এস এম উমেদ আলী॥ উপমহাদেশের অন্যতম সাধক হযরত সৈয়দ শাহ্ জালাল (রঃ) এর অন্যতম সহচর হযরত সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা শের-ই সওয়ার চাবুকমার (রঃ) এর ৬৭৮ তম উরুস মোবারক বুধবার ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে। এ উপলক্ষে ১৫ জানুয়ারি বাদ আছর মিলাদ মাহফিল ও গরু জবেহ এবং ঐদিন বাদ এশাহ জিকির আছকার অনুষ্ঠিত হবে।
সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা (রঃ) এর ৬৭৮ তম উরুস উরুস উদযাপন পরিষদ দুইদিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে মিলাদ মাহফিল, গরু জবেহ, গিলাফ চড়ানো, জিগির আছকার ও শিরনী বিতরণ। বুধবার ১৬ জানুয়ারি বাদ এশাহ আখেরী মোনাজাত। উরুস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আশিকান ও ভক্তরা সমাগত হচ্ছেন। সেই সাথে উরুসকে কেন্দ্র করে মাজার প্রাঙ্গনে প্রতিবারের ন্যায় এবারও মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় দেশি বিদেশী পণ্যের দোকান বসতে শুরু হয়েছে। উরুস ও মেলায় আগত আশিকান ও ভক্তদের নিরাপত্তার ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য,হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অন্যতম সঙ্গী হযরত সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা (রঃ) মৌলভীবাজার এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন।
১৬ জানুয়ারি উক্ত উরুস মোবারক অনুষ্ঠানের শেষ দিন বাদ এশাহ বিশেষ মোনাজাতে শরীক হওয়ার জন্য ভক্ত ও আশিকানদেরকে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন উরুস উদ্যাপন পরিষদের মোতাওয়াল্লী ও আহ্বায়ক, সৈয়দ খলিলুল্লাহ ছালিক (জুনেদ)
অনুষ্ঠান সূচী :
৩০শে পৌষ (পুরাতন বর্ষ পঞ্জিকানুযায়ী) ১৪২৫ বাংলা, ৮ই জমাঃ আউঃ ১৪৪০ হিজরী, ১৫ই জানুয়ারী ২০১৯ইং রোজ মঙ্গলবার মহান ওলি হযরত সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা (রঃ) উরুস মোবারক ৬৭৮তম উপলক্ষে বাদ আছর মিলাদ মাহফিল ও গরু জবেহ এবং ঐদিন বাদ এশাহ জিকির আছকার।
১লা মাঘ (পুরাতন বর্ষ পঞ্জিকানুযায়ী) ১৪২৫ বাংলা মোতাবেক ১৬ই জানুয়ারী ২০১৯ইং, রোজ বুধবার সকাল ৯ ঘটিকায় গিলাফ চড়ানো এবং বাদ জোহর মিলাদ মাহফিল ও শিরনী বিতরণ এবং ঐদিন বাদ এশাহ্ আখেরী মোনাজাত।
পীরে কামেল সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা (রঃ) সংক্ষিপ্ত জীবনী : উপমহাদেশের খ্যাতিমান সাধক হযরত শাহ জালাল (রঃ) ইয়েমেনী তার ৩৬০ জন সহচর নিয়ে সিলেট অঞ্চলে ধর্ম প্রচারের জন্য আগমন করেন তাদেরই মধ্যে অন্যতম প্রিয় ও বিশ্বস্থ সহচর খ্যাতিমান সাধক হযরত সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা শেরই সওয়ার চাবুকমার বোগদাদী (রঃ)। তিনি কবে ইসলাম প্রচারের জন্য মৌলভীবাজার জেলায় আগমন করেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও সিলেটের আম্বরখানায় শিলালিপিতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় ১৩০৩ খৃষ্টাব্দে হযরত সৈয়দ শাহ জালাল (রঃ) সিলেট আগমন করেন।
