বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বেগমখান চা বাগানের এই স্থায়ী শ্রমিকের নাম মিরা বাকতি (৪০)। মুখের বাদিকে টিউমারে আক্রান্ত হয়ে এখন বাড়িতে পড়ে আছেন। অসম্পূর্ণ চিকিৎসায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মিরা বাকতি কালো চাদরে মুখ ঢেকে তীব্র যন্ত্রনায় ছটপট করছেন। বাগানের স্থায়ী শ্রমিক হওয়ার পরও বাগান থেকে সুচিকিৎসা এবং কোন প্রকার বড় সাহায্য পাননি।
মিরা’র স্বামী পবিত্র বাকতি বলেন, তার গালে একটি বিষফোড়া হয়েছিল। তারপর গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে চা বাগানের হাসপাতাল থেকে ঔষধ খাওয়াই। না কমার ফলে তাদের কথা মত ক্যামেলিয়া হাসাপাতালে দু’দিন রেখে সিলেট ওসমানীতে পাঠানো হয়। সেখানে একটি অপারেশন পর আমাদের ছেড়ে দিয়ে ১০ দিন পর আবার যেতে বলে। দশদিন পর আবার ওসমানীতে গেলে তার নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে বলে। কিন্তু অনেক ধারদেনা করে একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ দেখালেও উনার পরামর্শ মতো ঔষধপত্র টাকার অভাবে ক্রয় করতে পারছি না।
বৈবাহিক জীবনে এক মেয়ে এবং দুই পুত্র সন্তানের মা মিরা। তার মেয়ে দিপিকা বলেন, সারাদিন রাত যখন-তখন মা তীব্র ব্যথায় ছটফট করে। তখন দুদিন পর পর রোলাক ইঞ্জেকশন দিতে হয়। দুদিন ব্যথা একটু কম থাকলে আবার যেই-সেই।
দিপিকার স্বামী অতীন্দ্র বাকতি বলেন, ঘরের দুটো গরু বিক্রি করে প্রায় ৯৩ হাজার টাকা এবং ২ কেয়ার জমি বন্ধক রেখে ৮৫ হাজার টাকা নিয়েছি। তাও শেষ। একটা সবজি ক্ষেতে কিছু টমেটো চাষ করেছি। এগুলো এখন বিক্রি করে খাই। আমাদের টাকাপয়সা সব শেষ হয়ে গেছে। বাগান থেকে সামান্য কিছু সাহায্য পেয়েছি।
অনেক কষ্ট করে দুটো কথা বলেন মিরা বাকতি। তিনি তার বক্তব্যে বাংলানিউজকে জানান, ডাক্তার তাকে অজ্ঞান না করেই অপারেশন শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার হাত থেকেই তার গাল কাটার ব্লেডটি চেয়ে নিয়েছিলেন ডাক্তার।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং শ্রমিক নেতা রামভজন কৈরী বলেন, চা বাগানের মালিকপক্ষ কর্তৃক চা শ্রমিকদের প্রতি ধারাবাহিক চরম অবহেলার একটি উদাহরণ নারী চা শ্রমিক মিরা বাকতি। আমাদের শ্রম আইনের চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি চা শ্রমিকের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা দায়িত্ব আইনে রয়েছে। কিন্তু এ আইন মালিকপক্ষ মানেন না।
বেগমখান চা বাগানের ব্যবস্থাপক অরুন চাকমা বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমত চা শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি। মিরা বাকতির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।