সম্মেলনের এক বছরেও কমিটি নেই জুড়ী ছাত্রলীগের, নেতারা বিদেশমূখী

মঞ্জুরে আলম লাল, জুড়ী :: সম্মেলনের এক বছরেও মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি হয়নি। এর আগে দীর্ঘ ২১ মাস কমিটিহীন ছিল জুড়ী উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগ। কমিটি না থাকায় নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ হতে বঞ্চিত নেতাকর্মীরা এখন বিদেশমূখী।

ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২৬ আগস্ট জুড়ী উপজেলা গঠন হয়। ২০০৫ সালের ২৭ জুলাই হাবিবুর রহমান চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও সেলিম আহমদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট জুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের প্রথম কমিটি অনুমোদন করেন মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মবশ্বির আহমদ। এর পাঁচদিন পর ৩১ জুলাই সায়রুল আলমকে আহ্বায়ক ও চন্দন দাসকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি কমিটি অনুমোদন করেন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সজিব হাসান ও রেজাউল করিম সুমন। সেই থেকে জুড়ী ছাত্রলীগ দু’ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে।

২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর জুয়েল রানাকে সভাপতি ও সিদ্দিকুর রহমান সুমনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন করেন মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ জাকারিয়া। এর কিছু দিন পর শেখরুল ইসলামকে সভাপতি ও আব্দুল মতিনকে সাধারণ সম্পাদক করে আরেকটি কমিটি অনুমোদন করেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মোহাম্মদ সৈকত। এভাবে পৃথক কমিটির মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের বিভক্তির ছোঁয়া উপজেলায় ছড়ানো হয়। আর এতে স্থানীয় ভাবে অভ্যন্তরীণ সংঘাত বিশৃঙ্খলা চরম আকার ধারণ করে।

২০১৫ সালের ২৬ জুলাই কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সম্মেলনে জুড়ীর ছেলে এস এম জাকির হোসাইন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় জুড়ী ছাত্রলীগ ও আওয়ামী পরিবারে আশার আলো জেগেছিল এখন হয়তো জুড়ী ছাত্রলীগ সঠিক দিশা পাবে। কিন্তু তা পায়নি। পদ প্রত্যাশী সবাই জাকির বন্দনায় নেমে পড়েন। এ প্রতিযোগিতা রূপ নেয় প্রতিহিংসায়। যে কারণে জাকির হোসাইনকে একটি সংবর্ধনা দিতে পারেনি স্থানীয় ছাত্রলীগ।

এমনি এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলা বজায় ও সংগঠনের স্বার্থ রক্ষার্থে একটি সুন্দর ও সু-শৃঙ্খলিত কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ২৮ অক্টোবর ২০১৫ মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান রনি ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রনি স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগ ইউনিট ও জুড়ী উপজেলার অন্তর্ভুক্ত ছাত্রলীগের সকল ইউনিট বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

পরবর্তীতে জুড়ী উপজেলা শাখার কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সভাপতি ও সম্পাদক পদে প্রার্থীতা আহ্বান করে জেলা ছাত্রলীগ। নির্ধারিত সময়ের শেষ দিন ১৮ নভেম্বর ২০১৫ সভাপতি পদে ১৪ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৪৫ জন প্রার্থী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। কিন্তু স্থানীয় ভাবে সংগঠন দু’টি ভাগে বিভক্ত থাকায় জেলা নেতৃবৃন্দ কমিটি গঠনে হিমশিম খান। উপরন্তু কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের নিজ উপজেলা হওয়ায় বিষয়টি আরও জটিল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের ও কেন্দ্রিয় নেতার পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সমন্বয় প্রক্রিয়ায় দ্বিমতের কারনে কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি। কমিটি গঠনের জন্য প্রকাশ্য কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। গোপনে অনেক বৈঠক হলেও তা ব্যর্থ হয়।

অবশেষে দীর্ঘ একুশ মাস পর ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই গভীর রাতে হুমায়ূন রশিদ রাজীকে আহ্বায়ক ও আব্দুল হান্নানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগ এবং শাহাব উদ্দিন শাবেলকে আহ্বায়ক ও মিজানুর রহমান মিজানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট জুড়ী টি এন খানম ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন করেন মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান রনি ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রনি।

উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সকল যুগ্ম আহ্বায়কের (৯ জন) স্বাক্ষরে সকল ইউনিট কমিটি গঠন করে তিন মাসের মধ্যে উপজেলা সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ তাঁদের পছন্দের লোককে নেতৃত্বে আনতে না পারায় কমিটি গঠন হয়নি।

সাড়ে আট মাস পর মাত্র পাঁচ দিনের নোটিশে ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জুড়ী উপজেলায় এটা ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলন। সম্মেলনে উপজেলা ও কলেজ কমিটি বাতিল ঘোষণা করে দুই শাখার সভাপতি-সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করে জেলা ছাত্রলীগ। ১৪ এপ্রিল উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীরা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিলেও সম্মেলনের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এখনও গঠন হয়নি কমিটি।

দীর্ঘ দিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করে পদ-পদবী পাওয়ার আশায় অনেকেই অপেক্ষমাণ ছিলেন। কিন্তু অদৃশ্য প্রভাবে বছরের পর বছর কমিটি না হওয়ায় ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে নেতাকর্মীরা এখন বিদেশমূখী হচ্ছেন। ইতিমধ্যে ২০/২৫ জন নেতা প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকের বয়স অতিক্রম হয়ে গেছে। অনেকে চলে গেছেন চাকরীতে। আবার কমিটি না হওয়ায় পদ-পদবী পাওয়া থেকে বঞ্চিত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীরা অনুমোদনহীন বিভিন্ন সংগঠনের নামে কমিটি গঠনের প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। উদ্দেশ্য হল নামের পাশে একটি পদবী লাগানো। তিন দফায় সাড়ে তিন বছর কমিটি না থাকায় স্থানীয় ছাত্রলীগে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসার সুযোগ হয়নি বলে বিভিন্ন পদ প্রত্যাশীরা মন্তব্য করেন।

জুড়ী উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী ফয়সল আহমদ, শাহাব উদ্দিন সামছু, আব্দুল হান্নান, শাহাব উদ্দিন শাবেল, তাপস দাস, ইকবাল ভূইয়া উজ্জ্বল প্রমুখ দ্রুত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, জুড়ী ছাত্রলীগে যখন চরম গ্রুপিং ছিল তখন নেতৃত্বও ছিল। এখন গ্রুপিং নেই, নেতৃত্বও নেই। নেতাদের কাছে তদবীর করেও কমিটি করাতে পারিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারনে কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে। তবে অচিরেই কমিটি করা হবে।

সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম বলেন, মন্ত্রী মহোদয় ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে খুব শীঘ্রই কমিটি ঘোষণা দেয়া হবে।

শেয়ার করুন