শাহ্ জালাল (রঃ) সিলেট বিজয়ের পর তার সাথীদের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দিলে হযরত শাহ্ মোস্তফা (রঃ) নূর আলী শাহ নামক একজন সাথী নিয়ে মৌলভীবাজার জেলায় আগমন করেন। মৌলভীবাজার শহরস্থ তার মাজারে প্রতিদিন শত শত ভক্ত আশেকানদের আগমন ঘটে। প্রতি বাংলা সনের মাঘ মাসের পহেলা তারিখে তার বার্ষিক উরস অনুষ্ঠিত হয়। লক্ষ লক্ষ আশেকান দূর দুরান্ত হতে এই উরস উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গনে সমবেত হন। ওয়াজ-নছিহত, খতমে-কোরআন, জিকির আজকার, মিলাদ মাহফিল কাঙালীভোজ এবং মোনাজাতের ব্যবস্থা করা হয়। উরস উপলক্ষে মাজার পার্শ্ববর্তী চত্বরে এক মেলা বসে।
সৈয়দ শাহ মোস্তফা শেরই সওয়ার চাবুকমার (রঃ) এর বিভিন্ন আলৌকিক শক্তির কথা শোনা যায়। প্রায় পৌনে ৭‘শ বছর আগের কথা। তখন এ অঞ্চলের সামন্ত রাজা ছিলেন রাজা চন্দ্র সিংহ। সদর উপজেলার বড়র্শীজোড়া পাহাড়ের সাতপাবিয়া টিলায় চন্দ্র সিংহের রাজধানী ছিল। একদিন রাজা চন্দ্র সিংহের সভাগৃহে এক ঘটনা ঘটে। রাজা যথাসময়ে সিংহাসনে উপবেশন করেন। এমন সময় দেখা গেল এক বিসধর সাপ ফনা বিস্তার করে সিংহাসনে বসে আছে। লোক সমাগমে সাপটি ভয় পেল না বা সিংহাসন ছাড়ার কোন লক্ষণ দেখা গেল না। রাজ জ্যোতিষীরাও সাপকে হত্যা করতে বারণ করলেন।
এদিকে দিনকয়েক পূর্ব হতে এক নবঘাতক বাঘ রাজধানীর আশেপাশে গরু-ঘোড়া ও নরহত্যা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। বাঘটিকে হত্যা করা যাচ্ছিল না। উপর্যুপরি দুটি ঘটনায় রাজা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। মন্ত্রীদের পরামর্শে কোন দৈবশক্তিসম্পন্ন ফকিরের কথা ভাবলেন। বর্তমানে মোস্তফাপুর গ্রামে সে ফকির কিছুদিন পূর্বে রাজার কাছে এসে একখানা বাড়ি নির্মানের স্থান চেয়েছিলেন। ফকির একজন মুসলমান হওয়ায় রাজা তার আবেদন শুধু অগ্রাহ্যই করেননি তাকে রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার আদেশ করেছিলেন। কিন্তু ফকির তার কথায় কর্ণপাত করেননি। রাজা বলপূর্বক তাকে তাড়াবার বুদ্ধি বাদ দিয়ে যাদুমন্ত্র পরিচালিত লৌহবান, অগ্নিবাণ ইত্যাদি ব্যবস্থা অবলম্বন করেও ফকিরের কোন ক্ষতি করতে পারল না। সাপ ও বাঘের ভয়ে বাধ্য হয়ে রাজাকে আবার সেই ফকিরের শরণাপন্ন হতে হলো। ফকির রাজবাড়িতে এসে সাপটিকে মুঠোর ভিতর ধরে ফেললেন এবং তাকে হাতে করেই বাঘের খোজে বের হলেন। ফকিরকে দেখে বাঘটি স্তির ভাবে দাড়িয়ে থাকলো। ফকির এক লাফে বাঘটির ওপর চড়ে বসলেন এবং হস্তাস্থিত সাপটিকে চাবুক রুপে ব্যবহার করে বাঘটিকে তাড়িয়ে নিয়ে গেলেন। তখন হতে ঐ ফকির শেরই সওয়ার চাবুক মার নামে পরিচিত হলেন।
তিনিই প্রসিদ্ধ দরবেশ সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা (রঃ)। তার সম্বন্ধে আরও অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। হযরত শাহ্ মোস্তফার পিতার নাম শাহ্ সৈয়দ সুলতান। তিনি ছিলেন বোগদাদের অধিবাসী। রাজা চন্দ্র সিংহ ফকিরের অলৌকিক শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে তার একমাত্র কণ্যাকে তার কাছে বিয়ে দিলেন। পরবর্তীতে রাজা শাহ মোস্তফা (রঃ) হাতে সবকিছু অর্পন করে গয়াতীর্থ গমন করেন। চন্দ্র সিংহ রাজার কন্যার গর্ভে শাহ সৈয়দ নছরুল্লাহ জন্মগ্রহন করেন। সৈয়দ শাহ্ মোস্তফার অপর দুই পুত্র ছিলেন শাহ সৈয়দ ইছমাইল ও শাহ্ সৈয়দ হাছন। তারা তিন জনই আধ্যাতিœক শক্তি সম্পন্ন ছিলেন। ৭৪২ হিজরীর মাঘ মাসের পহেলা তারিখে তিনি ইন্তেকাল করেন। বর্তমান মাজার শরীফ এলাকায় তার পবিত্র দেহ সমাধিস্থ করা হয়।