স্টাফ রিপোর্টার॥দীর্ঘদিনের প্রেম, এরপর শারীরিক সম্পর্ক, মুঠোফোনে অশ্লীল ছবি ধারণ দুই দফা বিচার বৈঠকে সমাধান না হওয়ায় স্ত্রীর অধিকার দাবি করে প্রেমিক মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পতনউষার ইউনিয়নের বুন্দাবনপুর গ্রামের নীলমনি দাসের ছেলে প্রাবাসী সজল দাসের বাড়ীতে অবস্থান নেয় প্রেমিকা। প্রেমিকা একই ইউনিয়নের বৈরাগীর চকের প্রদীর দাসের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা দাস।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায়। আকস্মিকভাবে প্রেমিকের বাড়িতে এসে অবস্থান নিলে প্রেমিকের পরিবার সদস্যরা তাকে(প্রেমিকাকে) দুই দফা মারধর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের বৃন্দাবনপুর গ্রামের নীলমনি দাসের ছেলে ওমান প্রবাসী সজল দাস (২২) এর সাথে বৈরাগীরচক (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের প্রদীপ দাসের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা দাস (১৯) এর সাথে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রিয়ঙ্কা যখন ৮ম শ্রেণীতে পড়ছিল তখন থেকে সজলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সম্প্রতি ওমান থেকে প্রেমিক সজল দাস দেশে ফিরে এসে প্রিয়াঙ্কার সাথে দেখা করে। প্রিয়াঙ্কাকে চাপ সৃষ্টি করে তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও শারিরীক সর্ম্পক গড়ে তুলে। সাথে সাথে মুঠোফোনে গোপনে শারীরিক সম্পর্কের চিত্রধারণ করে। এই ধারণকৃত দৃশ্যও আবার লোকজনদের দেখানো হয়। এতে প্রিয়াঙ্কা অসম্মান বোধ করে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিচার প্রার্থনা করে।
পতনউষার ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রকৌশলী তওফিক আহমদ ও সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম আহমদ চৌধুরী, ইউপি সদস্যসহ এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে দুই দফা সালিশ বিচার বসে। সালিশ বিচারে কোন সমাধান না হলেও প্রেমিক সজল দাস আত্মগোপন হয়। এর প্রতিবাদে প্রেমিকা প্রিয়াঙ্কা দাস স্ত্রীর অধিকার দাবি করে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রমিকের বাড়িতে অবস্থান নেয়।
প্রিয়াঙ্কা দাসের বাবা প্রদীপ দাস অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই প্রতারণা করে সজল দাস এতসব ঘটনা ঘটিয়েছে তার পর তার মেয়ে সে বাড়িতে অবস্থান নিলে সে বাড়ির লোকজন শুক্রবার রাতে দুই দফা প্রিয়াঙ্কাকে মারধর করেছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে নীলমনি দাস উল্টো কমলগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেছেন।
সালিশ বিচারে উপস্থিত হওয়া পতনউষার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম আহমদ চৌধুরী ও পতনঊষার ইউনিয়নের ০২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ কুদ্দুছ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য বর্তমান চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার তওফিক আহমেদ বাবু ও এলাকার নেতৃবৃন্দ বৃন্দাবনপুরস্থ সুধীর দাসের বাড়ীতে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে প্রেমিক সজল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং মুঠোফোনে এই সংক্রান্ত আলামত পাওয়ায় চেয়ারম্যান মুঠোফোন জব্ধ করেন। পরবর্তীতে বৈঠকে তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওই বৈঠকে উভয় পক্ষ উপস্থিত হলেও প্রেমিক সজল দাস উপস্থিত হয়নি।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী তওফিক আহমেদ বলেন, ছেলেটি বিষয়টি প্রথম পর্যায়ে অস্বীকার করলেও মুঠোফোনের আলামতে তা প্রমাণিত হয়। ২য় বৈঠকে ছেলে উপস্থিত না হওয়ায় সমাধান হয়নি। তিনি আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কার পরিবারকে।
সরজমিন সজল দাসের বাড়িতে প্রেমিকা প্রিয়াঙ্কা দাসের সাথে কথা হলে সে সমুহ ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলে এখন সে স্ত্রীর অধিকার আদায়ে ঐ বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে। এ বাড়ি থেকে তাকে তাড়াতে গত শুক্রবার রাতে দুই দফা ও আজ শনিবার আরও এক দফা মারধর করা হয়।
ঘটনা সম্পর্কে সজল দাসের বাবা নীলমনি দাস বলেন, এলাকার কিছু মানুষ জোর করে মেয়েটিকে আমার বাড়িতে এনে দেন। ছেলে সজল দাস কয়েকদিন ধরে বাড়িতে নেই। কোথায় গেছেন তা তিনি জানেন না।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, এরকম ঘটনাটি শুনেছেন। তবে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হকও এ ঘটনা শুনেছেণ বলেও জানান। তিনি আরও বলেন এ ঘটনায় সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকলে আদালতে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করতে হবে। তার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।