-
সাইফুল ইসলাম,
মৌলভীবাজার জেলায় ৯৯৫টি পূজা মন্ডপের মধ্যে শ্রীশ্রীমঙ্গলচন্ডী মন্দিরে শুরু হয়েছে নয়দিন ব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের নবরুপে নবদূর্গা পূজা।
অশুভ শক্তির বিনাশ আর দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি কামনায় এ পুজা শুরু হয়। পাহাড়ি এলাকা,চারদিকে চা বাগান বেষ্ঠিত শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নের ইছামতি চা বাগানের ভেতরে মঙ্গলচন্ডী সেবাশ্রম (১০অক্টোবর) বুধবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে দেবী দূর্গার পূজা। আর এ পূজাতেও রয়েছে বৈচিত্রতা। দেবীপুরাণ চন্ডির বর্ণনানুযায়ী দশভোজা দেবীর ৯টি রূপের কাঠাম তৈরী করে এ পূজার আয়োজন হয়েছে। ব্যতিক্রমী এ পূজা দেখতে ভক্তরা ভীড় করছেন সেখানে। বৈদিক বিধান অনুযায়ী দেবী দূর্গার রয়েছে ৯টি রূপ।-
প্রথম দিন শ্রীশ্রীশৈলপুত্রী মাতা দেবীর পূজা করা হয়েছে। এভাবে শ্রীশ্রীব্রক্ষচারিণী, শ্রীশ্রীচন্দ্রঘন্টা, শ্রীশ্রীকুষ্মান্ডা, শ্রীশ্রীস্কন্দমাতা, শ্রীশ্রীকাত্যায়নী, শ্রীশ্রীকালরাত্রী, শ্রীশ্রীমহাগৌরি, শ্রীশ্রীসিদ্ধিদাত্রী ও শ্রীশ্রীনির্মাল্যবাসিনী মাতার পূজা সমাপনান্তে শোভাযাত্রাসহ প্রতিমা বিসর্জন ও বিসর্জনাস্তে শান্তিবারি সিঞ্চন। আর দেবীর এই নবরুপে অষ্টমবারের মতো পূজার আয়োজন করে প্রায় দুইশত বছরের প্রাচীন দেবস্থলী মঙ্গলচন্ডিসেবা শ্রমে পূজা কমিটি।
ভক্ত শ্রাবনী সেন রুমী জানান, ‘মানত নিয়ে এসেছি। আমরা এখানে মায়ের কাছে আসি আর্শীবাদ নেই আর প্রার্থনা করি যে সুন্দর করে চলাচল করতে পারি। সমাজে যেন কোন অশুভ শক্তি বিরাজ না করে সেই জন্য মায়ের কাছে প্রার্থনা করি।’
এখানে স্কুল পড়–য়া ছাত্র সীতারাম ও স্বপন পাল জানান, ‘এখানে প্রতিবছর বড় করে নবদুর্গা পূজা হয়। আমরা এখানে মায়ের কাছে আর্শীবাদ নিতে আসি যাতে করে ভালো ভাবে পড়াশোনা করতে পারি এবং পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে দেশের জন্য কিছু করতে পারি।’
বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ, শ্রীমঙ্গল পৌর শাখার দপ্তর সম্পাদক নকুল দেবনাথ (নান্টু) বলেন,সারাদেশের অনান্য মন্ডপে পুজা শুরু হবে আগামী ১৫ অক্টোবর আর শেষ হবে ১৯ অক্টোবর। কিন্তু এ মান্ডপে পূজা শুরু হয় ১০অক্টোবর বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়। শ্রীশ্রীশৈলপুত্রী রুপে পূজা করা হয়েছে। এভাবে আগামী দশমী তিথি পর্যন্ত দেবীর ব্রম্মচারিনী, কুষ্মান্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, মহাগৌরি, চন্দ্রঘন্টা ও সিদ্ধিদাত্রী ও নির্মাল্যবাসিনী রুপে পুজা করা হবে।’ -
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যতিক্রমী এ পূজা দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনাথীরা ভীড় করতে শুরু করেছে। পুজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও মেলা বসেছে। মেলায় অনেক দোকান পাঠ রয়েছে। ঢাক-ঢোল,শঙ্খধ্বনী আর ভক্তদের আগমনে উৎসব মূখর হয়ে উঠেছে মঙ্গলচন্ডী মন্দির।
আগামী ১৯ অক্টোবর দশমী তিথিতে শোভা যাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এই নবদূর্গা পূজা। দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় এই পূজার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানালেন আয়োজকরা।
মঙ্গলচন্ডী নব দূর্গা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী পরিমল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী দিলীপ দত্ত বলেন, অষ্টমবারের মতো মঙ্গলচন্ডী সেবাশ্রমে নবদুর্গা পূজার আয়োজন করেছি। প্রতিবছর মঙ্গলচন্ডী সেবাশ্রমে নবরুপে নবদূর্গা পূজা অর্চনা হয়। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের মধ্যে আমরাই এখানে নবদূর্গার পূজার আয়োজন করে থাকি। এখানে সিলেট অঞ্চল তথা দেশ-বিদেশের ভক্তবৃন্দদের আগমণ হয় এবং আনন্দ ফুর্তি হয়। গতবছর ভারত থেকে অনেক ভক্তবৃন্দ এসেছেন। নবদূর্গা পূজায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করা হয়। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
৯দিন ব্যাপী এ পূজা মৌলভীবাজারবাসীর কাছে যোগ হয়েছে যেমন নতুনমাত্রা। তেমনি এটি জগতের মঙ্গল বয়ে আনবে এমনটা আশা পূজারীদের।
মন্দিরের পুজারী দিপক চক্রবর্তী বলেন,‘দুইশ বছরের প্রাচীন এই মঙ্গলচন্ডীথলি। দশবছর ইইছে মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। নবদূর্গা অষ্টমবছর হইছে। প্রতিদিন ৩/৪ প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। এবার প্রথম শুরু হয়েছে মানুষের উপস্থিতি কম আছে। দুইদিন পর থেকে ভক্তবৃন্দের ভিড় বাড়তে থাকবে।’
মেলায় মিষ্টি দোকানদার দেবাশীষ বৈদ্য বলেন, আমি আট বছর ধরে ব্যবসা করছি। মঙ্গলচন্ডী সেবা শ্রমে পুজা উপলক্ষে প্রতিবছর দোকানে ব্যবসা ভাল হয়। গতবছর ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছিল। এবছর আরও ভাল হবে তিনি মনে করেন।’
শ্রীশ্রীমঙ্গলচন্ডী থলিতে নবরুপে নবদূর্গা পুজা শুরু
শেয়ার করুন