টরন্টোতে মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

অজন্তা চৌধুরী, টরন্টোঃ

ব্যাপক আড়ম্বরের মধ্য দিয়ে টরন্টো ভিত্তিক বাংলাদেশী তরুণদের সংগঠন গ্রীন এন্ড রেড হূইলার্স এর বাৎসরিক স্বাধীনতা দিবস মোটর র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো গত ২৪শে মার্চ। বাংলাদেশ এবং কানাডার জাতীয় পতাকায় সজ্জিত শতাধিক গাড়ির বিশাল বহর, টরন্টো পুলিশ বাহিনীর সক্রীয় অংশগ্রহণ, টরন্টোতে নিয়োজিত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল জনাব নাইম আহমেদ, প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট সদস্য ডলি বেগম এমপিপি এবং রিমা বান্স্-র্ম্যাকগাওয়ন এমপিপি সহ স্থানীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি, শিল্পী, লেখক এবং বুদ্ধিজীবী সহ কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ এবং র‍্যালি শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সুস্বাদু খাবার, এ সব নিয়ে পুরো টরন্টোর বাংলাদেশী কানাডিয়ান কমিউনিটির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো এই স্বাধীনতা দিবস মোটর শোভাযাত্রা। কানাডার অন্যতম বিখ্যাত প্রাকৃতিক নিদর্শন ব্ল্যাফার্স পার্ক মেরিনা। একদিকে ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড় আর অন্যপাশে লেক অন্টারিওর দিগন্ত জোড়া শান্ত নীল জল, মাঝে এক চিলতে ছোট্ট সবুজ পার্ক। এই স্থানটি থেকেই প্রতি বছর গ্রীন এন্ড রেড হূইলার্স এর স্বাধীনতা র‍্যালির শুরু হয়।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর মোটর শোভাযাত্রাটি কিংস্টন রোড ধরে মেইন স্ট্রিট হয়ে “বাঙালী পাড়া” খ্যাত ডানফোর্থ রোড ধরে এগিয়ে শেষ হয় ওকরিজ কমিউনিটি সেন্টার এ। প্রায় সাড়ে এগারো কিলোমিটার দীর্ঘ এর যাত্রাপথের অনেক জায়গাতেই রাস্তার দুপাশের বাঙালী-অবাঙালী মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এই শোভাযাত্রা। বাঙালীরা যেমন হাত নেড়ে অথবা গাড়ির হর্ন বাজিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেন, তেমনি অবাঙালীরাও নানান প্রশ্নের মাধ্যমে জেনে নেন হাজার মাইল দূরের ছোট্ট সবুজ বাংলাদেশের কথা, এর বীরত্বপূর্ণ অভ্যুদয়ের কথা, কানাডাতে বাস করা কয়েক লক্ষ বাংলাদেশীর কথা।

আয়োজনটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গ্রীন এন্ড রেড হূইলার্স এর অন্যতম সংগঠক কাওসার হামিদ জানান “এবারের র‍্যালি আমাদের এ ধরণের দ্বিতীয় আয়োজন। গত বছর আয়োজিত প্রথম র‍্যালিতে আমরা ৭১ টি গাড়ী রেখেছিলাম, স্বাধীনতার বছর ১৯৭১ কে স্মরণ করে। কিন্তু আমাদের গ্রূপের সদস্যদের দাবী ছিলো এই সংখ্যা আরো বাড়ানোর। যেহেতু টরন্টো পুলিশ আমাদের সক্রিয় সহযোগী, তাই তাঁদের পরামর্শে এবার ১০১ টি গাড়ীর জন্য পরিকল্পনা করি, কিন্তু উপস্থিতি বেশী হওয়ায় শেষ মুহূর্তে এই সংখ্যা আরও একটু বাড়াতে হয়েছে। পর পর দু’বছরের সাফল্যের পর আমরা আশা করি আগামীতে এই বহর আরও দীর্ঘ করার সুযোগ থাকবে। আয়োজনটির সফলতার পেছনে আমাদের গ্রীন এন্ড রেড হূইলার্স এর সদস্যদের নিয়ে তৈরী বেশ বড় একটি আয়োজক গ্রূপ দায়িত্ব পালন করেছে। আর সাংস্কৃতিক অংশটির দায়িত্বে ছিলেন টরন্টোর নামকরা মিউজিশিয়ান ভাইয়েরা। প্রায় দুই বছর আগে কমিউনিটির কিছু তরুণ আমরা চায়ের কাপের আলোচনায় এমন একটি র‍্যালির আয়োজনের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলাম। এই গ্রূপটির নিরলস পরিশ্রম আর কঠিন একাগ্রতার ফসল হলো আজকে দ্বিতীয়বারের মতো হতে চলা এই র‍্যালি। প্রতিবারই এই র‍্যালির সমাপ্তিটা গানে আর সুরে উৎসবমুখর করতে সাহায্য করেন আমাদের অগ্রজ টরন্টোর খ্যাতিমান সব শিল্পীরা। আর এই পুরো আয়োজনের সফলতার জন্য দুজন মানুষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে। এঁরা হলেন টরন্টোর তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় সংগঠক রিজওয়ান রহমান এবং স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট এর নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশী এমপিপি ডলি বেগম। রিজওয়ান ভাই শুধু আমাদের গ্রূপ এর সদস্যই নন, তাঁর আন্তরিক পরামর্শ আর অনুপ্রেরণায় আমরা এগিয়ে যাবার সাহস পাই যে কোনো অসাধ্য সাধনে। শুধু এই র‍্যালি’ই নয়, বছর জুড়ে নানান রকম সমাজকল্যাণমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অনুপ্রেরণা দেন তিনি। আর এমপিপি ডলি বেগম সংসদে নির্বাচিত হবার অনেক আগ থেকেই গ্রীন এন্ড রেড হূইলার্স এর একজন সদস্য হিসাবে তিনি আমাদের সাথে আছেন। এই দুজন মানুষের উৎসাহ এবং সহযোগিতা এই আয়োজনকে অনেক সহজ করেছে।”

