সাইফুল ইসলাম,
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে পর্যটন শিল্প বিকাশে সরকার বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। শ্রীমঙ্গলকে পর্যটন জোন হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা চলছে। এর অংশ হিসেবে সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে খুব শিগগিরই। রাস্তাঘাট উন্নীত হলে এই এলাকায় লোক সমাগম বেড়ে যাবে। এতে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হবে।’
প্রাকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলা। পাহাড় আর চা বাগান বেষ্ঠিত এ জেলা যেন সবুজের গালিচা। পাহাড়, ঝরনা, হাওর, নদীর এক অপরূপ রূপে সজ্জিত জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। দৃষ্টিনন্দন সব পর্যটন স্পট আর প্রকৃতির নজরকাড়া মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আকৃষ্ট করে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। বছরের সবসময়ই হাজারও পর্যটকের পদভারে মুখর থাকে এ জেলার পর্যটন স্পটগুলো। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অব্যবস্থাপনা এবং সরকারী অবকাঠামো গড়ে না উঠায় পর্যটকরা নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
অপরদিকে,পর্যটকদের নিরাপত্তায় গঠিত ট্যুরিস্ট পুলিশের রয়েছে জনবল ও অবকাঠামো সংকটে। মৌলভীবাজার জেলায় ছোটবড় শতাধিক পর্যটন স্পট রয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ সূত্র জানায়, জেলায় পর্যটন স্পটে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের জনবল ও গাড়ি বৃদ্ধি এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্যাম্প স্থাপন।
জেলায় রয়েছে মাছের অভায়শ্রম বাইক্কাবিল হাইল হাওর, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), চা শ্রমিকদের জীবনধারা, আনারস বাগান ও লেবু বাগান, খাসিয়া পান পুঞ্জি,মাধবপুর লেক,হাম হাম জলপ্রপাত,মাধবকুন্ড জলপ্রপাত,ডবলছড়া পান পুঞ্জি, হরিণছড়া গলফ মাঠ,নিরালা পানপুঞ্জি,ক্যামেলিয়া হাউস,বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক ও মনুব্যারেজ এবং হাকালুকি হাওর।
এছাড়া রয়েছে খাসিয়া, ত্রিপুরা, মণিপুরী, সাঁওতাল প্রভৃতি নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মনোমুগ্ধকর জীবনধারা। আরও রয়েছে চা বাগানের নৈসর্গিক অর্ধশতাধিক স্পট।
এদিকে প্রায় একযুগ ধরে শ্রীমঙ্গল শহরের কালিঘাট রোডে পর্যটন কর্পোরেশনের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করলে তাতে ফিনলে চা কোম্পানির লিজকৃত জায়গা উল্লেখ করে আপত্তি জানায়। এতে বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায় যারফলে ওই জায়গাটি নিয়ে চড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
জানতে চাইলে জেমস ফিনলে টি কোম্পানির ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম শিবলী বলেন,২০০৯/১০ সালের দিকে তৎকালীন ডিসি মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন। তবে কর্তৃপক্ষকে জমি বরাদ্দ দেয়নি।’
শ্রীমঙ্গল রির্সোট মালিক সুমি বেগম বলেন, সবার আগে দরকার অবকাঠামো গড়ে তোলা। পর্যটকরা এক জায়গায় যাবো- যদি সেখানে যাওয়ার মতো রাস্তা না থাকে। তাহলে যাবো কীভাবে। তাই বিষয়টি ভেবে দেখার সময় এসেছে।
বেশ কয়েক বছর ধরে পর্যটন ব্যবসায় সঙ্গে জড়িত আছেন শ্রীমঙ্গলের উদ্যেক্তা ও লাউয়াছড়া ইকো কটেজের পরিচালক মো.সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, জেলার সবগুলো স্পট বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্পট। অথচ শ্রীমঙ্গল থেকে লাউয়াছড়া যাওয়ার যে রাস্তা, এর মতো নাজেহাল সড়ক খুবই কম আছে। একই অবস্থা জেলার হামহাম জলপ্রপাতসহ সবকটি পর্যটন স্পটের রাস্তা। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি না করে পর্যটন বিকাশ সম্ভব হবে না।
এদিকে,দুইদিন ধরে ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাব ও বৃষ্টির কারণে মৌলবীবাজার জেলার পর্যটনস্পট গুলোতে পর্যটক শূণ্য।
শ্রীমঙ্গল পর্যটক পুলিশের উপ-পরিদর্শক নোয়াব আলী বলেন, সারাদিন বৃষ্টির কারণে পর্যটকরা ঘর হতে বের হতে পারছেন না। আবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকরা দূর্ভোগ পড়েছেন।’
ইউএনও মো.নজরুল ইসলাম আরও বলেন,পর্যটন শিল্পকে উন্নতিকল্পে যা যা করার দরকার এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধির সাথে ইতিমধ্যে মতবিনিময় হয়েছে। সেখানে পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির ছিলেন। তার সামনে পর্যটনসমস্যা গুলো তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্টরা।পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান স্যার সমস্যাগুলো শুনেছেন। তিনি বলেছেন,পর্যটন উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশন যথেষ্ট নয়। এর সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জড়িত আছে। যেমন এলজিইডি,স্বরাষ্ট্র,স্থানীয় সরকারসহ যারা যারা আছেন তাদের অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান স্যার শ্রীমঙ্গল বেশ কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করেছেন। রির্সোট নির্মাণের লক্ষ্যে উপযুক্ত স্থান নিধারণ করা হয়েছে। পর্যটন কর্পোরেশন পূর্ণাঙ্গ রির্সোট অফিসসহ পর্যটকের জন্য যতটুকু বিনোদনের ব্যবস্থা করার জন্য যে পরিমাণ জমি দরকার তা পেয়েছি। আশা করি খুব শিগশিরই কাজ শুরু হবে। ’
শ্রীমঙ্গলে পর্যটন শিল্প বিকাশে সরকার আবাসন তৈরির পরিকল্পনা গ্রহন
শেয়ার করুন