জানা গেছে, আগে শুধু চট্টগ্রাম নিলাম কেন্দ্রেই চায়ের আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হতো। ২০১৮ সালের মে মাসে প্রথমবারের মতো চায়ের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্র চালু হয়েছে শ্রীমঙ্গলে।
শ্রীমঙ্গল প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের (পিডিইউ) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. একেএম রফিকুল হক বলেন, চলতি মাসের ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রামেই নিলাম কেন্দ্রে এ মৌমুসের প্রথম চা নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। আর শ্রীমঙ্গলে হবে ২০ মে। এছাড়াও শ্রীমঙ্গলে যে তারিখগুলোতে চায়ের নিলাম অনুষ্ঠিত হবে সে তারিখগুলো- ২৫ জুন, ৩০ জুলাই, ২৬ আগস্ট, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২৮ অক্টোবর, ২৫ নভেম্বর, ৩০ ডিসেম্বর, ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২ মার্চ ২০২০ বলে ড. একেএম রফিকুল হক জানান।
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানায়, সরকারি ছুটির কারণে কয়েকটি নিলাম পূর্বনির্ধারিত সময়ের পরে অনুষ্ঠিত হবে। আশুরার ছুটির কারণে ১৮তম নিলাম ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবারের পরিবর্তে ১১ সেপ্টেম্বর বুধবার অনুষ্ঠিত হবে।
দুর্গাপূজার ছুটির কারণে ২২তম নিলাম ৮ অক্টোবার, মঙ্গলবারের পরিবর্তে ৯ অক্টোবর বুধবার চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে সরকারি ছুটির কারণে মৌসুমের সর্বশেষ ৪৫তম নিলাম আগামী ১৭ মার্চ ২০২০ মঙ্গলবারের পরিবর্তে ১৮ মার্চ ২০২০ বুধবার চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে গত অর্থবছরে শ্রীমঙ্গলে চায়ের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্রে প্রথম মৌসুমের ১০টি আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এসব নিলামে সব মিলিয়ে চা বিক্রি হয়েছে প্রায় পৌনে দুই কোটি কেজি। চায়ের বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৫২১ কোটি টাকা। শ্রীমঙ্গলে চায়ের নিলাম কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে দেশে চায়ের এ দ্বিতীয় নিলাম কেন্দ্রটি প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো হয়েছে।
টিপিটিএবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১৪ মে শ্রীমঙ্গলে চায়ের দ্বিতীয় নিলাম কেন্দ্রে প্রথম আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নিলামে সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৫৭ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছিল। এ থেকে আয় হয়েছিল ১৫ কোটি টাকা। এ নিলামে প্রতি কেজি চা গড়ে ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল কেজি প্রতি ৩০০ টাকা। এ নিলাম কেন্দ্রে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নিলামটি অনুষ্ঠিত হয় ২৫ জুন। এ নিলামে মোট ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫০ কেজি চা বিক্রি হয়। চায়ের গড় দাম কেজি প্রতি ২৭০ টাকা। বিক্রি হওয়া চায়ের বাজার মূল্য ছিল ৩৫ কোটি টাকা। ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত তৃতীয় নিলামে ৫১ কোটি টাকায় সব মিলিয়ে ১৮ লাখ ৪ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছিল। প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ২৭৫ টাকা। সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল কেজি প্রতি ৪০০ টাকা।
২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রে চতুর্থ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এই নিলামে মোট ২২ লাখ ১১ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়। গড় দাম কেজি প্রতি ২৮০ টাকা। সর্বোচ্চ দাম ছিল কেজি প্রতি ৩৯০ টাকা। এ নিলামে সব মিলিয়ে ৬৮ কোটি টাকার চা বিক্রি হয়েছিল।
২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পঞ্চম নিলামে ৭০ কোটি টাকায় মোট ২২ লাখ ৯১ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছিল। এ সময় চায়ের সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৩৩০ টাকা। আর গড় দাম ছিল কেজি প্রতি ২৯৮ টাকা। ২৯ অক্টোবর ষষ্ঠ নিলামে চায়ের বেচাকেনা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ লাখ ৭২ হাজার কেজিতে। আর আয় হয় ৭০ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ২৯৫ টাকা। সর্বোচ্চ দাম ছিল কেজি প্রতি ৩৩০ টাকা।
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর শ্রীমঙ্গলের সপ্তম নিলামে ২৪ লাখ ৯৬ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছিল। সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল কেজি প্রতি ৩৫০ টাকা। আর গড় দাম ছিল কেজি প্রতি ২৯০ টাকা। বিক্রি হওয়া চায়ের বাজার মূল্য ছিল ৭৪ কোটি টাকা। ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম নিলাম। এতে ৭৫ কোটি টাকায় মোট ২৬ লাখ ৩ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছিল। এ সময় প্রতি কেজি চায়ের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৫০ টাকা। আর গড় দাম কেজি প্রতি ২৫০ টাকা।
শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় নবম আন্তর্জাতিক নিলাম। এ নিলামে ৫৮ কোটি টাকায় মোট ১৯ লাখ ৭২ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়। সর্বোচ্চ দাম দাঁড়ায় কেজি প্রতি ৩৫০ টাকা। আর গড় দাম কেজি প্রতি ২৪০ টাকা। এ কেন্দ্রে মৌসুমের সর্বশেষ দশম নিলামটি অনুষ্ঠিত হয় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। এ নিলামে ৩ লাখ কেজি চা বিক্রি হয়েছে। সম্মিলিত আয় দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ২৭০ টাকা।
শ্রীমঙ্গল ফিনলে টি কোম্পানির ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম শিবলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে কোন বিনিফিট পাচ্ছি না। তার কারণ হল শ্রীমঙ্গলে নিলাম হয় আর পরিবহনের মাধ্যমে চা পাতা চট্রগ্রাম ওয়্যারহাউজে পাঠাতে হচ্ছে। যদি ওয়্যারহাউজ শ্রীমঙ্গলে থাকতো তাহলে আমরা লাভবান হতাম। পরিবহন খরচ লাগতো না। তিনি বলেন, সময়ের ব্যাপার ওয়্যারহাউজ স্থাপন হইতে। আর একই কথা জানালেন, নাহার চা বাগানের ব্যবস্থাপক পীষুশ কান্তি ভট্রাচার্য্য।
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী পপুলার টি হাউসের প্রোপ্রাইটর শহীদ আহমদ জানান, নিলাম চালুর অল্প সময়ের মধ্যে শ্রীমঙ্গলে চায়ের আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্র বেশ জমে উঠেছে।’