একাদশ নির্বাচনি আমেজে সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

ইমাদ উদ দীন॥ ফেসবুক কিংবা হোয়াটস্যাপ। এখন দল ও মনোনয়ন প্রত্যাশী আর প্রতীক বন্ধনায় উত্তাল। এ যেন এক অন্যরকম প্রচারণার প্রতিযোগিতা। একটু পর পর দেওয়া হচ্ছে আপডেট সংবাদ। নিজের পচন্দের প্রার্থী কি বলছেন। কোথায় যাচ্ছেন। কি করছেন কিংবা ভাবছেন। কোথায় জনসভা বা অন্য অনুষ্ঠান সবই তথ্য জানানো হচ্ছে। তুলে ধরা হচ্ছে ছবি সম্বলিত মনোনয়ন প্রত্যাশীর রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা কর্মকান্ড। ফিরিস্থি গাওয়া হচ্ছে দল,ব্যক্তি ও প্রতীকের। চলছে নিরবে এমন সরব প্রচারণা। নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন জনপ্রিয় এ মাধ্যম। ছোট্ট আয়োজনে কম খরচ আর অল্প সময়ে দ্রুত ব্যাপক প্রচারণা। তাই পচন্দনীয় হয়ে উঠছে এই মাধ্যম। সস্তা জনপ্রিয়তা ও প্রচারণার প্রতিযোগিতার এমন আসক্তিতে এখন ভুগছেন প্রার্থীরা। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এখন এমন দৃশ্যই প্রতিয়মান হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে। প্রার্থীর নামে অথবা সর্মথক গোষ্ঠি কিংবা গ্রুপ। দলের নাম, প্রতীক কিংবা ছদ্ম নাম। এখন নামে বে-নামে আর নানা ছুঁতায় খোলা হচ্ছে ফেসবুক কিংবা হোয়াটস্যাপ আইডি। আর চালানো হচ্ছে জোর নির্বাচনি প্রচারণা। প্রার্থীর অতীত ও বর্তমান দলীয় কিংবা সামাজিক নানা কর্মকান্ড। সবই প্রতিদিন প্রতিঘন্টায় তুলে ধরা হচ্ছে এসকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দলীয় মনোনয় প্রত্যাশী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী। নবীণ কিংবা প্রবীণ সব বয়সের প্রার্থীদের কাছে এখন কদর এমন প্রচারণার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে চলছে এমন সাইবার প্রতিযোগিতা। এ যেন এক অন্যরকম প্রচারণার যুদ্ধ। রাত দিন চলে অবিরাম। ফুরসদের সুযোগটা কোথায়। একটু অবসর মানেই পিছিয়ে যাওয়া। যে যার সে তার হয়েই চালাচ্ছেন এ যুদ্ধ। নির্বাচন আসার আগেই এখন নির্বাচনি তুমুল আমেজে চাঙ্গা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। হাতের মুঠোয় স্মাট ফোন। আর সেটা দিয়েই হরদম সরব ফেসবুক হোয়াটস্যাপসহ পচন্দের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। মনোনয়ন প্রত্যাশীর দেশ কিংবা প্রবাসে থাকা সর্মথক,ভক্ত ও অনুসারী সবাই একযোগে চালাচ্ছেন এই প্রচারণা যুদ্ধ। কোন দল,প্রতীক বা ব্যক্তি কার স্ট্যাটাস ভালো হচ্ছে কে কি লিখছেন বা ছবি দিচ্ছেন চলছে এমন চুলচেরা বিশ্লেষণ। চলছে প্রতিযোগীতাপূর্ণ এমন মনস্থাত্বিক সাইবার প্রচারণা যুদ্ধ। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর পক্ষে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণরাই এই সাইবার যুদ্ধের অন্যতম সৈনিক। নেতার নানা ভঙ্গিমার ছবি ও বক্তব্যযুক্ত স্ট্যাটাস দিয়ে তাকে দেখাচ্ছেন আর পরামর্শ নিচ্ছেন। আর ওই স্ট্যাটাসে লাইক কমেন্ট বেশি হলে বাহবা বাহবা কুড়াচ্ছেন আপলোডকারী। ফেসবুক মনযোগী নেতারাও এ মাধ্যমকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিজ দল,প্রতীক ও ওই ব্যক্তির কোন সংবাদ প্রকাশিত বা প্রচারিত হলে তাও খুব জোরেসুরে তুলে ধরছেন ওই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গ্রাম থেকে শহর সবখানেই সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যম নির্বাচনি প্রচারণার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। জানা যায় দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই আইডি গুলো নিজে চালাতে পারেন না বা ভালো বুঝেন না তিনি এই গুরুদ্বায়িত্ব দিচ্ছেন নিজের আস্তাভাজন কাউকে। তারপরও সার্বক্ষণিক নজরদারী রাখছেন। তথ্যগত কোন ভুল হলে সাথে সাথে তা শুধরে দিচ্ছেন। আবার এদের মধ্যে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভালো বুঝেন এমন তরুণদের নির্দিষ্ট টাকা বেতন দিয়েও চালাচ্ছেন তাদের ফেসবুক। মনোনয়ন প্রত্যাশিরা নিজেদের পক্ষে চাইছেন বেশি বেশি স্ট্যাটাস বেশি বেশি আপলোড। