সম্ভবত তখন আমি নবম শ্রেণীর ছাত্র। একটি রচনা মুখস্থ করি। ঐ রচনার একটি অংশ আমার এখনও মুখস্থ রয়েছে এবং এ মুখস্থ অংশ আমি প্রায়ই মনে মনে বিড়বিড় করি , তাহলো- ধর্ম মানব মনষা আর উপলব্ধির সম্পদ। ধর্মের কাছে মানুষ পায় আত্মজ্ঞান। ধর্ম মানুষকে শিখিয়েছে ভক্তি, বিনয়, শ্রদ্ধা। ধর্ম অন্তরে জাগায় ভালোবাসা। ধর্ম দেয় আত্ম নিবেদনের দীক্ষা আর আত্ম সংযমের শিক্ষা।
রচনার উপরে উল্লেখিত অংশটুকুর ভাব যথার্থই ধর্মের মর্মমূলের চেতনা। নোয়াখালীর একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান/ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ- উদ-দৌলা। সে তার ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করলো অতঃপর ছাত্রীকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করলো। আমরা লক্ষ্য করলাম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও তাঁর মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি/ উপলব্ধি নেই। ধর্ম থেকে সে ধারণ করেনি কোন আত্মজ্ঞান। ধর্মীয় চেতনা তার অন্তরে জাগাতে পারেনি কোনো বিনয়, শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা। সে গ্রহণ করেনি আত্মনিবেদনের দীক্ষা, গ্রহণ করেনি আত্ম সংযমের শিক্ষা।
গাধা বইয়ের বস্তা বহন করে। কিন্তু বইয়ের জ্ঞান ধারণ করেনা, করতে পারেনা। পরিতাপের বিষয় গাধা মার্কা সিরাজ-উদ-দৌলা একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও ধর্মকে উপলব্ধি করেনি, ধর্মকে ধারণ করতে পারেনি। ধর্মের কাছ থেকে আত্ম-নিবেদনের আত্ম-সংযমের শিক্ষা গ্রহণ করেনি। বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে সিরাজ – উদ- দৌলার মত লোকের অভাব নেই। এঁরা ধর্মের মধ্যে থেকে অ- ধর্মের প্রতিভু।
আমরা যখন কোন ঘটনা ঘটে তা থেকে খুব একটা শিক্ষা নেই না। বিশেষ করে আমাদের রাষ্ট্র-সংঘ দুর্বল হওয়ার কারণে কোনো ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ও পযাপ্ত গবেষণা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনা, করতে পারেনা।
ঘৃনিত সিরাজ উদ দৌলা কর্তৃক সংঘটিত সবশেষ অপরাধ তার অতীতের অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতার চুড়ান্তরূপ। ঘৃণীত সিরাজ তার অতীত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করেছে পুলিশ, বিচার বিভাগ, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র- সংঘের মধ্যে অবস্থান করে। তাই ঘৃনীত সিরাজের অতীত কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি এবং ইহা এখন সময়ের দাবী। ঘৃণীত সিরাজের শাস্তি নিশ্চিত হোক এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় দৃঢ় ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। নুসরাত হোক আমাদের আলোকবর্তিকা।