মৌলভীবাজার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ব্রিটিশ নাগরিককে হত্যার অভিযোগ

 

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার শহরের শ্রীমঙ্গল সড়কের মাদক নিরাময় কেন্দ্র ‘উদ্দীপন’ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক জালাল উদ্দিন নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত জালালের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে।
এঘটনার পর নিরাময় কেন্দ্রের কাউকে খুজে পাওয়া যায়নি। চিকিৎসা নিতে আসা ২২জন মাদকাসক্ত রাতে দরজা ভেঙ্গে ভবনের ছাদে উঠে পালিয়ে যায়।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জের তফতিবাগ এলাকার মৃত মো. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে জালাল উদ্দিন ৭ থেকে ৮ মাস পূর্বে দেশে আসেন। মাদকাসক্ত থাকায় তাকে উদ্দীপন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে দুই সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ডিসেম্বও ২০১৮ইং তারিখে বাড়ি নেয়া হয়। পরে আবার ২৯ ডিসেম্বর ভর্তি করা হয় ওই নিরাময় কেন্দ্রে।
নিহতের মাতা রুকসানা আক্তার জানান, রবিবার ৬ জানুয়ারী সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে থেকে জানানো হয়, জালাল অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
এখবরে তারা দ্রুত সিলেট যান এবং হাসপাতালে খোঁজা-খুঁজি করে জালালকে পাননি। পরে মৌলভীবাজার এসে উদ্দীপন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর তার মৃতদেহ দেখতে পান। এ সময় নিরাময় কেন্দ্রের কাউকে তারা খুঁজে পাননি ।
নিহত জালাল দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। রাব্বি নামের পাঁচ বছর বয়সী তার একটি ছেলে রয়েছে। তার স্ত্রী-সন্তান দেশে থাকতেন। পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা জানিয়েছেন, তারা এই হত্যার ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বা বুধবারের মধ্যে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন।
খবর পেয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছে।
মৌলভীবাজার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক তাপস দাস জানান, সোমবার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এবিষয়ে জানতে উদ্দীপন মাদক নিরাময় কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছেন।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আহমেদ ফয়ছল জামান বলেন, ময়না তদন্তে প্রাথমিক ভাবে নিহত জালালের শরীরে আঘাতের চিহৃ পাওয়া গেছে। উদ্দীপন মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে পালিয়ে আসা রিপন নামের একজন জানান, জালালকে হাত পা বেঁধে মারধর করা হয়েছে। মারধরের এক পর্যায়ে অজ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে তার মৃত্যু হয়। রিপন আরও জানায়, সে নিহত জালাল মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভেতর এক সাথে থাকতো।
জালাল তার মাকে দেখার জন্য আকুতি জানালে মাদক নিরাময় কর্তৃপক্ষ ক্ষীপ্ত হয়ে হাত পা বেঁধে শুরু হয় নির্যাতন। চিকিৎসা নিতে আসা ২৫ জনের মধ্যে ২২ জন রাতে দরজা ভেঙ্গে ভবনের ছাদে উঠে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে ৩ জন মানসিক ভারসাম্যহীন থাকায় তারা বেরিয়ে যেতে পারেনি।
নিহত জালালের মামা মো. এমদাদুল হক জানান, মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে জালালের মৃত্যু নিয়ে একেক বার একেক ধরনের কথা বলা হয়। তারা আমার ভাগ্নাকে হাত পা বেঁধে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানান।

 

শেয়ার করুন