আমানুর রহমান রনি
রাজধানীতে গত ৫৮ ঘণ্টায় ছোট-বড় অন্তত ৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অনেকটা হিমশিম খান। বিরামহীনভাবে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের সদস্যরা সবাই প্রশিক্ষিত হওয়ায় কোনও বেগ পেতে হচ্ছে না। সব ধরনের প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ জনবল সংকটের কথা বলছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিটের শতাধিক কর্মী টানা ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন। ভবনে আটকা পড়াদের উদ্ধারের সময় তাদের মধ্যে ১৪ জন আহত হন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বনানীর আগুনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৬ জন। এখনও ৩০ জন আহত অবস্থায় কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এফ আর টাওয়ারে আগুন নেভানোর পর দিন দুপুরে বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এফ আর টাওয়ারে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের একটা অংশ সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে সেখানে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এই দুই অগ্নিকাণ্ডের রেশ না কাটতেই শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর নর্দাবাজারের জামে মসজিদের পাশের একটি ভবনে আগুন লাগে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ও স্থানীয়রা মিলে দ্রুত আগুন নিভেয়ে ফেলেন। বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শেষ হয় বলে জানান ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় থানা।
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাজধানীতে এই তিন আগুনের ঘটনার পর যখন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের সরঞ্জাম নিয়ে স্টেশনে ফিরছেন, ঠিক তখনই শুক্রবার দিবাগত (৩০ মার্চ, শনিবার) ভোর রাতে গুলশান ১ নম্বরের ডিএনসিসি’র কাঁচাবাজার ও সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে আগুন নেভায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘গুলশানের কাঁচাবাজারটিতে অগ্নিঝুঁকিতে ছিল। এখানে প্লাস্টিক সামগ্রী ছিল। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি।’
আগুনে কাঁচাবাজার পুড়ে শেষ। ২৯১টি দোকান পুড়েছে বলে জানিয়েছেন কাঁচাবাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দিল মোহাম্মদ।
গুলশান কাঁচাবাজারের আগুন নিভিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুপুরে স্টেশনে ফিরে যান। এর কিছুক্ষণ পর গুলশান ২ নম্বরে ডেল্টা ইন্সুরেন্স ভবনে আগুনের খবর আসে। আবার সেখানে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। তবে এই ভবনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকায় নিরাপত্তাকর্মীরা আগুন নিভিয়ে ফেলেন বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান।
গুলশান-২ নম্বরের ঘটনার পর শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ধানমন্ডি ১১/এ নম্বর সড়কের ৬৬ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশন থেকে দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়।
এভাবে বিরামহীন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গত দুই দিনে রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আগুনের খবর পেয়ে ছুটে যাচ্ছেন।
রাজধানীতে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশন রয়েছে। সেগুলো হলো মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, উত্তরা, কুর্মিটোলা, বারিধারা, তেজগাঁও, সিদ্দিকবাজার, মিরপুর, পলাশী, লালবাগ, ডেমরা, পোস্তখোলা ও খিলগাঁও। প্রতিটি স্টেশনে ফায়ার ফাইটার ম্যান, চালকসহ ৩২ জন করে কর্মী রয়েছেন। সেই হিসাবে দুই কোটি জনসংখ্যার এই মহানগরীতে মাত্র ৪১৬ জন ফায়ার কর্মী রয়েছে। তবে বড় ঘটনা ঘটলে রাজধানীর আশপাশের জেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের খবর দেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রশিক্ষিত। তারা মানুষকে নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। প্রতিটি ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে থাকেন।
বাংলা ট্রিবিউন থেকে নেয়া.