রফিকুল ইসলাম কামাল :: অপরাধের ধরন পাল্টাচ্ছে। নিজেদের কৌশল বদলাচ্ছে অপরাধীরা। অপরাধে বাড়ছে অত্যাধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার। এই পরিস্থিতিতে বসে নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের সদস্যরাও। সময়ের সাথে সাথে নিজেদেরকে আরো প্রশিক্ষিত, আরো ক্ষিপ্র করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এরই অংশ হিসেবে সিলেট মহানগর পুলিশের ৬০ জন সদস্য দুর্ধর্ষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। জর্ডানে প্রশিক্ষণ শেষে বর্তমানে তারা সিলেটে ++++প্রশিক্ষণে রয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, সিলেট মহানগর পুলিশে (এসএমপি) কয়েক বছর ধরেই ‘কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিইউ)’ এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে আরও দুর্ধর্ষ একটি ইউনিটের চাহিদা থেকে গেল বছর জন্ম নেয় ‘ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি)’র। এসএমপির এই নতুন ইউনিটের একটি টিমকে উন্নততর প্রশিক্ষণের জন্য ‘অ্যান্টি টেরোরিজম অ্যাসিস্ট্যান্স (এটিএ)’র আওতায় পাঠানো হয় জর্ডানে। গেল বছরের জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যে পাঁচ সপ্তাহ সময় এই টিমের সদস্যদের জর্ডান পুলিশ ট্রেনিং কলেজে প্রশিক্ষণ দেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটির ৮ জন প্রশিক্ষক।
পরে দেশে ফিরে আবার প্রশিক্ষণ নেয় এই টিম। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন প্রশিক্ষক তাদেরকে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এরপর গেল বছরের ২৯ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে এসএমপির বিশেষায়িত সিআরটি ইউনিট।
এবার ওই টিমের সদস্যদের সাথে আরো কিছু সদস্য যোগ করে দুটি টিমে ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে উন্নততর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রতি টিমে ৩০ জন করে সদস্য আছেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা বলেন, ‘৬০ সদস্যের দুটি টিম গত ৩ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত জর্ডানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তারা দেশে ফিরে গত ৭ এপ্রিল থেকে সিলেটে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। এ প্রশিক্ষণ চলবে আগামী ২ মে পর্যন্ত।’
সিলেট পুলিশ লাইন্স, আখালিয়াস্থ বিজিবির ফায়ারিং রেঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে এসব পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ চলছে।
পুলিশ কর্মকর্তা জেদান আল মুসা বলেন, ‘অপরাধ কখন কোথায় সংঘটিত হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই সব পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিআরটি টিমের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বাসা-বাড়ির ছাদে, সেতুর নিচে, মার্কেটে, জঙ্গলে সবখানে তারা কঠোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।’
ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের এই ৬০ সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন বেন চিরিনস্কি ও জন বোয়াজ। গেল বছরও তারা সিআরটি সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। তারা দুজনই যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের বিশেষায়িত প্রশিক্ষক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট’র আদলেই গড়ে ওঠেছে এসএমপির সিআরটি টিম। সিআরটি টিমের সদস্যরা জঙ্গিদমন, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান রোধ, বড় ধরনের সহিংস ঘটনা প্রতিরোধ, গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানোসহ যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত থাকবেন। অপরাধ দমনের আধুনিক কলাকৌশল রপ্ত করা, অত্যাধুনিক সকল অস্ত্র চালনায় পারদর্শীতার প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদেরকে দুর্ধর্ষ করে তুলছেন এসব সদস্য। প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই নিজেদের কৌশল, দক্ষতা, ক্ষিপ্রতা ও জ্ঞান বাড়িয়ে নিচ্ছেন তারা। এ টিমের কমান্ডে আছেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহরিয়ার আল মামুন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সিআরটি টিম ভবিষ্যতে অ্যাডভান্স ক্রাইসিস রেসপন্স, টেকনিক্যাল মেডিকেল, টেকনিক্যাল কমান্ডার ফোর্স প্রভৃতি বিষয়ে উন্নততর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে