বিশ্ব শিক্ষকদিবস : শিক্ষকদের প্রকৃত মর্যাদা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ ৫ অক্টোবর শুক্রবার) বিশ্ব শিক্ষক দিবস।বক্ষমান প্রবন্ধের শুরুতে ইসহকর্মীসহ শিক্ষকতা পেশায় জড়িত সকল শিক্ষকের প্রতিঅকৃত্রিম শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও হৃদয় নিংড়ানো শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কোর সদস্যভুক্ত প্রতিটি দেশে ১৯৯৪ খৃস্টাব্দের ৫ অক্টোবর থেকে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালিত হচ্ছে। ২০১৮ সালের বিশ^ শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে-‘শিক্ষার অধিকার মানে হচ্ছে উপযুক্ত শিক্ষক পাওয়ার অধিকার’।’

‘The right to education means the right to a qualified teacher. শিক্ষার জন্য যোগ্যতা সম্পন œশিক্ষকের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
শিক্ষক দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শিক্ষকদের মর্যাদা ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষকের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা, মান সসম্মত শিক্ষা তথা সকল শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করণে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোকপাত করা এবং প্রবীণ শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাকে জানা ও কাজে লাগানো। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সর্বত্রই দিবসটি পালিত হচ্ছে।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড আর সেই মেরুদন্ডকে সোজা রাখতে শিক্ষকের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। ইসলাম শিক্ষককে উচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) রসুল (সা.) এরশাদ করেন-‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শিখো। তাকে সম্মান করো যার থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন কর। (আলমুজামুলআউসাত : ৬১৮৪)।
পৃথিবীর মাঝে সর্বোৎকৃষ্ট পেশা হলো শিক্ষকতা। মানব জাতির সবচেয়ে বড় শিক্ষক বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ও শিক্ষক হিসেবে গর্ববোধ করতেন।তিনি তাঁর অন্যতম দোয়ায় বলেছেন-‘হে আল্লাহ! আপনি শিক্ষকদের ক্ষমা করুন, তাদের দীর্র্ঘ হায়াত দান করুন’।
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক অ্যারি স্টটলর মতে-‘যাঁরা শিশুদের শিক্ষা দানে ব্রতী তাঁরা অভিভাবকদের থেকেও অধিক সম্মানীয়। পিতা মাতা আমাদের জীবন দান করেন ঠিকই। শিক্ষকরা সেই জীবনকে সুন্দও ভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে তৈরি করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় শিক্ষককে। শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদেও কাছে বাবা-মায়ের মতো। বাবা-মা যেমন তাদের ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা দিয়ে সন্তানদের বড় করেন, ঠিক তেমনি শিক্ষকেরা শিক্ষার আলো দিয়ে শিক্ষার্থীদেও ভবিষ্যৎগড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা কওে যান। এর সাথে থাকে স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা। তাঁদের শিক্ষার আলো যেমনি শিক্ষার্থীদের সামনের পথ চলাকে সুদৃঢ় করে, তেমনি তাদের স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে।
শিক্ষকের মান-মর্যাদা অপরিসীম। খলিফা হারুনুর রশীদ একবার তার সন্তানের শিক্ষার খোঁজ খবর নিতে শিক্ষকের বাড়ি যান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, তার সন্তান ওই শিক্ষকের পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে। শিক্ষক তখন নামাজের জন্য অজু করছিলেন। তার সন্তান এব ংশিক্ষকের এ অবস্থা দেখে খলিফা পরদিন শিক্ষককে ডেকে পাঠাল। শিক্ষক তো ভয়ে অস্থির। তার ধারণা হয়েছিল, রাজপুত্রকে দিয়ে পায়ে পানি ঢালানোর কাজ করিয়েছেন। এ অপরাধে নিশ্চয়ই তার কঠিন সাজা হতে পারে। যাই হোক পরদিন ভয়ে ভয়ে দরবারে উপস্থিত হলে খলিফা শিক্ষককে ভর্ৎসনা কওে বলেন, তার সšানকে শিক্ষকের কাছে পাঠানো হয়েছে সঠিক আদব শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়ার জন্য। কেন তার সন্তানকে এক হাতে পানি ঢেলে অন্য হাতে পা ধুয়ে দেওয়ার জন্য আদেশ করা হলো না। (তালিমুলমুতাআল্লিম, পৃষ্ঠা ২২)।
শিক্ষকতা শুধু সম্মান জনক মহান পেশানয় বরং একটি ইবাদতও। শিক্ষককে হতে হয় নৈতিক আদর্শে উজ্জ্বল। যিনি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে জ্ঞান তৃষ্ণা জাগিয়ে মনের সুকুমার বৃৃত্তিগুলোর পরিচর্চা করে শিক্ষার্থীকে আদর্শ মানুষে পরিণত করেন। আমাদের দেশে আদর্শ শিক্ষকের বড় অভাব। সততা, নৈতিকার ঘাটতি সর্বত্রই। শিক্ষার মানোন্নয়নের ঘাটতিও কম নয়। শিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করার তৎপরতা লক্ষণীয়। শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি বর্তমান সময়ের অন্যতম দাবি। এটি অর্জনের অন্যতম কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক।
শিক্ষক প্রদীপের মতো নিজেকে জ্বালিয়ে অন্যকে আলো দান করেন, অর্থাৎ শিক্ষক অমর তিনি বেঁচে থাকেন ছাত্রের আদর্শের মাধ্যমে। প্রত্যেক শিক্ষকের উদ্দেশ্য থাকা উচিত আদর্শ শিক্ষা প্রদান।
একটি ব্যাপক প্রক্রিয়া ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়নের পূর্বশর্ত, যা পালন করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। প্রতিষ্ঠান প্রধান শুধু প্রিন্সিপাল-ই নন তিনি একজন শিক্ষকও। প্রিন্সিপালকে কেবল ছাত্রদেওই শিখাতে হয়না, তাঁকে শিখাতে হয় প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। দক্ষতার সঙ্গে সমন্বয় ঘটাতে হয় প্রশাসনিক কার্যক্রম ও অ্যাকাডেমিক সুপারভিশনের এবং ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি করতে হয় আত্মিকমেল বন্ধন। তবে তার বড় পরিচয় তিনি একজন শিক্ষক।
তবে দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, শিক্ষকতার পেশা উত্তম পেশা হলেও এতো বছর পরেও বাংলাদেশের শিক্ষকদের প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষাঙ্গনসহ নানা জায়গায় শিক্ষকরা আজ অপমানিত হচ্ছেন! আসলে শিক্ষকসহ গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা বোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ নামক জিনিসগুলোকে আমরা টেনে হেঁচড়ে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিতে চাইছি। মনে রাখতে হবে যে,শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁদের যথাযথ সম্মান দিতে হবে। শুধু সরকারিনয়; ইবতেদায়ি মাদরাসা, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ সর্বস্তরের শিক্ষক সমাজের বেতনসহ নানা প্রতিকূলতায় তাঁদের পাশে ও সরকার এবং আমরা ঐক্যদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে।

শেয়ার করুন