বিশেষ প্রতিনিধি.
ড. কামাল হোসেন ও গণফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথ গ্রহণ করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিলেট-২ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের সিদ্ধান্ত মানেই হলো গণফোরামের সিদ্ধান্ত। আমি দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে ২ বা ৩ মার্চ আমার শপথের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি।’ তবে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘ আমাদের শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও বহাল আছে। তিনি নিজ দায়িত্বে শপথ নিচ্ছেন ।’
সোমবার ( ১ এপ্রিল) বেলা ৩ টায় মতিঝিল ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে মোকাব্বির খান এক সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বলেন, আমি ড. কামাল হোসেনের কাছে সিদ্ধান্ত নিয়ে শপথ গ্রহণের জন্য স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি।
ড. কামাল হোসেনের নাকি গণফোরামের সিদ্ধান্তে শপথ নিতে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মোকাব্বির বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের সিদ্ধান্ত মানেই হলো গণফোরামের সিদ্ধান্ত। আমি দলীয় সিদ্ধান্তে শপথ নিতে যাচ্ছি।’
তবে তিনি জানান, তার শপথের বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল বিএনপির সঙ্গে সরাসরি কোনও কথা হয়নি। অফিসিয়ালি তাদেরকে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
নির্বাচন প্রত্যাখান করে কেন শপথ নিতে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমরা পুরো নির্বাচনকে প্রত্যাখান করেছি। কিন্তু প্রতিকূল অবস্থা থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, সেটা কিন্তু প্রত্যাখান করি নাই। অর্থাৎ যেখানে জনগণ ভোট দিয়েছে, সেখানে তো আমাদের প্রত্যাখান করার সুযোগ নেই। যেখানে ভোট হয়েছে, সেটা তো গণরায়। ২৯২ টি সংসদীয় আসনে ভোট হয় নাই, সেটাকে আমরা প্রত্যাখান করেছি। কারণ, ৮ টি আসন দিয়ে তো পুরো বাংলাদেশকে বিচার করা যায় না। এজন্য আমরা বলছি যে নির্বাচনটাকে প্রত্যাখান করছি। আমরা যে নির্বাচনটাকে প্রত্যাখান করেছি সেটা বলার জন্য সংসদে যাওয়া। এটা তো অলিতে-গলিতে বললে হবে না। সংসদে গিয়ে বলতে হবে যে এই নির্বাচন হয় নাই। সেটা তো তখন রেকর্ড হবে। আর এসব কথা বলার জন্য উপযুক্ত জায়গা হলো সংসদ।’
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথ নিলে, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে কেন দল থেকে বহিষ্কার করা হলো—জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেন নাই বলেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি দলীয় মতামত উপেক্ষা করে শপথ নিয়েছেন। এই জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আপনার শপথ নেওয়ার পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে কোনও প্রভাব পড়বে কী—প্রশ্নের জবাবে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আগামী দিনে কোনও প্রভাব পড়বে কিনা সেটা তো আমি বলতে পারি না। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হয় নাই , ৩০ তারিখ (৩০ ডিসেম্বর) যে মানুষ ভোট দিতে পারে নাই সেই কথাটা সবাইকে সংসদে গিয়ে বলা উচিত বলে আমি মনে করি।’
শপথ নেওয়ার পরে কি ফুলটাইম রাজনীতি করবেন নাকি আবার লন্ডনে চলে যাবেন জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমরা রাজনীতি শুরু ছাত্রলীগ থেকে। কিন্তু পেশার কারণে দেশের বাইরে ছিলাম। আমি আওয়ামী লীগ করেছি। এরপর আমি গণতান্ত্রিক ফোরাম করেছি। গণতান্ত্রিক ফোরাম থেকে যখন গণফোরাম হয় তার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আমি। দীর্ঘদিন ধরে আমি গণফোরামের নির্বাহী কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে আছি। পেশাগত কারণে লন্ডনে থাকতে হয়। কিন্তু আমি সব সময় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি। লন্ডনেও আমি রাজনীতি করেছি। এখন আমি ফুলটাইম দেশে থেকেই রাজনীতি করবো।
