স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে
হাকালুকি হাওরের তালিমপুর ইউনিয়নের কৈয়াকোনা অভয়াশ্রম থেকে মাছ লুট করার জন্য সদা তৎপর থাকে একটি প্রভাবশালী চক্র। গেল কয়েক বছরে ওখানকার বড় মাছ ধরতে একাধিকবার চেষ্টা করেও পুরোপুরি সফল হয়নি। গেল শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার দিনে ও রাতে টানা জাল ফেলে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার মাছ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোনোভাবেই তাদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা মাছগুলো রক্ষা করা যাচ্ছে না। স্থানীয় ওই প্রভাবশালী চক্র নিজেদের সরকার দলের লোক পরিচয়ে দাপট দেখিয়ে তারা ওই বিলের মা মাছ নিধনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অভয়াশ্রমের মা মাছগুলোর উপর ওদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ায় নানা কায়দা কৌশলে ওই মিঠা পনির মাছ ধরতে তারা এখন মরিয়া। তারা নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে অভয়াশ্রম ঘোষিত বিলসহ অন্যান্য বিল থেকেও মাছ লুটে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চক্রটি। জানা যায়, ওই চক্র যেমন অভয়াশ্রমের বিল থেকে মাছ লুটে তৎপর।
তেমনি বর্ষা মৌসুমে ভাসমান পানিতে দেদার অবৈধভাবে মা ও পোনা মাছ নিধন করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। তবে ওই সময়ে কয়েকটি দলে একটি সিন্ডিকেট হয়ে চালায় এমন মা ও পোনা মাছ নিধনের অপকর্ম। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ওই চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দায়সারা গোচের দু-একটি অভিযানেই সব দায়িত্বই শেষ। এমন অভিযোগ হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের। জানা যায়, হাকালুকি হাওরে ২০১১ সালে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষিত কৈয়ারকোনা বিল থেকে আবারো মাছ লুট ও লুটের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে কিছু প্রভাবশালী স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা। ওই চক্রটি শুক্রবার রাতে জাল ফেলে বিল থেকে লাখ টাকার মাছ লুট করে। এর আগে বৃহস্পতিবারও বিলে জাল ফেলে। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাল ফেলার সময় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ভিসিজি সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে জাল টানে ওই চক্র। জানা যায়, ওই বাহিনী মাছ লুটের পরিকল্পনায় চলতি বছরের ১২ই জানুয়ারি রাতে বিলের পানি কমাতে বাঁধ কাটে। খবর পেয়ে পরদিন বড়লেখা উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাঁধ কাটা বন্ধ করেন। হাকালুকির প্রায় ৭৭ একর কৈয়ারকোনা বিলটি মাছের বিলুপ্তি রোধ, প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১১ সালে সরকার অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। ২০১২ সাল থেকে অভয়াশ্রম এ বিলে সরকারি কার্যক্রম শুরু হয়। বিল রক্ষণাবেক্ষণ ও পাহারার দায়িত্ব দেয়া হয় স্থানীয় হাল্লা ভিসিজিকে (ভিলেজ কনজারভেটিভ গ্রুপ)। দীর্ঘদিন ধরে কৈয়ারকোনা অভয়াশ্রম বিলে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় কিছু মৎস্যখেকোর। ইতিপূর্বে তারা কয়েক দফা চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলেও আবারো মাছ লুটে তৎপর হয়ে উঠেছে। এমন তথ্য দিচ্ছেন স্থানীয় মৎস্যজীবী ও হাওর পাড়ের বাসিন্দারা। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে হাল্লা গ্রামের ছনু মিয়া ও আশিক উদ্দিনের সহযোগিতায় স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী খাস কালেকশনের দোহাই দিয়ে কৈয়ারকোনা অভয়াশ্রম বিলে জাল ফেলে। এসময় বিলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা হাল্লা ভিসিজির সাধারণ সম্পাদক সোলেমান আহমদসহ অন্য সদস্যরা তাদের বাধা দেন এবং খাস কালেকশনের কাগজপত্র দেখতে চান। এর আগেই হাওরের ওই বিলে জালের জাল দিয়ে লাখ টাকার মাছ ধরে ফেলে। এসব মাছের অধিকাংশই ‘মা’ মাছ। যা ১০-১৫ দিনের মধ্যে ডিম ছাড়তো। তবে ভিসিজি সদস্যদের বাধায় মাছ লুটেরা বাহিনী এ দিন আর জাল না ফেললেও রাতে জাল ফেলার মহড়া দিয়েছে। শক্রবার রাতে আবারো জাল ফেলে বড় বড় মা মাছ লুট করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী তালিমপুর ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা ও স্থানীয় মৎসজীবীরা বলেন ওখানে দীর্ঘদিন থেকে দেশীয় প্রজাতির বড় বড় মাছ আশ্রয় নিয়েছে। এখান থেকে পুরো হাওরে মাছের বিস্তার হয়। ওই অভয়াশ্রমে থাকা বিল কেন খাস কালেকশনে দেওয়া হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। অভয়াশ্রম বিলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা হাল্লা ভিসিজির সাধারণ সম্পাদক সোলেমান আহমদ মুঠোফোনে মানবজমিনকে জানান গেল জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে স্থানীয় কিছু লোক সরকার দলের পরিচয়ে বিলটির মাছ ধরতে মরিয়া। নানা সময় সরকার দলের নেতাদের পরিচয় দিয়ে তারা ওই বিল থেকে মাছ ধরতে তৎপর। বৃহস্পতিবার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নিকট থেকে খাস কালেকশন নেয়ার দাবি করে কৈয়ারকোনা বিলে তারা জাল ফেলে। আমরা বাধা দেয়ায় ওরা চলে যায়। তবে অবৈধভাবে তারা বেশ কিছু মাছ ধরে নিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন ওই চক্রটি ওখান থেকে মাছ লুটের নানা ফন্দি আঁটছে। ওদের বিরুদ্ধে যদি দ্রুত আইনি পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তা হলে অভয়াশ্রম ঘোষিত ওই বিলের মা মাছসহ সব মাছই লুট করবে ওরা। মাছ লুটের ঘটনা জেনেছেন কিনা এমন বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আ শ ম শফিক উজ জামান মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন মাছ লুটের এমন অভিযোগ এখন আমি পাইনি। ছুটির দিন থাকায় হয়তো এখবর আমার কাছে পৌঁছায়নি। তবে আমি এখনই খবর নিচ্ছি এবং ওখানকার মৎস্য কর্মকর্তাকে জানিয়ে মা মাছগুলো লুট বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সূত্র.মানবজমিন