
আল জাজিরার ডকুমেন্টারি
সাংবাদিক খাসোগিকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে!
সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা ও পরে কি করা হয়েছিল, তা এখনো রহস্যে ঘেরা। সর্বশেষ আল জাজিরার এক তদন্তে বলা হয়েছে, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনস্যুলেটের ভেতরে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর তার মৃতদেহ ওই কনস্যুলেটের ভেতরে পুড়িয়ে ফেলা হয়ে থাকতে পারে। তদন্তে সৌদি আরবের ওই কনস্যুলেট অফিসের দেয়ালে খাসোগির রক্তের দাগ দেখতে পেয়েছেন তুরস্কের তদন্তকারীরা। নতুন এক ডকুমেন্টারিতে এ কথা জানিয়েছে আল জাজিরা। আরবি ভাষায় তৈরি করা ওই ডকুমেন্টারি প্রচার করা হয় রোববার রাতে।
এতে বলা হয়, এ জন্য কনস্যুলেট ভবনের বাইরে একটি বড় চুল্লি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেখানে কীভাবে পোড়ানো হয় সে বিষয়টি মনিটরিং করেছে তুর্কি কর্তৃপক্ষ।
সেখানে দেখা গেছে, কিছু ব্যাগ। ধারণা করা হয়, কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে জামাল খাসোগিকে হত্যার পর তার দেহের বিভিন্ন অংশ এসব ব্যাগে করে ওই চুল্লির কাছে নেয়া হয়েছিল। চুল্লিটি কনস্যুলেট থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরে।
ওই চুল্লিটি নির্মাণকাজে যুক্ত ছিলেন এমন একজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছে আল জাজিরা। ওই ব্যক্তি বলেছেন, চুল্লিটি নির্মাণ করা হয়েছে সৌদি কনস্যুলেটের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী। বলা হয়েছিল, এটি হতে হবে অনেকটা গভীর। আর ভেতরের তাপমাত্রা হতে হবে ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে, যাতে এই তাপে ধাতব পদার্থ পর্যন্ত গলে যায়।
কর্তৃপক্ষের রিপোর্টে বলা হয়েছে, জামাল খাসোগিকে হত্যার পর তার দেহের অংশবিশেষ ওভেনে দিয়েও জ্বালানো হয়। এর মধ্য দিয়ে কনস্যুলেট হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও খাসোগির তুর্কি কিছু বন্ধুর সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়েছে ওই নতুন ডকুমেন্টারি।
উল্লেখ্য, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। তিনি এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে গিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লেখা শুরু করেন। এরই মধ্যে তুরস্কের হ্যাতিস চেঙ্গিস নামে এক যুবতীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি তাকে বিয়ে করতে চান। এ জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে আসেন তুরস্কে। যান সৌদি আরবের কনস্যুলেটে। সেই যে যাওয়া, সেটাই তার শেষ যাওয়া। এরপর তাকে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকে পরিবেশ। জবাবে রিয়াদ থেকে প্রাথমিকভাবে বলা হয়, খাসোগি জীবিত অবস্থায় কনস্যুলেট ছেড়ে গেছেন। তবে এর পরে বেশ কয়েকবার তারা তাদের বক্তব্য পরিবর্তন করেছে। এক পর্যায়ে স্বীকার করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আর তা করেছে দুর্বৃত্তরা।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র রিপোর্টে আঙ্গুল তোলা হয় সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের দিকে। বলা হয়, তিনিই এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এ অভিযোগ অস্বীকার করে সৌদি আরব।
ওদিকে এ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সৌদি আরবে ১১ জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।