স্টাফ রিপোর্টার॥ কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিলন চন্দ্র নাথ এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় প্রধান শিক্ষক অভিনব পন্থায় বিদ্যালয়ের মূল্যবান গাছ নিধন, অবৈধভাবে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি সহ নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। প্রায় তিন মাস আগে আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার টাকার মূল্যে দুটো মূল্যবান কড়ই গাছ কেটে নামমাত্র মূল্যে তার নিজস্ব লোক দ্বারা ক্রয় করে পরবর্তীতে দ্বিগুণ দামে তিনি তা বিক্রি করেন। দূর্গাপূজার কিছুদিন পূর্বে তিনি অনেক মূল্যবান বিপন্ন প্রজাতির গাছ কেটে বিদ্যালয় মাঠে ফাইল করে রেখেছেন। এ বিষয়ে সংশি¬ষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির কোনো তোয়াক্কাই তিনি করেননি। পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রতি বছর সরকারিভাবে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ফলজ এবং বনজ বৃক্ষের চারা বিনামূল্যে প্রদান করা হয় রোপণ করার জন্য। ফটোসেশন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি গাছ রোপন করার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন। বাস্তবে কোন বছরই গাছ রোপন করেননি। পরে গাছের চারাগুলো তুলে সামান্য টাকার লোভে তা বিক্রয় করেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সরেজমিন বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে ২/১ বছর বয়সী কোন গাছের চারার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এদিকে নিজ বিদ্যালয়ে মান সম্মত পড়ালেখার প্রতি উদাসীন এই শিক্ষক ব্যাহ্যিক ভাবে বিদ্যালয়ের সমাপনী পরীক্ষায় ফলাফল ভালো দেখানোর জন্য অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন। নিজ প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী বেশি দেখানোর জন্য নিজ বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরবর্তী আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন (জালালাবাদ, ব্রাহ্মণবাজার) এর ৫ম শ্রেণীর ২৪জন শিক্ষার্থীকে তাঁর স্কুলে ভর্তি দেখিয়ে প্রতিদিন ভুয়া উপস্থিতি দিয়ে আসছেন। আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেনের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরকে তাঁর বিদ্যালয়ের নামে ডিআর ভুক্ত করেন। মূলত তার বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হলো ৩৭জন। অনুসন্ধানে জানা যায়, মির্জাপুুর বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী মোট ৩৭জন (ক শাখা), ভুয়া শিক্ষার্থী (আইডিয়ালের) রোল ৩৮-৬৩ পর্যন্ত।ডিআর অর্ন্তভুক্ত মোট ৫৯জন শিক্ষার্থী। তার মধ্যে মির্জাপুর স্কুলের ৩৫ জন ও আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেনের ২৪ জন শিক্ষার্থী। ডিআর নং ১৬০৮ থেকে ১৬২১ পর্যন্ত ১৪ জন ও ১৬৩২ থেকে ১৬৫২ পর্যন্ত ২১ জন সহ মোট ৩৫জন শিক্ষার্থী মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। আর আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন থেকে ধারকৃত ছাত্র-ছাত্রী হলো ২৪জন। যাদের ডিআরকৃত নং ১৬২২ থেকে ১৬৩১ পর্যন্ত ১০ জন ও ১৬৫৩ থেকে ১৬৬৬ পর্যন্ত ১৪জন সহ মোট ২৪জন শিক্ষার্থী আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেনের। এই ভুয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন দুই স্কুলের হাজিরা খাতায় উপস্থিত কেমন করে দেয় এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের। তারা মির্জাপুর স্কুলের শিক্ষার্থী হলে তাদেরকে অবশ্যই সরকারের সার্বজনীন উপবৃত্তির আওতায় আনার কথা। কিন্তুু তারা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছে। আর যদি উপবৃত্তি দিয়েই থাকেন তা হলে অবৈধ উপস্থিতধারী শিক্ষার্থী একসাথে দু’জায়গায় হাজিরা দিয়ে উপস্থিত থাকে কেমন করে। সরেজমিন আরো দেখা যায়, বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর রুমের অবস্থা খুবই নাজুক। বর্তমান সরকার প্রতিবছর শিশু শ্রেণীর জন্য পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে শিশু শ্রেণী ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানোর জন্য। কিন্তুু এই বিদ্যালয়ে ঘটেছে তার ব্যতিক্রম। সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে ৫ম শ্রেণীর ২৪জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনকেও পাওয়া যায়নি। প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আজকে কেউ আসেনি। কেন আসেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন আসেনি জানিনা। তবে কোন সমস্যার কারণে হয়তোবা কেউ আসতে পারেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। কারো মতের তোয়াক্কা না করে নিজ ক্ষমতায় স্কুলের গাছ নিধনসহ বিভিন্ন পন্থায় টাকা উপার্জন করে যাচ্ছেন।
আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেনের প্রিন্সিপাল মুজিবুর রহমান ফয়ছল বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে ৫ম শ্রেণী নেই। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়। ২৪জন শিক্ষার্থী চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে তাদের পরিবারের অভিভাবকদের অনুরোধে সরকারি সার্টিফিকেট ও বৃত্তি পাওয়ার আশায় মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিসি নিয়ে ভর্তি হয়েছে। মির্জাপুরের ভর্তি হওয়া ওই শিক্ষার্থীরা উন্নত পড়ার সুবিধার্থে আমার আইডিয়ালে শুধু কোচিং এর জন্য ভর্তি হয়েছে।
মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিলন চন্দ্র নাথ বলেন, স্কুলের গাছ কাটার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেন, অভিভাবকদের অনুরোধে আমি গাছটির ডাল কেটেছি। ডাল না কাটলে যে কোন সময় শিক্ষার্থীদের উপর ভেঙ্গে পড়তে পারে। সেই ভয়ে আমি সেটা করেছি। সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কারো অনুমতি নেইনি। ম্যানেজিং কমিটির সহযোগিতায় আমি গাছের ডাল কেটেছি। আমার বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোট ৬৫ জন। ২৪জন শিক্ষার্থী আইডিয়ালে ভর্তি কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওরা আইডিয়ালে কেন ভর্তি হলো সেটা আমি জানিনা। আর শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরোপুরি বলতে পারবো না। তবে ১০-১২ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পেয়ে থাকে।
কুলাউড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আইয়ুব উদ্দিন বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাহেব আমাকে কোন রিপোর্ট দেননি। প্রধান শিক্ষক আমাদের কাছে জানতে চাননি। ইউএনও স্যারকে নিয়ে তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আশেকুল হক বলেন, স্কুলের গাছ কাটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনী কাজ। প্রধান শিক্ষক কোন অবস্থাতেই সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এ কাজ করতে পারেন না। আমি সরেজমিন বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাবো।