আমিনুল ইসলাম রোকন
নির্বাচনের ঠিক আগ মুর্হূতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরীর দলত্যাগ নিয়ে ঝড় বইছে। সিলেটসহ সারা দেশ এখন আলোচনা মুখর ইনাম চৌধুরী ইস্যুতে।
কেউ কেউ স্বাভাবিক ভাবেই নিচ্ছেন বিষয়টি, আবার অনেকেই সমালোচনা মুখর হচ্ছেন।অভিনন্দনও জানিয়েছেন অনেকে। দলের বর্ষীয়ান নেতার এমন দল বদলে ধাক্কা খেয়েছে সিলেট বিএনপিও। আলোচনা-সমালোচনা চলছে সমান তালে।
তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন ইনাম আহমদ চৌধুরীও। এ প্রতিবেদককে তিনি জানিয়েছেন-অবিশ্বাস থেকেই এমনটি হয়েছে। শেষ সময়ে দলের নেতৃত্বের আস্থাহীনতায় এমন হয়েছে বলেও জানান এই বর্ষীয়ান রাজনীতিক।
ইনাম আহমদ বলেন, দল থেকে এবং ঐক্যফ্রন্ট থেকে আমাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য জানানো হয়। আমাকে বলা হয়, সিলেটের সন্তান হিসেবে এবং সিনিয়র নেতা হিসেবে আমার বিকল্প নেই বলে আমাকে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মুক্তাদিরকেও আমার সাথে প্রার্থী রাখা হলো। পরবর্তীতে আমাকে রেখে মুক্তাদিরকেই সেখানে চূড়ান্ত করা হয়েছে। একটি দল যোগ্যতার খাতিরে যে কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারে তাতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু আমি দলের ভাইস চেয়ারম্যান। সে হিসেবে দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়েরই একজন। কিন্তু খেয়াল করলাম আমার সাথে কোন প্রকার যোগযোগ না করেই সব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। দলের নীতিমালা অনুযায়ী আমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে-আমি তাও করতে পারছিনা। আমার দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে আমাকে না জানিয়েই।
উদাহরণ টেনে ইনাম বলেন, আমি দলের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সভাপতি। কিন্তু আমাকে না জানিয়েই বিএনপির নেতারা বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করলেন। বিষয়টি বিদেশি কূটনীতিকরাই আমাকে জানান। সিলেট-১ আসনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা থেকে আমাকে বাদ দেয়া হলো। ভাইস চেয়ারম্যান কিংবা দলের একজন সিনিয়র নেতা হিসেবে কোন কিছুতেই আর আমাকে ডাকা হয়নি।দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতেও আমাকে রাখা হয়নি। আমি দেখলাম আমাকে ঘিরে দলের ভেতর এক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। কেউই কোন যোগাযোগ রাখতে চাচ্ছেন না। তাই ভাবলাম এভাবে অবিশ্বাস নিয়ে দলে থাকাটা শুভকর হবে না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশেকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।আমি মনে করি আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এখন দেশের কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ইনাম আহমদ চৌধুরী এমন একটা সময় দল পরিবর্তন করলেন যখন জাতি একটা চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সিলেট সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে কোন দল করা একজন ব্যক্তির নাগরিক অধিকার। সে ক্ষেত্রে যে কেউ দলত্যাগও করতে পারে-তাও নাগরিক অধিকার। তবে ইনাম আহমদ চৌধুরী বয়োঃজ্যেষ্ঠ মানুষ। এই সময়ে তার দলত্যাগ ভালে চোখে নেবে না কেউই।
ইনাম আহমদ চৌধুরী এবার সিলেট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। তবে মর্যাদার এ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয় খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে। গত ২৮ নভেম্বর সিলেট-১ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ইনাম আহমদ চৌধুরী। মনোনয়ন জমা দিয়ে সিলেটে বেশ কিছুদিন প্রচারণাও চালিয়েছেন তিনি। শুরুতে নানা নাটকীয়তা হয় তাকে ঘিরে। মনোনয়ন জমা দেয়ার পরদিনই আকস্মিক এক ঘটনা ঘটে। সকালে গিয়ে হুট করেই অর্থমন্ত্রীর বাসায় হাজির হন ইনাম চৌধুরী। বিএনপির একটি অংশ বিষয়টিকে ভালো চোখে নেয়নি। যদিও এ কারণে সারা দেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন ইনাম। বিষয়টিকে সম্প্রীতির অনন্য নজির হিসেবেও আখ্যা দেন সুশীলরা। তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করেও বিষয়টি খোলাসা করেন ইনাম আহমদ। তিনি বলেন- অর্থমন্ত্রীর পরিবারের সাথে তিন পুরুষ ধরে তাদের পরিবারের সম্পর্ক। এই সাক্ষাতে কোন রাজনীতি ছিলো না। তবে ভোটে সিলেটে সম্প্রীতি বজায় রাখতে অর্থমন্ত্রীকে আহ্বান জানান ইনাম। বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানি বন্ধেরও আহ্বান জানান।
একই কথা বলেন অর্থমন্ত্রীও। সে সময় প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ইনামের বড় ভাই আমার বন্ধু। ইনাম আমার বাসায় আসবে আমরা একে অপরের বাসায় যাবো এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। ইনাম আমার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করায় যারা সমালোচনা করছেন তাদের মন ছোট বলেও মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
পুরো দেশ বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখলেও নির্বাচনের সময়ে অর্থমন্ত্রীর বাসায় যাওয়ার বিষয়টি ভালো চোখে নেয়নি বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে অবস্থান করা তারেক রহমানও বেশ ক্ষুব্ধ হন ইনাম চৌধুরীর ওপর। দলীয় সূত্রের দাবি তারেক ক্ষুব্ধ হওয়াতেই চূড়ান্ত মনোনয়ন আর পাননি ইনাম।
যদিও সিলেট-১ আসনে ইনাম আহমদ চৌধুরীকে ধানের শীষ প্রতীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রদানের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৫১ জন নেতা কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে চিঠি দিয়েছিলেন সে সময়।
প্রসঙ্গত, বুধবার আকস্মিকভাবেই দলত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন ইনাম আহমদ চৌধুরী। সন্ধ্যায় গণবভনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। ইনাম আহমদ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। বিএনপি জোট সরকারের সময়ে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যানও ছিলেন।