শ্রীমঙ্গল শহরের ৪৫ হাজার পৌরবাসীর বর্জ্য ভোগান্তির অবসান

  • শ্রীমঙ্গল(মৌলভীবাজার)প্রতিনিধি:
    মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শ্রীমঙ্গল শহরের বর্জ্য ভোগান্তির অবসান হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যর হস্তক্ষেপে অবশেষে পৌরসভায় ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে পৌর এলাকার বর্জ্য ফেলা শুরু হয়েছে।
    ৮অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্থানীয় সাংসদ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদের হস্তক্ষেপে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডের প্রবেশপথের বাঁধা অপসারণ করে নেয়। এরপর পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ট্রাকে করে শহরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে জমে থাকা বর্জ্য পরিস্কারের কাজ শুরু করে। এর ফলে ময়লার দুর্গন্ধ থেকে প্রায় ৪৫ হাজার পৌরবাসী গত এক সপ্তাহের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি পায়।
    সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় কলেজ রোডে ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ শ্রীমঙ্গল কলেজ কমিটির নেতৃবৃন্দসহ পৌরসভার কিছু কর্মীরা বাঁশের খুঁটি তোলে রাস্তার বাঁধা অপসারণের কাজ শুরু করে। এসময় পাশ্ববর্তী মাদ্রাসা থেকে কিছু ছাত্র এসে বাঁধা দেয়। ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠায়। এরপর পর পরই বর্জ্য নিয়ে দুটি ট্রাক ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে প্রবেশ করে।
    ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে অবস্থানরত পৌরসভার কর্মী অসীম রায় জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ময়লা জমেছে। আজ সারা রাত পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজ করবে।
    শিক্ষার্থীর আন্দোলনের নেতা শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন,‘আসন্ন শারদীয় দূর্গাপূজা ও পৌরবাসীর দূর্ভোগ লাঘবে উপাধ্যক্ষ ড.মো.আব্দুস শহীদের নির্দেশে পৌরসভাকে ছয় মাসের সময় প্রদান করে এই টেঞ্চিং গ্রাউন্ডে বর্জ্য ফেলার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
    রাত নয়টারদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ি কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি শহরে স্থানে স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লার স্তুপ ঘুরে দেখেন এবং তা দ্রুত অপসারনের জন্য পৌরসভার কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী আব্দুল করিম, কাউন্সিলর মীর এমএ সালাম,ছাদ উদ্দিন,আলকাছ মিয়া, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী,সম্পাদক এম ইদ্রিস আলীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
    এদিকে শ্রীমঙ্গল শহরের বর্জ্য সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত পৌরসভার প্যানেল মেয়র মীর এমএ সালাম বলেন,‘বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কলেজ সড়কের টেঞ্চিং গ্রাউন্ডে টিনের বেড়া দিয়ে ময়লার দুর্গন্ধ সুরক্ষা করে শহরের ময়লা ফেলতে। একই সাথে শহরতলীর জেটি রোডের উত্তর ভাড়াউড়া এলাকায় ময়লা ফেলার জন্য পৌরসভাকে যে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেখানে দ্রুত কাজ শুরু করা।
    জেলা প্রশাসক মো.তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অংশ নেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আজিজুর রহমান, পুলিশ সুপার মো.শাহজালাল,শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো.আছকির মিয়া,ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সহিদ হোসেন ইকবাল,পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দু কুমার দেব,পৌরসভার পক্ষে অংশ নেন পৌর সভার প্যানেল মেয়র কাজী আব্দুল করিম,মীর এম এ সালাম,মো.ছাদ উদ্দিন,এলাকাবাসীর পক্ষে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী হারুন,বেলায়েত হোসেন ও শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোত্তালিব আকিব প্রমুখ।
    ১৯৩৭ সাল থেকে কলেজ সড়কের ময়লার ভাগাড়ে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সেখানে ময়লা ফেলে আসছে। তখনকার সময় এর আশপাশে জনবসতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। সময়ের বির্বতনে শ্রীমঙ্গলের সুনামধন্য বিদ্যাপীঠ দি বাডস রেসিডেন্সিয়্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ ও একটি দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাতহাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৫০/১০০ গজ পাশেই এই ময়লার ভাগাড়ের অবস্থান।
    উন্মুক্ত এই ভাগাড়ে প্রতিদিনই কমপক্ষে ২০/২৫ টন শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকার গার্ভেজ ফেলা হচ্ছে। আর এই ময়লার উৎকট দুর্গন্ধে আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দীর্ঘদিনধরে ভোগে আসছেন। সম্প্রতি এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থী,অভিভাবক ও এলাকাবাসী মিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামন থেকে ভাগাড় সরিয়ে নেওয়ার জন্য সভা সমাবেশ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করে।
শেয়ার করুন