বিশ্ব হিজাব দিবসে টরন্টো কানাডার কিছু মুসলিম বোনদের ভাবনা

আজ ১লা ফেব্রুয়ারী “বিশ্ব হিজাব দিবস” গত ৬ বছরের ন্যায় পালিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে। বেলা ১২টায় এই কর্মকান্ডের সাথে সংস্লিষ্ট সকলে জড়িত হন সিটি হলের বারান্দায় সংবাদ সম্মেলনে এবং তাদের দাবি ছিল হিজাব বিরোধী মনোভাব পরিহারের, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বৈষম্যমূলক আচরন পরিহারের।

৬ বছর আগে নিউ ইয়র্কের জামাইকাবাসী ছাত্রী নাজমা খানের সাথে যা ঘটেছিল তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। একজন মানুষ হিসাবে তার অধিকার আছে নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতি পালন করার। তার পাশে ঐ সময় যারা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং এখনও পাশে থেকে উৎসাহ দিচ্ছেন তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

নিজ দেশ থেকে, নিজ সংস্কৃতি থেকে বহু দূরে এসেও যারা নিজ নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতি পালন ও লালন করার চেষ্টা করছেন তাদের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন।

-চমন আফরোজ চৌধুরী

 

“হিজাব এবং পর্দা আল্লাহ্‌র আদেশ এবং নির্দেশ” হিজাব পরিধান করা ইসলামের অন্যতম ফরয বিধান। আল্লাহ্‌ তা’আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে পর্দা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। হিজাব বা পর্দা মানুষকে শয়তানের প্ররোচনা ও কুপরামর্শ থেকে রক্ষা করে। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি আমার মা, দাদি, নানীরা হিজাব পরিধান করতেন। আমি কখনো কোনও মানুষের কারনে বাধ্য হয়ে হিজাব পরিধান করিনি। আল্লাহ্‌র নির্দেশ এবং আদেশ জেনেই হিজাব পরেছি।

কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে অনেকেই হিজাবকে ফ্যাশন হিসাবে ধরে নিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের অনেক জায়গায় পর্দার কথা নারী ও পুরুষ সবাইকে সমহারে বলা হয়েছে। সুতরাং হিজাব কোনও ফ্যাশন নয় এটা হচ্ছে মহান আল্লাহ্‌র নির্দেশ।

আমি আজকের এই “বিশ্ব হিজাব দিবস” এ বলতে চাই, আল্লাহ্‌ তা’আলা যেন মুসলিম উম্মাহর সকল নারীকে হিজাব পরিধান করে সুন্দর একটি সমাজ উপহার দেওয়ার তাওফিক দান করুন। (আমীন)

-ছিদরাতুল মুনতাহা চৌধুরী

 

Hijab is my choice and my pride not compulsion !!!

একজন মুসলিম হিজাবি নারী হিসেবে আমি কখনোই এটা মনে করিনি যে আমাকে হিজাব পড়তে বাধ্য করা হয়েছে. ছোটবেলা থেকেই বাবা মায়ের দেওয়া আদর্শে ইসলামিক জ্ঞান নিয়ে বড় হয়েছি। নিজেই পড়াশোনা করে জেনেছি কেন হিজাব পড়তে হবে বা কেন পড়া উচিৎ. বাবা মা কেউ কখনো বাধ্য করেনি।

আজকাল হিজাব নিয়ে আমাদের চারপাশে যে, মিসকন্সেপশন তৈরী হয়েছে যেইটা আমরা অনেকেই না বুঝে বিশ্বাস করে থাকি। সেই মিসকন্সেপশনটা আমাদের নিজেদেরকেই মুছে ফেলতে হবে। আমাদের নিজেদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে, জানিয়ে দিতে হবে যে হিজাব কি এবং কেন সেইটা পড়া উচিৎ, প্রত্যেকটা মুসলিম নারীকে কেন হিজাব পড়ার কথা বলা হয়েছে? আসুন আমরা সবাই নিজেরাই সেই জ্ঞানটা অর্জন করি নিজেই ইতিহাস থেকে জেনে নেই কতটা জরুরী এই হিজাব পরিধান করা। আজকের এই “বিশ্ব হিজাব দিবসে” আমাদের প্রত্যেককেই একটা পরিষ্কার বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে, “হিজাব আপনার, আমার, আমাদের পছন্দ এবং তা আমি, আপনি নিজের ইচ্ছায় জেনে বুঝে পড়তেছি, আমাদেরকে কেউ কখনো বাধ্য করেনি”।

নিজের ভালো কে না চায়! তাই, আমি মনে করি একজন মুসলিম নারী হিসেবে এইটা পরিধান করা আমার অধিকার এবং আরো জানিয়ে দিতে চাই যে, আমি হিজাব পড়ছি না এইটা বুঝানোর জন্য যে শুধু মাত্র হিজাব পড়লেই আমি মুসলমান হয়ে গেলাম এবং গর্বিত হয়ে গেলাম এইটা চিন্তা করে যে আমি ইসলাম ধর্ম পালনে সফল হয়ে গেছি। হিজাব পরিধান করে আমি খুব বিনয়ী হয়েগেছি, তাহলে সেইটা ভুল হবে কারণ, ইসলাম ধর্ম সঠিক ভাবে পালন করছি কিনা সেইটা জানতে হলে আমাদের কে আরো গভীরে পৌঁছাতে হবে. যদিও নম্রতা, ভ্যদ্রতা হিজাব পরিধান করার একটা অংশ। বিশেষ তবে আমি বলবো আমাকে আমার মতো করেই গ্রহণ করুন. আমরা জানি যে, আল্লাহর আদেশ সেইটা ছোট হোক বা বড়ো তা মেনে চললে শয়তানের প্ররোচনা থেকে আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করেন আর তাই হিজাব পরিধান করলে একজন নারী আরো বেশি নম্র এবং বিনয়ী হয়ে উঠেন। যদিও আমি এইটা বলতে চাচ্ছি না যে, যারা হিজাব পড়তে চান না বা পড়েন না তাঁদের মধ্যে নম্রতা বা ভ্যদ্রতা নেই বা তারা ভুল করছেন আর তারা বিনয়ী নন। অবশ্যই তারাও এইসব বহু গুনে ভালো চরিত্রের অধিকারী। বাস্তবতা হচ্ছে যে আমাদের কে বুঝতে হবে, জানতে হবে “ইসলাম” কি “হিজাব” কি? However, the fact is that, at first we all have to accept each other the way we represent ourselves as a human being but not signifying by our appearance or religion”. নিজের ধর্ম পালন করা কোনো অপরাধ নয়। তাই এগিয়ে আসুন, আমরা নিজেদের কে প্রস্তুত করি আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য, আপনার আমার একটা ছোট প্রধক্ষেপ যেমন আল্লাহর আদেশ মানতে সাহায্য করবে তেমনি আরেকজন কে উৎসাহিত করবে ইনশাআল্লাহ।

-সিন মীম চৌধুরী

 

ইসলাম শব্দের অর্থ হল আত্মসমর্পণ করা, কোন আপত্তি ছাড়াই আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, সর্বান্তকরণে কেবলমাত্র আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ’লামীনের ইবাদত করা, তিনি যা বলেছেন তার সবকিছুই বিশ্বাস করা এবং তাঁর উপরেই বিশ্বাস এবং আস্থা রাখা।

সুতরাং এর মানে দাঁডায় আমি যদি সত্যিই নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করে থাকি বিনা দ্বিধায় আল্লাহর হুকুম মেনে নেব এই আস্থা রেখে যে, আমার রব আমার ভালো আমার চেয়ে বেশী জানেন।

পর্দা বা হিজাব ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। পর্দার বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা সকল শ্রেণীর ঈমানদার নারী-পুরুষকে সম্বোধন করেছেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত। নারীদের ক্ষেত্রে মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি এবং পায়ের কব্জি থেকে হাত ও পা বাদে বাকি পুরো শরীর রাখাটাই হল পর্দা।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং সমস্ত মুমিনের স্ত্রীগণকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরগুলো মস্তক হতে মুখমণ্ডলের নিম্ন দিকে ঝুকিয়ে দেয়। এভাবে বের হলে তাদেরকে চিনতে খুব সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করবে না।” (সুরা-আহযাব:৫৯)

কোরানে চোখের পর্দা করা নিয়েও বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাযত করে। এ-ই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত আছেন। (সুরা-নূর:৩০)

নারী-পুরুষ উভয়ের হৃদয়-মনের পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় হল ইসলামের পর্দা বা হিজাব বিধান। পর্দার এই সুফল স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- “এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব:৫৩)

নামাজ পরেন, নিজেকে প্র্যাকটিসিং মুসলিমা বলে দাবি করেন এমন অনেক-কেই দেখা যায় হিজাবের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক এবং দুঃখজনক ব্যাপার হলো তারা অনেকেই ভাবেন হিজাব না করে তারা কোনো গুনাহর কাজ করছেন না। তারা বলেন, তারা নিশ্চিত না যে হিজাব ফরজ। যারা হিজাব করেন না কিংবা করতে চান না তারা সব সময় অহেতুক তর্কে মেতে যান সেই বিধানের উপকারিতা আর অপকারিতা নিয়ে এবং সমালোচনা করা শুরু করেন কে কিভাবে সেটা পালন করছে তা নিয়ে। উপরের আয়াতগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ! এছাড়াও একাধিক হাদিসে হিজাবের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ আছে। এ ব্যাপারে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই; সুযোগ নেই সন্দেহের।

আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ তোমাদের পক্ষে যা সহজ আল্লাহ্ তাই চান ও তোমাদের পক্ষে যা কষ্টকর তা তিনি চান না” [সূরা বাকারাহ্: ১৮৫]

“তিনি (আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন) দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি’ ”[সূরা হজ্ব: ৭৮]

“আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাজিল করেছি; সেটি এমন যে, প্রত্যেক বস্তুর সত্য ও সুস্পষ্ট বর্ণনা; হেদায়াত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্য সুসংবাদ” (সূরা নাহল: ৮৯)

তাই আল্লাহর উপর একমাত্র ভরসা রেখে আজ পর্দা করার দাওয়াত দিতে চাই সেইসব বোনদের যারা মনে সাহস পাচ্ছেন না। বলতে চাই আপনি আল্লাহর দিকে একটু এগিয়ে এসে দেখুন আল্লাহ আপনার বাকি পথ অনেক সহজ করে দিবেন ইনশা-আল্লাহ। আর যে বোনরা পর্দা করছি তারা যেন হিজাবের প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে পারি যেন এই আধুনিক সমাজের বেড়াজালে হিজাবকে আমরা সৌন্দর্য প্রকাশের উপকরণ না বানিয়ে ফেলি।

আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীন বুঝার এবং সে অনুযায়ী আমল করার পথ সহজ করে দিন। আমিন।

-রুমানা আক্তার চৌধুরী 

শেয়ার করুন