সবজি চাষে গ্রামের পরিচিতি : মাঠের পর মাঠ সবুজের সমারোহ

  • স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাদামপুর গ্রামে গেলে চোখে পড়ে সবজির সবুজ বিশাল মাঠ। এ মাঠে সুহেল আহমদ ২০০১ সাল থেকে সবজি ও ধান চাষ শুরু করেন। মূলত সবজি চাষ করেই পরিবারে তার সচ্ছলতা ফিরে। সংসার চালাচ্ছেন সবজি চাষের আয় থেকেই। সবজি চাষে লাভবান হয়ায় সবজি বিক্রির আয় থেকে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলেছেন। ব্যাপক হারে সবজি চাষের জন্য নাদামপুরকে সবজি গ্রাম হিসেবে আলাদা পরিচিতিও পেয়েছে।
  • সরেজমিন নাদামপুর ঘুরে দেখা গেছে সুহেল আহমদের সবজি ক্ষেত অতি বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে সেড তৈরী করেছেন। বৃষ্টি না থাকায় এখন সেডের উপর খুলে রাখা হয়েছে। তার এ টমেটো চাষ সহ অন্যান্য সবজী চাষ দেখে এলাকার নাদামপুর, দাউদপুর. হামরকোনা, মোবারকপুর, বাহাদুরপুর, বাদেফতেপুর, শ্রীধরপুর, করিমপুর, ফতেপুর, মোজেয়ারবাদ, হালিমপুর সহ মোট ১১ গ্রামের অসংখ্য মানুষ সবজি চাষ করছেন। কম পরিশ্রম ও অল্প পুজিতে অধিক আয়ের উৎস সৃষ্ঠি হয়েছে। এলাকায় টমেটো চাষের পাশাপাশি মিষ্টিকুমরা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম ও তরমুজ চাষ করে কয়েক গ্রামের মানুষ এখন স¦াবলম্বী। পাশাপাশি এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্ঠি হয়েছে।
  • সুহেল আহমদ জানান, ২৮ কিয়ার (বিঘা) জমিতে সবজি চাষ করেছেন টমেটো ১৩ কেয়ার, বারি ৪, বারি ৮, রাজা, সফল ও সোনালী জাতের টমেটো চাষ করেছেন। এর মধ্যে বারি-৪ ও বারি-৮ দেশীয় জাতের টমেটোর ফলন ভাল হয়। এ দুটি জাত গ্রাফটিং পদ্ধতিতে করে থাকেন। রোগ বালাই কম ও ফসল বেশী হওয়ায় গ্রাফটিং পদ্ধতির চারা কিনে জমিতে লাগান। শ্রাবন মাস থেকে পর্যায়ক্রমে শুরু করেন জমিতে চারা লাগানো কাজ করেন।
  • গত বছরও ১৩ কেয়ার জমিতে টমেটো চাষ করেন সুহেল। প্রতি কেয়ারে ফলন হয়েছে ১৫টন। সব মিলিয়ে ১৯৫ টন টমেটো বিক্রি প্রায় ৩২ লক্ষ ১৭হাজার ৫শ টাকা পান। এতে খরচ হয়েছে ১২ লক্ষ ৭ হাজার ৫শ টাকা। শুরুতে ৬০ টাকা ও শেষ দিকে ৪ টাকা করে টমেটো বিক্রি করেন। চারা লাগানোর ৮০-৯০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করে বাজারজাত করতে পারেন।
  • পারপল কিং জাতের বেগুন ৭ কেয়ার জমিতে চাষ করছেন গত বছর। এ বছর চারা লাগানো হয়েছে। ফলন ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পাবেন। গত বছরর ১৭৫ টন বেগুন বিক্রি করে ১৪ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
