শাকির আহমদ :: মানুষ যা পায় তার থেকেও বেশী পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। এই পাওয়াটা যদি হয় পরিশ্রমের ফসল তবে একরকম আত্মতৃপ্তি আসে আর যদি সেই পাওয়াটা কোন অনৈতিক উপায়ে আসে তবে একরকম অপরাধবোধ কিংবা সহজ ভাষায় অতৃপ্তি নিয়ে বসবাস করতে হয়। এই তৃপ্তি অথবা অতৃপ্তির ফারাক বুঝা যায় মানুষের আচরণ এবং নিজের অভিব্যক্তির ধরণ দেখে।
এমন অভিব্যক্তি নিয়ে গত ৬ মার্চ রাতে আনিসুল ইসলাম নামে একজন শিক্ষকের এক ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে সুশীল সমাজে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সিলেটের মর্ণিংটন ইউনিভার্সিটি কলেজের আইটি বিভাগের প্রধান। নিচে তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু দেয়া হলো-
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে / বুয়েটে ভর্তির সৌভাগ্য আমার হয়নি কারণ জিপিএ কম ছিল । আরও সুন্দর করে বললে কম সিজিপিএ এর কারণে ভর্তি পরিক্ষা দেবার অনুমতি মিলেনি । যদিও আমার ভিডিও দেখেই চেনা-অচেনা অনেকেই মাস্টার্সের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং আলহামদুলিল্লাহ্ সুযোগও পেয়েছেন । শুভকামনা তাদের জন্য ।
কিছুটা আফসোস থাকলেও আমি কিন্তু বেশী দিন এইসব নিয়ে একদম মাথা ঘামাই নি । কারণ শেখার জন্য ভার্সিটি মুখ্য নয়, বরং নিজের ইচ্ছা শক্তি প্রয়োজন । ইচ্ছা থাকলে কি করা যায় তা আমি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছি ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০ বছর পড়ানোর পর বিদেশে থাকা একজন শিক্ষিকা আজ ফোন দিয়ে যখন বললেন “স্যার আপনার জাভার ভিডিওগুলো দেখে ধন্যবাদ জানানোর জন্য ফোন দিলাম । আমি এখানে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্টানে জাভা শিখছিলাম, সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল তাই বাংলা ভিডিও খুঁজছিলাম বলেই আপনার ভিডিওগুলো পেলাম । আপনার কি সিলেনিয়াম এর ভিডিও আছে ? ”
বয়সে বড় / বিদেশে চাকরিরত / কিংবা বিদেশে নামী-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এইরকম অনেক কথাই হয়ত আমার ইউটিউবের কমেন্টে জমা আছে । কিন্তু এই ফোন কলটা আমার আজীবন মনে থাকবে । প্রায় মায়ের বয়সের কারো কাছ থেকে এত বড় শ্রদ্ধার ডাক শোনা আমার এই জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা হিসাবে জমা থাকবে ।
উপরের কথাগুলো দ্বারা এইটাই বুঝাতে চাচ্ছি “কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি পড়ছেন কিংবা পড়বেন তার চেয়ে বড় কথা আপনি কতটুকু পরিশ্রম করছেন শেখার জন্য, শেখানোর জন্য । গ্রাম কিংবা শহর যেখানেই আপনি থাকুন এই বিশ্বায়নের যুগে আপনার শুধু থাকা চাই ইন্টারনেট । এর সুবিধা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনি নিশ্চয়ই ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে পারবেন । এই বিশ্ববিদ্যালয় , ঐ বিশ্ববিদ্যালয় এ সুযোগ না পেয়ে জীবনের সব কিছু শেষ হয়ে যাবে এই রকম বোকার স্বর্গে বসবাস করা মোটেও যুক্তিসম্মত নয় । আপনি যেখানেই পৌঁছাতে চান, আপনার পরিশ্রম, সাধনা, ত্যাগ আপনাকে সেখানে পৌঁছাতে মূল ভুমিকা পালন করবে ।
আজ দেশের প্রায় সকল ভার্সিটিতেই হাজার হাজার স্টুডেন্ট আমার ভিডিওগুলো দেখছেন , শিখছেন, প্রশংসা করছেন , সম্মান দেখাচ্ছেন । সকলের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা রইল । অফলাইনের জগতে অসৎ ব্যক্তিদের কারণে নিজের পাওনাটুকু না পেলেও একটা জায়গায় কাউকে তেল মারতে হয়নি এতেই খুশি । আমি সামান্য এক গ্রামের ছেলে, ইচ্ছা ছিল মানুষের জন্য কিছু করার, বিন্দুমাত্র কাজ করতে পেরেছি । আর এতেই আমি খুশি । পড়েছি অনেকেরই কাছে অচেনা এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে । আমার ভিডিও দেখেই আজ অজপাড়া থেকে অনেক স্টুডেন্ট আমার ভার্সিটির নাম যখন বলে তখন সত্যি গর্ব হয় ।’