আজকে আবারও পড়ন্ত বিকেলে কাটানো কিছু সুন্দর দৃশ্যের কথা বলি। দুটি পাতা একটি কুঁড়ির অসংখ্য চা বাগানের মধ্যে সিলেট শহরেরর খুব কাছের একটি চা বাগান “খাদিম চা বাগান”। শাহপরান মাজারের গেট পেরিয়ে আরও একটু এগিয়ে গেলে হাতের বামদিকে খাদিম চা বাগানের রাস্তা। এখান থেকে শুরু হয় বুরজান, গুলনি, কালাগুল ট্রেইল। পাহাড়ি উঁচু নীচু পথের দু’পাশে চোখ জুড়ানো চা গাছের সারি। মানুষের আনাগোনা অনেক কম বলে পরিবেশ এখানে অনেক শান্ত; চুপচাপ। প্রকৃতিকে নিজের মতো অনুভব করা যায়।
হেমন্তের হালকা শীতশীত মিষ্টি এই সময়ে চা বাগানে বেড়ানোর আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ চা ফুলের দেখা পাওয়া। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় চা। প্রতিদিন সারাবিশ্বে প্রায় এক বিলিয়ন লোক চা পান করে থাকে। চায়ের সাথে আমাদের নিবিড় পরিচয় থাকলেও চায়ের ফুল আমাদের কাছে অপরিচিত।
চায়ের ফুল দেখতে অনেকটা নাগকেশর ফুলের মতো। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন চা ফুল হালকা মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত। পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট দুধসাদা ফুলের মাঝখানে রয়েছে স্বর্ণাভ পরাগকেশর। বিখ্যাত ক্যামেলিয়া ফুল চা গাছের সহ প্রজাতি। চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Camellia Sinensis (ক্যামেলিয়া সিনেনসিস)। চা ফুল অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। বিদেশে প্রসাধনী তৈরিতে চা ফুল ব্যবহৃত হয়। চা ফুলের ফেস প্যাকও অত্যন্ত জনপ্রিয় । সুগন্ধি বাড়াতে চা ফুল শুকিয়ে গুড়ো করে চা পাতার মধ্যে মেশানো হয়।
চোখে ঘোর লাগা সবুজের সমারোহ নিয়ে চা বাগানগুলো অনন্য সৌন্দর্যের আধার। পাহাড়ি ঝিরির কুলকুল শব্দে বয়ে চলা; রঙবেরঙের বুনোফুল; পাখির কূজন; ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা ডাক; ধ্যানমগ্ন প্রকৃতি যেন আমাদের অন্য জগতে নিয়ে যায়।
দ্রুত সন্ধ্যা হয়ে আসছিলো। কিন্তু প্রকৃতিতে নিমগ্ন আমার কন্যা ও তাঁর বাবাকে কিছুতেই ফেরানো যাচ্ছিলোনা। বাগানের একটু গভীরে পাহাড়ি ঝিরি; ঝিঁ ঝিঁ পোকা আর পাখির ডাকের মিলিত শব্দ যে তাঁদের বড় প্রিয়।
তবুও ফিরে আসতে হয়। প্রকৃতির এই অনন্য ছোট ছোট চিত্র; অপরূপ দৃশ্য ক্লান্ত নাগরিক জীবনে আমাদের স্বপ্নময় বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগায়।