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এসব প্রচার প্রচারণা যে সবসময় যে তাদের পক্ষে যাচ্ছে এমনও নয়। নিজ দল বা বিরোধীদলের প্রতিপক্ষের হাতেও হতে হচ্ছে নাজেহাল। একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য নিজেদের পক্ষের আইডি থেকে দিচ্ছেন নানা ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাস। চলে একে অপরের প্রতি পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস আর কমেন্ট। বসে নেই তাদের নিজ বলয়ের কর্মী,সমর্থক ও ভক্তরা। ওই স্ট্যাটাস গুলোতে নানা যুক্তিপূর্ন কমেন্ট দিয়ে সাইবার এই যুদ্ধ বেশ জমিয়ে তোলছেন। কথার পিঠে কথায় প্রার্থীদের অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসছে জনসম্মুখে। এতে কোন কোন সময় চরম বিব্রতকর অবস্থায়ও পড়ছেন নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক নেতারা। আবার কখন এই ঝগড়া বা যুদ্ধ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় থানা পুলিশ ও আদালত পর্যন্তও গড়ায়। তারপরও থেমেই নেই এই সাইবার যুদ্ধ। সারাক্ষণই চলে নির্বাচনি প্রচার প্রচারণা। প্রার্থীরা এই প্রচারণার মাধ্যমে মনযোগী ও খুশি হওয়ায় এদিকেই ঝুঁকছেন তাদের অনুসারী ও সর্মথকরা। সবার দৃষ্টি এই প্রচারণায় থাকায় এখন বেশ জমে উঠেছে এই সাইবার যুদ্ধ। মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলা নিয়ে ৪টি সংসদীয় আসন। জানা যায় এই ৪টি আসনের মধ্যে সবক’টি আসনেই চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই প্রচার প্রচারণা। তবে এখন সবচেয়ে বেশি প্রচার প্রচারণা বা সাইবার যুদ্ধ চলছে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে। এই আসনে জাতীয় ঐক্যফন্টের শীর্ষ নেতা সাবেক ডাকসুর ভিপি ও এমপি সুলতান মো: মনসুর আহমদ ও বিকল্প ধারার মাধ্যমে সদ্য যুক্তফন্টে যোগদানকারী সাবেক বিএনপি ও কিংসপার্টির নেতা ও এমপি এমএম শাহীন কে নিয়ে। এ আসনটিতে এই দু’জনকে নিয়েই পক্ষে বিপক্ষে চলছে তুমুল সাইবার যুদ্ধ। আর এ মাধ্যমে সবচেয়ে কম প্রচারণা চলছে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ী) আসনে। তবে বসে নেই মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর) ও মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল) আসনের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের সর্মথক ও অনুসারীরা। মৌলভীবাজার-১ আসন থেকে বেশি ও মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে কম হলেও এই মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা থেমে নেই। যে যার মত করে চালাচ্ছেন এই ব্যাতিক্রমী প্রচারণা। জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগ থেকে ২৭ জন। বিএনপি থেকে ২৪ জন। অনান্য দল ও স্বতন্ত্র থেকে ২৫-৩০ জন প্রার্থী অংশ নিতে ইচ্ছুক বলে জানা গেছে। তাদের সকলের প্রচার প্রচারণায় এজেলায় বেশ জমে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ভোটের মাঠের নির্বাচনি আমেজ। তবে সচেতন মহলের দাবি শুধু এই সাইবার যুদ্ধ চালিয়ে নয় এরই সাথে মাঠে সর্বশ্রেণী ও পেশার মানুষের সাথে মিশে চালাতে হবে আসন্ন ভোটের প্রচারণা। তবেই আসবে কাঙ্খিত ফলাফল।

শেয়ার করুন