মৌলভীবাজার প্রতিনিধি.
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ চলমান কাজে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি তদন্তে দুদকের টিম বাড়ি ঘর পরিদর্শন করেছে।
২৭ এপ্রিল শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম দুদকের তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে২৫এপ্রিল হবিগঞ্জ কার্যালয়ের দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এরশাদ মিয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল দিনব্যাপী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্মিত বাড়িঘর পরিদর্শন করেন। দুদক টিম স্কেল দিয়ে ঘরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ, খুটির উচ্চতা ও দৈর্ঘ্য প্রস্থ মাপ যোগ দেখেন তারা।
এসময় দুদক টিমের কাছে অনিয়মের বর্ণনা দেন উপকারভোগীরা। এক বস্তা সিমেন্টের সাথে ২০ টুকরি বালু মিশিয়ে কাজ করার কথা তুলে ধরেন সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো অপদস্থ হতে হয়েছে সেই বিষয়টিও দুদক টিমের কাছে তুলে ধরেন পৃথিপাশা ইউনিয়নের গনিপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আহাদ। স্থানীয় গণমাধ্যমে ঘরের অনিয়মের কথা তুলে ধরায় আব্দুল আহাদকে হুমকিও দেয়ার বিষয়টিও দুদকের নজরে আনা হয়।
দুদক টিম কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ৪টি গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প -২ এর চলমান ঘরের দৃশ্য তদন্ত করে। সুলতানপুরে গ্রামের একটি ঘরের বারান্দা ফেটে চৈৗচির হয়েছে সেই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করেন তারা।
কাজে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে কানাইটিকর গ্রামের ছায়া বেগম দুদক টিমের কাছে ঘরের টেকসই নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন- ‘অনেক ভয়ে আছি, ঘরের খুটি খুব দুর্বল, যে কোন সময় ঘর বাতাসে উড়াইবো’।
কুলাউড়ার চলমান প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ কাজের নেতৃত্বে আছেন কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল লাইছ। প্রকল্প থেকে লুটপাটের জন্য ঘর নির্মাণে প্ল্যান, ডিজাইন প্রাক্কলন মোতাবেক গুণগত মান বজায় রাখা হয়নি বলে অভিযোগ উপকারভোগীদের।
কুলাউড়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্প -২ এর আওতায় প্রায় তিনশ বাড়ি নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্প -২ এর আওতায় (যাদের জায়গা আছে বাড়ি নাই) কুলাউড়া উপজেলায় প্রায় তিনশ বাড়ি নির্মাণ করা হয়।
ইউএনও মো. আবুল লাইছ পছন্দসই ঠিকাদার দিয়ে বাড়িগুলো নির্মাণের দায়িত্ব দেন। বাড়িগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বিশেষ করে দুই শতাধিক ঘরের নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের বিষয়টি দুদকের নজরে আসে।
দুদক হবিগঞ্জ অঞ্চলের ডেপুটি ডাইরেক্টর অজয় সাহা জানান, তদন্ত করেছি প্রতিবেদন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিব। তবে তদন্তাধীন বিষয়ে কোন কিছু বলা যাবে না।
এর আগে বুধবার ২৪ এপ্রিল সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী কুলাউড়া উপজেলায় সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনে আসলে জয়চন্ডী ইউনিয়নে একটি ঘর পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, পরিদর্শনকালে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে উপকারভোগিরা সরাসরি গৃহ নির্মাণে অনিয়মের কথা জানান। এসময় জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম ও ইউএনও মো. আবুল লাইছ উপস্থিত ছিলেন।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন,কিছু জায়গায় বাড়ি ঘরের ফ্লোর ডেবে গেছে। কিছু ফাটলও আছে। বিষয়টি নিয়ে দুদক তদন্ত করছে। আমরা এ ব্যাপারে তদন্ত করে কাজে কোন গাফলাতি থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।’