গ্রীন এন্ড রেড হুইলার্স এর অপর সংগঠক আশিক ভূঁইয়া বলেন “বছর জুড়ে আমরা নানান সামাজিক সচেতনতা মূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করি। এর মধ্যে কয়েকটিতে টরন্টো পুলিশ বাহিনী আমাদের সহযোগী হিসাবে সাথে থাকে। তাই আমাদের বাৎসরিক এই র‍্যালিটির আয়োজনে তাঁরাও বিশেষ আগ্রহী থাকেন। তাঁদের এই সহযোগিতার কারণেই এই ১১ কিলোমিটার যাত্রাপথ পার হওয়াটা হয় বেশ সুশৃঙ্খল আর সহজ। এবারো তাঁদের গাড়ী আমাদের বহরের শুরুতে, মাঝে এবং শেষে থেকে আমাদের এই শোভাযাত্রাটিকে বিশেষত্ব দিয়েছে। র‍্যালির শুরুতে বাংলাদেশের সম্মানীত কনসাল জেনারেল নাইম আহমেদ এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ডলি বেগম এবং রিমা বান্স্-র্ম্যাকগাওয়ন, টরন্টো পুলিশ বিভাগের প্রতিনিধি অফিসার জনি ববিলি উপস্থিত থেকে আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় স্বীকৃতি। শোভাযাত্রাটি সফল করতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন আয়োজক টীম এর সদস্য মাহমুদ রিজভী, নীতুন দাস, স্যাম জামান, সেমল চৌধুরী, ওলিউর রহমান লিমন, রাদিয়া, মাহবুব আহমেদ সজীব, আসিফ রায়হান, কাজী হাসান, মুহীব রহমান, সাদুন, সামীর আতহার, তাহনান হোসাইন এবং মীর হক। আমরা পুরো গ্রীন এন্ড রেড হূইলার্স পরিবারের পক্ষ থেকে এই র‍্যালিতে আসা সবাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।”
র‍্যালি শেষের সাংস্কৃতিক অংশটি ছিলো গতানুগতিক আনুষ্ঠানিকতার বাহিরে, যার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশী-কানাডিয়ান তরুণ মিউজিশিয়ান তানজীর আলম রাজীব এবং সোহেল ইমতিয়াজ। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ছিলেন খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী জিয়াউল ভূইয়াঁ রিঙ্কো। তাঁদের সাথে ছিলেন কিবোর্ডে আকিব আখতার, বেজ গিটারে শাহাদাত হোসেন এবং রিদম গীটারে রিয়াদ মাহমুদ। সংগীত পরিবেশন করেন রিয়াদ, রিঙ্কো এবং রাফিন, আরো ছিলেন ব্যান্ড সংগীতের দল ট্রেস। অনুষ্ঠানের শেষে রালীতে অংশগ্রহণের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং আগামী বছর আরো বড় পরিসরে এবং একটু ভিন্ন আমেজে র‍্যালি আয়োজনের প্রতিশ্রূতি দিয়ে আয়োজকরা উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

 

শেয়ার করুন