হিজরী সনের অষ্টম মাস হল শা’বান মাস। পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদের কাছে এ মাসটি শবেবরাতের মাস হিসাবে পরিচিত। আমি এখানে শবেবরাতের আলোচনা বাদ দিয়ে শধু মাত্র রাসুল (সাঃ) সুন্নাহ মোতাবেক এ মাসে আমাদের কী করা উচিৎ সে বিষয়ই আলোচনা করতে চাই।
রাসুল সাঃ এর নিয়মিত অভ্যাস ছিল তিনি সপ্তাহে দুইদিন এবং চন্দ্রমাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতেন। হযরত ওসামা ইবনে যায়েদ দেখলেন রাসুল সাঃ শা’বান মাসে খুব বেশী রোজা রাখছেন, তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন আপনি এত বেশী রোজা রাখছেন কেন? «يا«يا رسول الله! لم ارك تصوم شهرا من الشهور ما تصوم من شعبان؟! قال: ذلك شهر يغفل الناس عنه، بين رجب ورمضان، وهو شهر ترفع فيه الأعمال إلى رب العالمين، فأحب أن يرفع عمل، وأنا صائم»
রাসুল সাঃ ওসামার প্রশ্নের জবাবে যা বললেন তার সার সংক্ষেপ হল তিনটি কথা (ক) রজব ও রামাদান মাসের মাঝখানের এ মাসটির ব্যাপারে মানুষ গাফেল থাকে। (খ) এ মাসে বান্দার আমলনামা আল্লাহর সামনে পেশ করা হয়। (গ) আমি চাই আমার আ’মল আল্লাহর সামনে এমন ভাবে পেশ করা হোক যেন আমি রোজা আছি (সুনানে নাসাঈ)।
বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় তিনটি সময় বান্দার অবস্থা আল্লাহর সামনে তুলে ধরা হয়।
(ক) প্রতিদিন ফজর ও আসরের নামাজের সময় আল্লাহ ফেরেশতাদের কাজ থেকে বান্দাদের অবস্থা জানেন এবং তাদের ক্ষমা করে দেন , এজন্য ফজর ও আসরের নামাজের গুরুত্ব এত বেশী। (খ) সপ্তাহে এক দিন, আর তাহল বৃহস্পতিবারে, এজন্য রাসুল সাঃ ঐদিন রোজা রখতেন আর তিনি বলতেন যে আমি চাই আল্লাহর দরবারে আমার আমল এমন সময় পেশ করা হোক যেন আমি রোজা আছি। (গ) প্রবন্ধের শুরুতে যে হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে তা থেকে জানা যায় প্রতি বছর শা’বান মাসে আল্লাহর সামনে বান্দার আমল পেশ করা হয় এজন্য রাসুল সাঃ এমাসে এত বেশী রোজা রাখতেন যে ওসামা রাঃ তার কাছে জানতে চাইলেন তিনি এত বেশী রোজা রাখেন কেন? জবাবে রাসুল সাঃ বললেন আমি রোজা রাখি এজন্য যে আমার আমল আল্লাহর সামনে পেশ করার সময় আমি যেন রোজা থাকি।
সুতরাং উল্লেখিত আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে শা’বান মাসের অন্যতম ইবাদাত হল বেশী বেশী নফল রোজা রাখা। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল আমরা শধু মাত্র শবেবরাতের রোজা রাখি অথচ শবেবরাতের রোজার ব্যাপারে সহীহ কোন হাদিস পাওয়া যায়না। সহীহ হদীস থেকে জানা যায় রাসুল সাঃ প্রতি সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখতেন সোম ও বৃহস্পতিবার এবং প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখ। সুতরাং আমাদের উচিৎ যদি সম্ভব হয় তাহলে এ মাসে সপ্তাহে দুই দিন সোম ও বৃহস্পতিবার এবং ১৩,১৪ও ১৫ তারিখ রোজা রাখা। শবে বরাতের রোজা হয় শা’বান মাসের ১৫ তারিখ, শুধু মাত্র ১৫ তারিখ রোজা রাখলে শুন্নাত আদায় হবেনা। সুন্নাত মোতাবেক রাখতে হলে তিন (১৩,১৪ ও ১৫) দিন রাখতে হবে। কাজের ঝামেলা যদি সোমাবার, বৃহস্পতিবার ও ১৩,১৪, ও ১৫ তারিখ না রাখতে পারেন তাহলে যে দিন কাজ নেই সে দিন হলেও রোজা রাখেন।
এ মাসে রোজা রাখার উপকারঃ-
(ক) এ মাসে বান্দার আমল আল্লাহর সামনে পেশ করা হয় তাই আপনি যদি রোজা রাখেন তাহলে আপনার আমল এমন সময় উপস্থাপন করা হবে যখন আপনি রোজা আছেন।
(খ) সারা বছর দিনের বেলা খাওয়ার আভ্যাস, তাই হটাৎ করে রমজানে পানাহার বন্ধ করলে অনেক কষ্ট হয়, তাই কয়েক দিন আগে থেকে এ অভ্যাস করলে রমজানে তেমন কষ্ট হবেনা।
(গ) রাসুল সাঃ বলেছেন মানুষ এ মাসের গুরুত্বের কথা ভুলে যায়। মানুষ যখন কোন এবাদাতের ব্যাপারে গাফেল থাকে তখন যদি কেউ এবাদাত করে আল্লাহ খুব ভাল বাসেন তার ঐ বান্দাকে।
আসুন আমরা এ শা’বান মাসটাকে এবাদাতের মাধ্যমে কাজে লাগাই বিশেষ করে নফল রোজা রেখে, কুরআন তেলাওয়াত ও দান সাদাকার মাধ্যমে অতিবাহিত করি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে বেশী বেশী নেক আমল করার তাওফিক দিন (আমীন)
লেখক
ফারুক আহমদ
ইমাম, ড্যানফোর্থ ইসলামিক সেন্টার
টরন্টো, কানাডা।