবিধা নেই। একসাথে ৪০/৫০ জনের বেশী লোকের সংকুলান করা যায় না। প্রায় পুরো বছরই বন্ধ থাকে, বিশেষ কয়েকটি দিনে পতাকা টাঙ্গানো, মাইক টাঙানো ও ঘন্টা কয়েক খোলা থাকে। স্থায়ী দলীয় কার্যালয় না থাকায় ও অস্থায়ী দলীয় কার্যালয়ের এমন তথৈবচ অবস্থায় দলীয় নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন আগন্তুকরা বিভিন্ন উপরের সারির নেতাদের সাথে মিলিত হতে বেগ পেতে হয়। কার্যালয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত, আলোচনা না হওয়ায় বেশীরভাগ নেতা-কর্মীরাই ইচ্ছা থাকা সত্বেও দলীয় কার্যে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।
এলাকার প্রান্তিক জনগণ তাদের দাবী-দাওয়া, অভিযোগ-অনুযোগ, সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর নেতাদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিতে হয়। শ্রীমঙ্গল চৌমুহনাস্থ একটি মিষ্টির দোকান ও রেস্টুরেন্টকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে দলীয় নেতা কর্মী ও জনগণের সীমিত সংযোগ। মোটামোটিভাবে এই প্রতিষ্টানেই আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাসহ সকল স্থরের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়। ওখানেই, ভুক্তভোগীদের সাথে শলাপরামর্শ ও সংযোগ রক্ষা করার একটা চেষ্টা দেখা যায় নেতাদের মধ্যে। অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মতো একটি জনপ্রিয় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যদি দলীয় কার্যালয় বিমূখী মনোভাব থাকে তাহলে নের্তৃত্ব গড়ে উঠবে না। আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় মানে একটি ইনস্টিটিউশন। আর নেতা-কর্মীসহ শিক্ষিত রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিবর্গদের সাথে সংযোগ ও যোগাযোগে ঘাটতি থাকায় এ আসনে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না। ফলে, আগামী দিনের ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে নিতে এখন থেকেই শিক্ষিত, মার্জিত, টেকসেভী, তরুন নেতা – কর্মী সমর্থকদের রাজনৈতিক সচেতন করে নেতৃত্ব তৈরী করার বিকল্প নেই। শ্রীমঙ্গলের চেয়ে আরো করুন অবস্থা কমলগঞ্জের আওয়ামীলীগের কার্যক্রমে। সেখানে স্থবিরতা বিদ্যমান। নেই অস্থায়ী কার্যালয়ও। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য, উপজেলা আওয়ামীলীগ সা. স¤পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমানের বাসভবনে দাপ্তরিক কার্যাবলী সারা হয়। ফলে এ উপজেলায় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক কার্যালয় বলতে কিছু নেই। নেতাদের বাড়ি বাড়ি ছুটে যাওয়া ছাড়া ভিন্ন আর কোন গন্তব্য নেই নেতা কর্মীসহ ভুক্তভোগীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একআওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ উপজেলাসহ পুরো আসনের উন্নয়ন যা হওয়ার তো হয়েছেই! দলীয় কার্যালয় প্রতিষ্ঠায়ও কারো কোন নজর নেই। এ বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধক্ষ্য আব্দুস শহীদ একটানা পাঁচবার নির্বাচিত হয়ে আসলেও দলের জন্য ইতিবাছব ভূমিকা রাখেননি তিনি। এমনকি আওয়ামীলীগের স্থায়ী কার্যালয় স্থাপনেও কোন প্রকার পদক্ষেপ নেননি এই সাংসদ। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধক্ষ্য আব্দুস শহীদ নিজ দলীয় কর্মকান্ডে কোন ভূমিকা না রাখলেও সরকার বিরোধী জামাত বিএনপির নাসকথা সৃর্ষ্টিকারীদের সাথে রয়েছে সখ্যতা। এই সাংসদের ছত্রছায়ায় রয়েছে জামাত বিএনপির পেট্রোল বোমা হামলাকারী বেশ কিছু নাশকতাকারী। এমন কর্মকান্ডের ফলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের সাথে দুরুত্ব তৈরী হয়েছে এই সাংসদের।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুর রহমান বলেন, আমি কয়েক বছর আগেই স্থায়ী কার্যালয় স্থাপনের জন্য ৩-৪ শতাংশ জায়গার ব্যবস্থা করেছিলাম, কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্যের এ ব্যাপারে নজর না থাকায় আর বেশীদুর এগুতে পারিনি। আমি আগামীতে মনোনয়ন পেলে ও নির্বাচিত হলে সর্বপ্রথম কাজ হিসেবে দুই উপজেলায় দলীয় কার্যালয় নিমার্ণের উদ্যোগ নেব।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক শহীদ হোসেন ইকবাল বলেন, একটি পুরাতন বিল্ডিং এ শ্রীমঙ্গল আওয়ামীলীগের অফিস। ভবনটি ডেমিজ থাকায় জরাজির্ন অবস্থায় রয়েছে। তাই বড় বড় মিটিংগুলো কমিউনিটি সেন্টারেই করা হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন