এইচ ডি রুবেল॥ দীঘদিন থেকে অযতনে অবহেলায় ও গাফিলতির কারণে কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরী বর্তমানে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দেখার যেন কেউ নেই! পাবলিক লাইব্রেরীর মূল লক্ষ্য দেশী বিদেশী, নামীদামী লেখকের বই সংরক্ষণ এবং তা পাঠক মহলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। কিন্তু বর্তমানে কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরীর কার্যক্রম বন্ধ। যার ফলে পাঠক মহল বঞ্চিত হচ্ছেন জ্ঞান চর্চা থেকে। জানা যায়, কুলাউড়া পৌর শহরের স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধের পাশে নির্মিত হয়েছিল পাবলিক লাইব্রেরী। ১৯৮৪ সালের ২৬ জুন তৎকালীন ইউএনও মোঃ সিরাজুল ইসলাম এই পাবলিক লাইব্রেরীর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর পাবলিক লাইব্রেরী অনেক সুনামের সহিত পরিচালিত হয়ে আসছিল। পাবলিক লাইব্রেরীর নামে কুলাউড়া সোনালী ব্যাংকে একটি এ্যাকাউন্টও রয়েছে। পদাধিকার বলে তৎকালীন ইউএনও মোঃ নাজমুল হাসান ছিলেন লাইব্রেরী পরিচালনা কমিটির সভাপতি। সে সময় ইউএনও অফিসে বসে লাইব্রেরীয়ানদের নিয়ে একটি সভা করে তৎকালীন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শরীফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল লাইব্রেরীকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু পরে তা আর হয়ে উঠেনি। সরেজমিন দেখা যায়, লাইব্রেরীর বারান্দায় কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা দখল করে নির্দ্বিধায় তাদের খাট/পালং এর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। লাইব্রেরীর ভিতরে প্রবেশ করে গিয়ে দেখা যায়, মেঝের অবস্থা খুবই শোচনীয় ও কর্দমাক্ত। ভিতরের প্রতিটি অংশ মাকড়শার জালে ছেয়ে আছে। সেই কবে থেকে চালু করা বৈদ্যুতিক পাখাটি এখন পর্যন্ত চালু অবস্থায় পাওয়া যায়। লাইব্রেরীর ভেতরের টেবিলে অনেকগুলো খবরের কাগজ এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে আছে। দেখে যেন মনে হচ্ছে প্রায় ৩০টি চেয়ার তার আসন পেতে বসে আছে পাঠকের জন্য।
আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, আমাদের পথ প্রগতির পথ। আমাদের অতীত ও বর্তমান বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করা খুবই প্রয়োজন। জ্ঞান অর্জনের জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এর উত্তম পন্থা হলো পাবলিক লাইব্রেরী। পাঠকমহলের সুবিধার্থে অচিরেই পাবলিক লাইব্রেরীটি চালু করার জন্য সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। পাবলিক লাইব্রেরীর ৫নং সদস্য এম মছব্বির আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা নিয়মিত অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের লেখা দূর্লভ বইগুলো পড়তাম। যে বইগুলো অন্যত্র পাওয়া দুষ্কর। প্রতি সপ্তাহে দুটি করে বই পড়তাম। বছরে ত্রিশ টাকা ফি দিতাম। বর্তমানে আমরা এখান থেকে কোন বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছি না। আমি জোর দাবি জানাচ্ছি, অচিরেই যেন এই লাইব্রেরীর কার্যক্রম চালু করা হয়।
পাবলিক লাইব্রেরীর লাইব্রেরীয়ান অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ খুরশিদ উল¬াহ বলেন,পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার পর জনৈক একজন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তারপর লাইব্রেরীয়ানের দায়িত্ব ৬ বছর পালন করেন রাবেয়া আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আলাউদ্দিন আহমদ। এরপর ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমি লাইব্রেরীয়ানের দায়িত্বে ছিলাম। সহকারী লাইব্রেরীয়ান ছিলেন শামছুদ্দিন আহমদ। আমাদের মাসিক ১২শ’ টাকা করে সম্মানি দেয়া হতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় ২০১৩ সালের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত কোন সম্মানী ভাতা আমাদের দেয়া হয়নি। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে শামছুদ্দিন মারা যান। এরপর লাইব্রেরীর দিকে আর কারো চোখ পড়েনি। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আশেকুল হক বলেন, আমি সরেজমিন পাবলিক লাইব্রেরী পরিদর্শন করবো। উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন থেকে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বিশেষ তহবিল থেকে কিছু বরাদ্দ এনে পাবলিক লাইব্রেরীকে সুন্দর করে সাজিয়ে আবারো পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম বলেন, কুলাউড়া স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধে নির্মিত হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কমপে¬ক্স। সংশি¬ষ্টদের সাথে আমাদের আলাপ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কমপে¬ক্সের কাজ শেষ হওয়ার পর সেখানে স্বল্প ভাড়ায় পাবলিক লাইব্রেরীর জন্য একটি রুমের ব্যবস্থা করা হবে।