কুলাউড়া সরকারী হাসপাতাল, দূর্ভোগ

শাকির আহমদ, কুলাউড়া :: জনবল সংকটে ধুঁকছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে নানা দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসকের সেবা পেতে পার করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এদিকে, জনবল ও চিকিৎসক সংকটের ফলে রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

৪ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবাদানকারী এই হাসপাতালের চিকিৎসক ও জনবলের সংকটের খরা যেনো কাটছেই না। গত তিন বছর ধরে ৪-৫ জন মেডিকেল অফিসার ও কয়েকজন উপসহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিয়ে চলছে চিকিৎসা ব্যবস্থা।

বিভিন্ন সময় এই হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলেও কিছুদিনের মধ্যেই বদলি অথবা প্রেষণে অন্যত্র চলে যান চিকিৎসকরা। এই সংকটের কারণ হিসেবে বিভাগীয় শহরে নিজেদের প্র্যাকটিস ও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সুযোগ এবং চিকিৎসকদের কুলাউড়ার প্রতি অনীহা এমনটি জানালেন খোদ জেলা সিভিল সার্জন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে মোট ৩৮টি পদের মধ্যে দুটি পদ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক, আবাসিক মেডিকেল অফিসার জাকির হোসেন দায়িত্বরত রয়েছেন। বাকী ৩৬টি মধ্যে ১০টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদের মধ্যে দায়িত্বে আছেন মাত্র একজন। বাকি বিশেষজ্ঞ পদের মধ্যে ৪জন এই হাসপাতালে নিয়োগকৃত হলেও বর্তমানে প্রেষণে কর্মরত আছেন সিলেট বিভাগীয় ও মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে। কিন্তু বেতন ভাতাদি সবকিছু এই হাসপাতালের মাধ্যমে গ্রহণ করেন। এছাড়াও ২৬টি মেডিকেল অফিসারের মধ্যে দায়িত্বে আছেন মাত্র ৫জন।

তথ্য নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইকবাল বাহার শুধু কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া প্রেষণে দীর্ঘদিন ধরে মৌলভীবাজার হাসপাতালে কর্মরত আছেন অর্থপেডিক্স (হাড়-জোড়া) বিশেষজ্ঞ আব্দুল্লাহ আল মামুন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এবিএম রেজাউল করিম ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফখরুল ইসলাম। এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আবু নাইম মো. ইউসুফ সিলেট শামছুদ্দিন হাসপাতালে দায়িত্বরত রয়েছেন।

মেডিকেল অফিসার আবু বকর নাসের মো. রাশু দীর্ঘদিন ধরে কুলাউড়ায় দায়িত্ব পালন করছেন। এবং ২০১৭ সাল থেকে ডা. ফাহমিদা ফারহানা খান, চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ডা. মাছুম পারভেজ ও ডা. মেহেদী হাসান মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি এপ্রিল মাসে দন্ত চিকিৎসক ডা. নাফিস কামাল যোগদান করেছেন কুলাউড়া হাসপাতালে। তাদের সাথে উপসহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সেকমো) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হেমন্ত পাল, শফিকুল ইসলাম, শাহানুজ্জামান সুমন, দিপংকর দাস, শিরীনা খাতুন, ফেরদৌসী আক্তার, জরিনা খাতুন, শাহানা বেগম।

এদিকে, বিগত ২০১৫ সালে হাসপাতালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩০ জন বিশেষজ্ঞ ও মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পর অধিকাংশ চিকিৎসক প্রেষণে ও বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকেই চিকিৎসক সংকট কাটছেনা এই হাসপাতালে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরি বিভাগ, আবাসিক ও বহির্বিভাগে সহস্রাধিক মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। মাত্র ৪-৫ জন চিকিৎসক দিয়ে এত মানুষের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মশালা, জেলা সদরে বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশ নিতে হয়। তখন চিকিৎসা নিতে আসা মানুষেরা দূর্ভোগে পড়েন। চিকিৎসক সংকটের কারণে উপসহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক বলেন, চিকিৎসক ও লোকবল সংকটে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। তবুও যথাসাধ্য চেষ্টার মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম ভালোভাবে চালিয়ে যাচ্ছি। প্রেষণে চিকিৎসকরা অন্যত্র চলে যাবার বিষয়ে তিনি বলেন, জেলা সদরসহ বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ পদ শূন্য থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রেষণে সেখানে দায়িত্ব পালন করতে চালে যান।

মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন শাহজাহান কবির চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার জন্য কুলাউড়ার প্রতি অনীহা থাকায় এখানে কেউ আসতে এবং থাকতে চায়না। চিকিৎসক সংকট সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অনীহার বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে সমাধানের চেষ্টা করবো।

শেয়ার করুন