জনস্বার্থে দায়ের করা এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ জারি করেন।
১০ জানুয়ারির মধ্যে পুলিশের মহা-পরিদর্শককে (আইজিপি) ওই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় তথ্য আদালতে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম।
চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় মৃত্যু নবজাতকের’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের পক্ষে রিট দায়ের করা হয়।
৪ সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সচিব, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান, পুলিশের মহা-পরিদর্শক, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ স¤পাদককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তনের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর সকাল ৬ টা থেকে দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এ কর্মবিরতি চলাকালে সাধারণ চালক, শিক্ষার্থীদের শরীরে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেন ধর্মঘটী শ্রমিকরা। আন্দোলনরত পরিবহন শ্রমিকরা দাবি আদায়ের নামে বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রাম বাজারে মুমূর্ষু এক নবজাতককে বহনকারী ‘অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়ায় পথেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে ৭ দিন আগে পৃথিবীর আলো দেখা শিশুকন্যা খাদিজা আক্তার।
জানা গেছে, বড়লেখার সদর ইউনিয়নের অজমির গ্রামের কুটন মিয়ার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৮ অক্টোবর সকালে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক শিশুটিকে দ্রুত সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। শিশুর অভিভাবকরা অ্যাম্বুলেন্সে করে সকাল ১০টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যাওয়ার পথে পুরাতন বড়লেখা বাজার, দাসেরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অ্যাম্বুলেন্সটি পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে। অ্যাম্বুলেন্সটি চান্দগ্রাম বাজারে গেলে পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি আটকে চালককে মারধর করে। সেখানে দেড়ঘণ্টা আটকে রাখায় অ্যাম্বুলেন্সেই শিশুটি মারা যায়।
নির্মম এ ঘটনার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সারাদেশে শুরু হয় তোলপাড়, ঝড় ওঠে নিন্দার। ঘটনার সঙ্গে জড়িত পরিবহন শ্রমিকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়া শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে ৩১ অক্টোবর দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। তাছাড়া শ্রমিকদের উশৃঙ্খল এইসব কর্মকান্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি পদক্ষেপ নিয়েছে, তাও জানতে চান আদালত। ঘটনার দু’দিন পর ৩০ অক্টোবর রাতে ওই শিশুর বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মা সঙ্গে কথা বলে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আইনগত সহায়তার আশ্বাস দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) আবু ইউছুফ। ৩১ অক্টোবর ওই শিশুর চাচা আকবর আলী ১৬০ থেকে ১৭০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা করেন (মামলা নম্বর-১৮)। কিন্তু ঘটনার দীর্ঘদিন পরও পুলিশ জড়িত একজন আসামীও গ্রেফতার করতে পারেনি।