বিদ্যুৎ শর্ট সার্কিটের কারনে প্রায় ১০টি মিটারে আগুন, সংশ্লিষ্টরা ফোন ধরেননি

শাকির আহমদ :: রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আগুন আর আগুনের খবর নিয়ে নানা শঙ্কায় দিনাতিপাত করছেন মানুষ। ঠিক এমন সময় ৩১ মার্চ দিবাগত রাত ৩ টায় ঘরের মিটার থেকে শর্ট সার্কিটে আগুন লাগে ফ্রান্স প্রবাসী ফয়েজ আহমদ তপনের বাড়িতে। কুলাউড়া বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টার পরও তারা ফোন কল উঠায় নি।

পরে তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ও এসআই দিদার উল্লাহ এর নেতৃত্বে পুলিশ এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে গ্রামের আশপাশের প্রায় ৯/১০টি বাড়ির বিদ্যুৎ মিটার আগুনে পুড়ে যায়। আরও প্রায় ১০/১২টি বাড়ির মিটারও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে বিদ্যুতের দূর্ঘটনার দায় যে বিদ্যুৎ অফিসের, সেই অফিসের কোন কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী ক্ষতিগ্রস্থ কোন মানুষের ফোন কল ধরেন নি। এমনকি ফায়ার ম্যান বেলায়েত হোসেন ও পুলিশের এসআই দিদার উল্লাহ-এর ফোন কলও ধরে নি বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন।

ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের বড়কাপন এলাকায়। প্রবাসী তপন ২২ দিন হয় দেশে এসেছেন। তপন ছাড়াও একই এলাকার ফখরু মিয়া, মাহবুব করিম মিন্টু, সোনা মিয়া, কয়ছর মিয়া, সফাত মিয়া, সৈয়দ হাবিবুর রহমান, লুৎফুর রহমান, আজিদ মিয়া, আঙ্গুর মিয়ার ঘরের বিদ্যুৎ মিটার আগুনে পুড়ে গেছে। উপায়ন্তুর না দেখে স্থানীয় ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি ইমরান আহমদের সরণাপন্ন হয় স্থানীয়রা। ফায়রসার্ভিসের লোকজনের সহায়তায় ইমরান বেশীরভাগ বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে মিটারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

জানা যায়, রবিবার রাত ৩টার দিকে প্রবাসী তপনের ঘরের বারান্দায় হঠাৎ বিকট আওয়াজ শোনা যায়। বিষয়টি দেখতে পাশের ঘরের লোকজন বাইরে এলে দেখতে পান বারান্দায় স্থাপিত মিটারে আগুন জ্বলছে এবং দ্রæত তা ছড়িয়ে পড়ছে। আগুনের দৃশ্য দেখে তাঁরা চিৎকার-চেচাঁমেচি শুরু করলে আশপাশের মানুষ এসে বিদ্যুৎ অফিস ওয়াপদা, ফায়ার সর্ভিস, কুলাউড়া থানা পুলিশকে ফোন কল করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিভিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওয়াপদা বিদ্যুৎ অফিসের কোন নাম্বারে কেউ কল না ধরায় উত্তেজিত জনতা ওয়াপদা অভিমুখে রওয়ানা দিলে কুলাউড়া থানার একটি টিম এসে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। এদিকে একই সময় প্রবাসী তপনের আশপাশের প্রায় ২০/২৫টি বাড়ির বিদ্যুৎ মিটার শর্ট-সার্কিটে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের সহায়তায় ওয়াপদা বিদ্যুৎ অফিসে রাত ৪টার দিকে গিয়ে দেখা যায় সবাই ঘুমে বিভোর। এরমধ্যে ফোন কলের দায়িত্বে থাকা ডিউটিরত কর্মচারী মেহেদী বেশ আয়েশে নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন। অনেক ডাকাডাকির পর তিনি অফিসের দরজা খুললে উপস্থিতির বিভিন্ন অভিযোগের কোন সদুত্তোর দিতে পারেন নি।

এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ছালিক আহমদ বলেন, রাত ৩টায় হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে বাইরে এসে এই পরিস্থিতি দেখি। বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কাউকে না পেয়ে স্থানীয় ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি ইমরানের সহযোগীতায় ফায়ার সর্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের সাথে বিদ্যুৎ অফিসে গেলে ডিউটিতে মেহেদী নামে একজনকে পাওয়া যায়। সারাদিন পরীশ্রম করায় সে মোবাইল সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে পড়েছিলো বলে আমাদের জানায়।

কুলাউড়া থানার এসআই দিদার উল্লাহ জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুঁটে যাই। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এবং আমাদের পুলিশের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।

ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার বেলায়েত হোসেন জানান, খবর পেয়ে দ্রত ঘটনাস্থলে যাই। বিদ্যুতের আগুন নেভাতে যে সব সরঞ্জাম প্রয়োজন তা আমাদের কাছে নাই। তারপরেও মানুষ, ঘর-বাড়ি ও মালপত্র বাঁচাতে অনেক ঝুঁকি নিয়ে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি।

শেয়ার করুন