গণফোরামের উদীয়মান সূর্য নিয়ে প্রথম আপনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এটা কি ঐক্যফ্রন্টের বিজয় নাকি গণফোরামের—এই প্রসঙ্গে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমার বিজয় গণফোরামের বিজয়। দীর্ঘদিন যে গণফোরাম নীতি-আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করছে, এটা তারাই বিজয়। এটা সুস্থ রাজনীতির বিজয়।’
নির্বাচনের আগে লন্ডনে চলে গিয়েছিলেন, বিএনপির প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনার প্রার্থিতা বাতিল হলে আবার দেশে ফিরে আসেন। তখন কি নির্বাচিত হতে পারবেন এমন আশা ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে মোকাব্বির খান বলেন, ‘সেইভাবে আমি চিন্তা করি নাই। প্রথমত গণফোরাম থেকে যে কয়জনের চূড়ান্ত তালিকা বিএনপিকে দেওয়া হয়েছিল সেখানে আমরা নাম ছিল। কিন্তু যে কোনও কারণে আমি মনোনয়ন পাইনি। তখন আমি বিএনপির প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লন্ডনে চলে যাই। যখন তিনি আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচন করতে পারছেন না, তখন আমি দেশে চলে আসি। ভাগ্যিস, আমি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সুযোগ পাই নাই। ফলে এমনিতেই আমার প্রতীক বরাদ্দ হয়েছিল। সেইদিন আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম যে আমি আমার নিজের ভোটটাও দিতে পারবো না। কারণ, আমার সংসদীয় এলাকা সিলেট-৩। আমি নির্বাচিত হয়েছি সিলেট-২ থেকে। অবশ্যই সেখানে আমি লেখাপড়া করেছি, আমার জায়গা-জমি সব সেখানে আছে। সেখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি, হিন্দু-মুসলিম সবাই আমাকে ভোট দিয়েছে। সেখানকার আওয়ামী লীগের লোকজন বলেছে যে তিনি (মোকাব্বির) তো আমাদের লোক। এখানে গণফোরাম মানেই আওয়ামী লীগ, সূর্য মানেই নৌকা। সেখানকার মাইনোরিটি লোকজন এভাবেই স্লোগান দিয়েছে।’
নির্বাচনের পরে বলেছিলেন শপথ নেবেন না. তাহলে এখন কেন শপথ নিচ্ছেন— জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমরা সব সময় বলেছি যে এই মুহুর্তে শপথ নেবো না। আমি প্রথম থেকে বলেছি যে—আমার নির্বাচনি এলাকার মানুষের ইচ্ছা এবং আশঙ্কা, আমার ব্যক্তিগত মতামত এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমার দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটা আমারও সিদ্ধান্ত, গণফোরামের সিদ্ধান্ত। সেই কথাতে আমি এখনও আছি। আর গণফোরামের নির্বাহী কমিটির বৈঠকের পরে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন—আমরা শপথের বিষয়ে ইতিবাচক। পরে যখন স্যার ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন যে আমরা এই মুহুর্তে শপথ নিচ্ছি না। কারণ, তখন শপথ নেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথ নিতে যাচ্ছি।
মোকাব্বির খান দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে শপথ নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে রাত ৯ টার দিকে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘ শপথ না নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত শপথ না নেওয়া। সেটা এখনও বহাল আছে। সেটার কোনও পরিবর্তন হয় নাই। আগামী ২০ এপ্রিল আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আছে। এর বাইরে গিয়ে কেউ যদি শপথ গ্রহণ করে থাকে সেটা তার নিজ দায়িত্বে। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’
আর গণফোরামের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, ‘ ড. কামাল হোসেন কিন্তু গণফোরামের মালিক নন। তিনি দলের সভাপতি এবং আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি ছাড়া তিনি একা কোনও সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।’
সূত্র বাংলা ট্রিবিউন