  • আরলি সুইট জাতের মিষ্টি কুমড়া ৬ কেয়ার জমিতে চাষ করেছেন। ৪২ টন মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজি ১০ টাকা করে বিক্রি করে ৪ লক্ষ ২০ টাকা পান। খরছ হয়েছে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। মিষ্টি কুমড়া চাষে তেমন পরিচর্চা লাগেনা। এ ছাড়াও মিষ্টি কুমড়া সংরক্ষণ করে রাখা যায় ৬-৭ মাস পর্যন্ত। চলতি মৌসুমেও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে গত বছরের চেয়ে বেশী টাকা পাবেন সুহেল আহমদ জানান।
  • গ্লোরী জাম্বু তরমুজ জাতের চাষ করেন ১ কেয়ার জমিতে। সব খরচ বাদে ১০ টন তরমুজ বিক্রি করে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। ক্ষেত থেকে তরমুজ চুরি হওয়ার কারনে তরমুজ চাষের জমি বাড়াতে আগ্রাহ কমে যাচ্ছে।
  • সুহেল আহমদ তার সবজি চাষ করতে বছরের ৮ মাস ৮ জন শ্রমিক স্থায়ী কাজ করেন এবং অস্থায়ী ৪ থেকে ৫ জন কাজ করেন। ২০০১ সাল থেকে সবজী চাষের সাথে জড়িত রয়েছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ায শেরপুর এলাকায় কৃষি সরাঞ্জাম ও সার, কিটনাষক, বীজ বিক্রির প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তবে সবজির পাশাপাশি নিচু জমিতে ধান চাষ করছেন।
  •  মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ সাহাজাহান জানান, বছরে একাধিক সময় সুহেল আহমদের সবজী চাষ পর্যবেক্ষনে যান। এ বছর তার বাগানে ভালো টমেটো ধরেছে। কুশিয়ারা নদীর পাশেই সবজি চাষের অধিকাংশ জমি। নদীপাড়ের মাটি সবজি চাষের উপযোগী। সবজিও ভালো মানের হয়। এখানে সেচ ও সার কম লাগে। এ এলাকায় প্রায় ৩ শ’র মতো কৃষক ভালো সবজি উৎপাদনের কারণে আমরা নাদামপুরকে সবজি গ্রাম নাম দিয়েছি।
  • জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার কাজী লুৎফুল বারী জানান, সুহেল আহমদ একজন সফল সবজী চাষী। সঠিক পরিচর্যা করায় তার টমেটো বাগানে ফলন ভাল হয়েছে। সেড বানিয়ে এর নীচে আগাম টমেটো চাষ করেন। এতে আগাম ফলও ধরেছে তার টমেটো বাগানে। এতে বিক্রি করে মুল্যও বেশী পাচ্ছেন। তার মতো যে কেউ সঠিক পরিচর্যা সহ আগাম জাতের যে কোন সবজি চাষ করলে লাভবান হবেন।
  • নাদামপুর গ্রামের আজিজ মিয়া বলেন, ৭-৮ বছর আগেও অন্যের জমিতে দিনমজুরি কাজ করতেন। এর ফাঁকে গাড়ী চালাতেন। সুহেল আহমদের সবজি চাষ দেখে সবজি চাষ শুরু করেন নিজের জমিতে। এখন নিজের খেতে চাষ করছেন টমেটো, বেগুন, ফুলকপি ও বাঁধাকপি। অন্যের জমিতে আর কাজ করার প্রয়োজন হয়না। ভালাই আছেন এখন পরিবার পরিজন নিয়ে। তিনি বলেন তার মতো আরও অনেকেই আছে, যারা আগে অন্যের জমিতে কাজ করত অথবা বেকার থাকতো, এখন তারা তার মতো নিজের জমিতে সবজি চাষের আয় দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ ও  সংসার চালাচ্ছেন।
  • একই ধরনের মন্তব্য জানালে একই এলাকার কৃষক জনি আহমদ। তিনিও ৮-১০ বছর যাবৎ টমেটো, লাউ, বেগুন ও মরিচ চাষ করে পরিবার চালাচ্ছেন।
শেয়ার করুন