সিলেট-২ আসনের নবনির্বাচিত এমপি মোকাব্বির খানকে ঘিরে সিলেটে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। গণফোরামের এই নেতার শপথ নেয়ার সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নেননি ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মীরা। প্রকাশ্যেই ক্ষোভ ঝাড়ছেন তারা। গত জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসী মোকাব্বির খান গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনাকে এ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলে মোকাব্বির খান মনোনয়ন প্রত্যাহার না করেই প্রবাসে পাড়ি জমান। এদিকে, আদালত কর্তৃক লুনার প্রার্থিতা বাতিল হলে মোকাব্বির খান নির্বাচনের একসপ্তাহ আগে দেশে ফিরে উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে মাঠে নামেন। কেন্দ্রের নির্দেশে ঐক্যফ্রন্ট তাকে সমর্থন জানায়। লুনার জন্য গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও মোকাব্বিরের প্রচারে এগিয়ে আসে।
তারা নানাভাবে সমর্থন ও প্রচারণা দিয়ে অচেনা মোকাব্বিরকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসেন। মোকাব্বির খান বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার ও গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারে তার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাকে নির্বাচিত করার জন্য সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। এম. ইলিয়াস আলীর ভাই আছকির আলী, স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা, ছেলে ব্যরিস্টার আবরার ইলিয়াস অর্ণব মোকাব্বির খানের জন্য ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করেন। এলাকায় এম. ইলিয়াস আলীর তুমুল জনপ্রিয়তা থাকায় মোকাব্বির খান প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও খুব সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেন এবং বিজয়ের মালা পরেন। পরবর্তীতে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বাতিলের দাবি তুলে শপথ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। গণফোরাম থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান প্রথমে দলীয় সিদ্ধান্তে দিকে তাকিয়ে থাকার কথা বললেও সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৭ই মার্চ শপথের ঘোষণা দিলে এলাকায় নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশেষ করে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা তাকে সুবিধাবাদী হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের অভিযোগ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরদিনই মোকাব্বির খান নির্বাচনে ইলিয়াস পরিবারের অবদান ভুলে গেছেন। তিনি নির্বাচন পরবর্তী প্রথম বিবৃতিতে তাকে নির্বাচিত করায় এলাকার সাধারণ মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও ইলিয়াস পরিবারের নামটি পর্যন্ত উল্লেখ করেননি। এ নিয়ে নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি নেতা-কর্মীরা তার উপর নাখোশ। বর্তমানে তার শপথের সিদ্ধান্তে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
একাধিক ভোটারের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, মোকাব্বির খানকে আমরা চিনি না এবং দেখিনি কখনো। আমরা ভোট দিয়েছি এই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য নিখোঁজ ইলিয়াস আলী ও তাঁর পরিবারের জন্য। যদি ইলিয়াস পরিবার ভোট না চাইতো তাহলে মোকাব্বির খান এমপি নির্বাচিত হতে পারতেন না। জামানত খোয়াতেন হয়তো। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক রুমেল আহমদ বলেন, মোকাব্বির খান রাজনীতিতে অচেনা একজন। এ ধরনের ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া অমূলক। সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়া গণতন্ত্রকামী মানুষের সঙেমগ বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল। ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি নেতা ও ভাইস চেয়ারম্যান গয়াছ মিয়া বলেন, এ ধরনের কাজ মোটেই ঠিক হবে না । শপথ না নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে মোকাব্বির খান ইলিয়াস পরিবারের অবদান ভুলে গেছেন। যা বিএনপি নেতা-কর্মীদের পীড়া দিচ্ছে। উপজেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও দয়ামীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজ মেহাম্মদ ফখর বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার ও গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের কথা বলে মোকাব্বির খান নির্বাচিত হয়ে এখন দল ও সাধারণ মানুষের মতামত উপেক্ষা করে শপথ নিতে যাচ্ছেন। যা আমাদের জন্য মেনে নেয়া অত্যন্ত কষ্টকর। আমরা এখন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও এম. ইলিয়াস আলীর ভাই আছকির আলী বলেন, এ এলাকার জনগণের সঙ্গে এম. ইলিয়াস আলীর প্রাণের সম্পর্ক। তাই সাধারণ মানুষ ইলিয়াস আলীর জন্যই তাকে ভোট দিয়েছে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বার্থে মোকাব্বির খান শপথ না নিয়ে জনগণের আন্দোলন সংগ্রামেই শামিল হবেন বলে আমি আশা করছি।