কুলাউড়ায় মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন

কুলাউড়া প্রতিনিধি॥ কুলাউড়া উপজেলার জালালীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুস শহীদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে মাদ্রাসার ষষ্ঠ, সপ্তম ও নবম শ্রেণির সাতজন ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে মাদ্রাসার ষষ্ঠ, সপ্তম ও নবম শ্রেণির ১৫ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ পত্র ৩১ অক্টোবর বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি চাউর হলে মাদ্রাসার সুপার ও মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিষয়টি আপোষ-মীমাংসার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অন্য শিক্ষকদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ারও জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল বলে শোনা যাচ্ছে। সাংবাদিকরা সরেজমিন মাদ্রাসায় তথ্য জানতে গেলে মাদ্রাসার প্রধান গেইট তালাবদ্ধ রেখে সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। মাদ্রাসার সুপার সাংবাদিকদের জানান, কমিটির সভাপতির অনুমতি ব্যতিত কাউকে আমরা ভেতরে প্রবেশ করতে দেব না। অভিযোগ উঠেছে, মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুস শহীদ নবম শ্রেণিতে গিয়ে ছাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন আপত্তিকর স্থানে হাত দেয়া, ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে চম্বিনসহ ছাত্রীদের নাকে নাক লাগিয়ে মায়া দিচ্ছেন হরহামেসা। অনেকেই অভিযোগ করে বলছেন, ওই সুপার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের পেটে হাত দেয়া এবং ৭ম শ্রেণির ছাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ করেছেন বিভিন্ন সময়ে। তাদেরকে চুম্বন করতে বলেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি কুলাউড়া ইয়াকুব তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রউফ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মাওলানা আব্দুস শহীদকে সুপার পদে নিয়োগ প্রদান করেন। মাদ্রাসার বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতিতে অতিষ্ঠ এলাকার স্থানীয় জনসাধারণ। এদিকে ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে সুপারের অশালীন আচরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি অভিযোগ পত্র প্রদান করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবম শ্রেণির এক ছাত্রী। এছাড়া একই দিনে ওই ছাত্রীর পিতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আরেকটি অভিযোগপত্র প্রদান করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৭ অক্টোবর সুপার হুজুর যখন ক্লাসে প্রবেশ করেন, তখন আমরা সবাই দাঁড়িয়ে হুজুরকে সালাম দেই। পরে আমি দাঁড়ানো থাকা অবস্থায় সুপার হুজুর আমাকে চম্বিন করেন। আমি তখন লজ্জায় ক্লাসের বেঞ্চে বসে পড়ি। বিষয়টি আমি আমার বান্ধবী ও ম্যাডামদের জানিয়েছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবম ও দশম শ্রেণির ১৫/২০ জন ছাত্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সুপার হুজুর ক্লাসে এসে ছাত্রীদের সাথে অশোভন ও অশ্লীল আচরণ করে আসছেন। যা খুবই দুঃখজনক। আমরা মাদ্রাসায় এসেছি শিক্ষাগ্রহণ করতে, কিন্তু এমন বিষয় শোনার জন্য আসিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসা এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, সুপার কর্তৃক এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই ধরনের ঘটনার জন্য মাদ্রাসা ও এলাকার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার অপসারণের দাবী জানাচ্ছি। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রউফের স্বাক্ষরিত পত্রে ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য আতিকুর রহমান আখই কে আহবায়ক, মাদ্রাসার শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য শামছুল ইসলাম খান ও শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। কুলাউড়া জালালীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুস শহীদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। মাদ্রাসাকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে। এটা হলো সবই নাটক। আপাতত বিষয়টি নিয়ে কারো সাথে কথা না বলার জন্য কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রউফ বারণ করেছেন। এ বিষয়ে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রউফ বলেন, আমি এই মুহুর্তে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই। মন্তব্য করলে তো আমি প্রভাবিত হয়ে যাবো। তাই আমার নিরপেক্ষ থাকা দরকার। কিছু বললে তো আপনারা সবকিছু পেয়ে যাবেন। আমি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন আশার পর আমি সবাইকে নিয়ে বসবো। তখন আপনারা পজেটিভ-নেগেটিভ জানতে পারবেন। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার বলেন, অভিযোগ পত্রের একটা অনুলিপি পেয়েছি। অভিযোগ পত্রে বিষয় যেটা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা যদি সত্য হয় তাহলে সেটা অনেক খারাপ ও অনাকাঙ্খিত বিষয়। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে বাধা প্রদান করার বিষয়ে তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তির যুগে একটি ঘটনার তথ্য জানতে যে বাধা প্রদান করা হয়েছে তা যুক্তিযুক্ত নয়। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশেকুল হক বলেন, মাদ্রাসার এই ঘটনার বিষয়ে একটি অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমি এটি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে প্রেরণ করেছি। তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন