অবশেষে ভারতে ফিরলেন পাইলট অভিনন্দন

বিদেশ ডেস্ক

সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলট অভিনন্দন বর্তমান। গত দুই দিন যাকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তান সংকটের আলোচনা উত্তাপ ছড়িয়েছে এই ব্যক্তিকে নিয়ে। কথা ছিল, মুক্তি পেয়ে পাকিস্তান থেকে সন্ধ্যায় তিনি দেশে ফিরবেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে সে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো রাত আটটায় তার দেশে ফেরার খবরও দিয়েছিল। তবে এক পর্যায়ে তারা বলেন ‘প্রক্রিয়াগত বিলম্ব’র কারণে অভিনন্দনের ফিরতে দেরি হচ্ছে। রাত ৯ টার দিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে অভিনন্দনকে হস্তান্তরের খবর দেওয়া হয়। তার কিছু সময় পর, ভারতীয় সূত্র নিশ্চিত করে, অভিনন্দন দেশের মাটিতে পা রেখেছেন। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ পাকিস্তানের হাত থেকে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করে। পরদিন বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত ও এক পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে ইঙ্গিত দেন, শান্তি স্থাপনে ভূমিকা রাখলে তারা অভিনন্দনকে ফিরিয়ে দিতে রাজি। এরপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তার মুক্তির সিদ্ধান্ত জানান। অসমর্থিত সূত্রে বিজনেস টুডে সন্ধ্যে ছয়টায় তার লাহোরে পৌঁছার খবর নিশ্চিত করে।
কূটনীতিকদের বরাতে পাকিস্তানভিত্তিক ডন ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো রাত ৯টার কিছু সময় পর ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, পাকিস্তানের ডন জানায়, টেলিভিশন ফুটেজে অভিনন্দনকে মুক্ত অবস্থায় ভারতের মাটিতে যেতে দেখা গেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ভারতীয় কর্মকর্তারা তার দেশে ফেরার খবর নিশ্চিত করেছেন। বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ভারতীয় বৈমানিক অভিনন্দন বর্তমানের সঙ্গে ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন জয় থমাস কুরিয়েন এবং পাকিস্তানের ভারতীয় হাই কমিশনে নিযুক্ত ডিফেন্স অ্যাটাশে।
এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের হাতে আটক ভারতীয় বৈমানিক অভিনন্দন বর্তমানকে আজ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতের কাছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখ পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করলে তার মিগ টোয়েন্টি ওয়ান বিমানটিকে ভূপাতিত করে পাকিস্তান বিমান বাহিনী। গ্রেফতার করা হয় আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরে বিধ্বস্ত বিমানটির সংশ্লিষ্ট বৈমানিককে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আটকাবস্থায় তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন মেনে এবং সম্মানজনক আচরণ করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনে সদিচ্ছার প্রতীক হিসেবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার আদেশ দেন।’
এরআগে অভিনন্দদের মৃত্যুর খবর নিয়ে খানিক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। ভারতীয় সময় সন্ধ্যে ৬টার কিছু পরে সংবাদ সংস্থা ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিসকে উদ্ধৃত করে দ্য হিন্দু জানায়, অভিনন্দনকে ভারতীয় হাই কমিশনের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সে সময় বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে তার দেশে ফেরার খবর দেওয়া হয়। পরে দ্য হিন্দু কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, ভারতীয় সময় রাত ৯ টায় অভিনন্দন দেশে ফিরতে পারেন। সংবাদমাধ্যম এএনআই সে সময় জানায়, পাকিস্তান দুই ধাপে তার মুক্তির সময় বিলম্বিত করেছে।
বুধবার ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুটি বিমান ভূপাতিত করার পাশাপাশি ভারতীয় পাইলটকে আটক করে তার ভিডিও প্রকাশ করে তারা। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৃহস্পতিবারের এক বিবৃতিতে ‘মানবিকতা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন আর জেনেভা কনভেনশন উপেক্ষা করে আহত সেনার কুরুচিপূর্ণ উপস্থাপন’র জোরালো নিন্দা জানানো হয়। আটক পাইলটকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়। একইদিনে (বৃহস্পতিবার) পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘উত্তেজনা নিরসনে ভূমিকা রাখলে আমরা ভারতীয় পাইলটকে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত’। কিছুক্ষণ পর পার্লামেন্টের এক যৌথ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানান, ‘শান্তির নিদর্শনের অংশ হিসেবে আমরা আটক ভারতীয় পাইলটকে আগামীকাল মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

অবশ্য ভারতের দাবি, জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘনের ভয়ে পাকিস্তান আটক বিমান সেনাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। অভিনন্দন ফেরার আগমুহূর্তে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘পুলওয়ামা হামলার পরবর্তী বিমান আক্রমণের ঘটনায় পাকিস্তান সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতো অল্প সময়ের মধ্যে পাইলট অভিনন্দনকে ফিরিয়ে আনার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারাটা আমাদের কূটনৈতিক বিজয়’।
শেয়ার করুন