মৌলভীবাজার এখন শব্দদূষণ ও শব্দ সন্ত্রাসের শহর

খ ম জুলফিকার, মৌলভীবাজার থেকে:

শব্দদূষণ একটি মারাত্মক সমস্যা। এ সমস্যা মানুষেরই সৃষ্ট। একটু সচেতনতা অবলম্বন করলেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

শব্দদূষণ এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এখন একে ‘শব্দ-সন্ত্রাস’ নামে অভিহিত করা যায়। অপদস্থ হওয়ার ভয়ে বেশির ভাগ মানুষ কোথাও অভিযোগ না করে নির্বিবাদে উচ্চশব্দের ভয়ংকর যন্ত্রণা সহ্য করছেন।

ব্যস্ততম শহর হিসেবে মৌলভীবাজার জেলা শহর অন্যতম। প্রতিদিন এই শহরে সহস্রাধিক যানবাহন চলাচল করে। এরমধ্যে অধিকাংশ যানবাহনেই রয়েছে হাইড্রোলিক হর্ন।

যত্রতত্র বাজানো হয় এই হর্ন। নিয়ম মানা হচ্ছে না হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনেও। এর ফলে নগরীতে বেড়ে গেছে শব্দদূষণ।

এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জেনারেটরের শব্দ ও কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে কনসার্ট ও মাইকের উচ্চ শব্দের কারণেও মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ হচ্ছে নগরে।

সহনীয় মাত্রার চেয়ে উচ্চমাত্রার শব্দদূষণের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে নগরবাসী। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ও সুন্দর জীবন ‘শব্দদূষণ এখন জীবনবিনাশী শব্দ-সন্ত্রাস; গভীর সংকটে আমাদের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য! সমাধানের উপায় কী?’ শীর্ষক আলোচনায় বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। বলেন, উচ্চশব্দের প্রধান উৎস যানবাহনের অহেতুক হর্ন, ভবন নির্মাণের সামগ্রী, মাইক আর ইট গুঁড়া করার যন্ত্র। তবে গায়েহলুদ, বিয়ে, জন্মদিন, নববর্ষ, ধর্মী অনুষ্ঠান ইত্যাদি সামাজিক অনুষ্ঠানে অতি উচ্চমাত্রার শব্দ সৃষ্টিকারী সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।

তিনি বলেন, এতে প্রতিবেশীদের রাতের ঘুম হয় না, হৃদ্‌রোগীদের হৃৎকম্পন বেড়ে যায়, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক ক্ষতি হয়। মানুষের কর্মক্ষমতা কমছে, গর্ভবতী মা ও শিশুদের ওপর উচ্চশব্দের প্রভাব আরও মারাত্মক।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি আ স ম খালেদ সোহেল বলেন অতিরিক্ত শব্দদূষণের কারণে কমবেশি সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। হৃদরোগী ও স্ট্রোকের রোগীদের সমস্যা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত শব্দ দূষণে সব বয়সী মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়। মানসিক চাপ তৈরি হয়। অস্থিরতা বেড়ে যায়। মেজাজ হয় খিটখিটে।

এদিকে, অনেকেই মনে করেন শব্দদূষণ সমস্যা মানুষেরই সৃষ্ট। একটু সচেতনতা অবলম্বন করলেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মানুষের সৃষ্টি এমন একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য পরিবেশগত সমস্যা হলো শব্দদূষণ।

শেয়ার করুন