নিশাতুর রহমান কোরেশী::
_____________________________________________
শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে বিগত সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মন্তব্য করেছিলেন তিনি শেয়ার মার্কেট বুঝেননা- শেয়ার মার্কেট রাবিশ। মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। সে হিসেবে তার শেয়ার মার্কেট গভীর থেকে গভীরতর ভাবে না বুঝা অস্বাভাবিক নয়। তবে তার মহত্ত্ব , যোগ্যতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায় তার অকপটে সত্য মন্তব্য থেকে। এতে আশ্বস্ত হওয়া যায় যে, উনার দ্বারা শেয়ার মার্কেটের ক্ষতি সাধন হওয়ার সুযোগ ছিল না; হওয়ার সম্ভাবনা ছিলনা; যেহেতু তিনি তার দূর্বল দিক সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন।
ইদানিং শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে বর্তমান অর্থমন্ত্রী জনাব আ হ ম মুস্তফা কামাল কিছু মন্তব্য করেছেন। তাঁর ভাষায় শেয়ার মার্কেটে সিংহ ও ছাগল শাবকের খেলা চলছে। আর্থিক দিক থেকে অতিশয় ক্ষমতাধর ও শক্তিশালী ধনী একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী সিংহের ভুমিকায় রয়েছে। অন্য দিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগণ হলো ছাগল শাবক। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ছাগল শাবকদের পক্ষে কোন ভাবেই সিংহের সাথে লড়াই করে ঠিকে থাকা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ার মার্কেটের জন্য সরকারের কিছুই করনীয় নেই।
মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেছেন, যদি সরকার ৫(পাঁচ) লক্ষ কোটি টাকা শেয়ার মার্কেটে প্রদান করে তবে শেয়ার মার্কেট তা গিলে ফেলবে। শেয়ার মার্কেটের কোন উন্নতি হবে না। তথা তার ভাষায় আমাদের দেশের শেয়ার মার্কেট ব্লাক হোলের ন্যায়। ব্লাক হোলে আলোক প্রতিফলিত হয় না। অনুরূপ সরকারের সব ধরনের প্রণধনা শেয়ার মার্কেটের ক্ষেত্রে নিষ্ফল হবে।
এছাড়া, মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের ভাষায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশে শুধু শিক্ষিত লোকেরা শেয়ার মার্কেটে আসে। আমাদের দেশে বেশির ভাগ অ-শিক্ষিত লোক শেয়ার মার্কেট ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। এতো এতো অশিক্ষিত শেয়ার বিনিয়োগকারীকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শেয়ার মার্কেট ব্যবসা সম্পর্কে বুঝানো সম্ভব নয়। শেয়ার মার্কেট তার নিজস্ব গতিতে চলতে চলতে এক সময় স্থিতিশীল হবে।
উপরোক্ত দু’জন অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের চিন্তা ভাবনার সাথে শেয়ার মার্কেটে অবস্থানকারী ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ছাগল শাবকদের চিন্তার বিস্তর ফারাক রয়েছে। তাঁরা মনে করেন শেয়ার মার্কেট প্রতিষ্ঠার একটি মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। তাঁরা এও মনে করেন শেয়ার মার্কেটের সাথে জড়িত রয়েছে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, আমদানি হ্রাস, রপ্তানি বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মুলধনের যথাযথ ব্যবহার, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা-ভারসাম্য বজায় এবং অর্জন সহ আরো অনেক অনেক বিস্তর বিষয়াদি। রাষ্ট্র-সংঘের সবোর্চ্চ দ্বায়িত্ব নিয়ে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, আমদানি-রপ্তানি, ক্ষুদ্র পূঁজির সদ্ব্যবহার, কর্মসংস্থান সহ বহুবিধ আর্থিক ঘাত,খাত, প্রতিঘাতের সাথে নিবিড় সম্পর্কিত শেয়ার মার্কেট বুঝিনা বলা যেমন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য অস্বস্তিকর তেমনি দূর্ভাগ্যজনক। অন্য দিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগণ-কে জেনে শুনে বুঝে সংখ্যায় স্বল্প অথচ আর্থিক শক্তি মত্তায় অতি ক্ষমতাধর ধনীক শ্রেণীর বিপদজনক থাবার মধ্যে রেখে রাষ্ট্রের কোনো করনীয় নেই বলা অন্যায্য।
ক্লাস সিক্স অথবা সেবেন-এ যখন পড়ি তত সময়ের একটি ঘটনা আমাকে বেশ আলোড়িত করে। আমাদের বাড়ির সামনে একটি বাংলো টাইপ জরাজীর্ণ ঘর ছিল। সে বাংলো ঘরে বিশাল আকৃতির একটি ভিমরূলের চাক দেখে ভিমরূলের বাসায় আমরা কয়েকজন দূর থেকে ঢিল ছুড়ি আর দৌড়ে পালাই। দুই আড়াই ঘন্টার ব্যবধানে ভিমরুলের বাসার একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকল না। দুই/তিন ঘণ্টা পর লক্ষ্য করি ঢিল ছুঁড়লে ভিমরুল আমাদের কামড়াতে আসে কিন্তু কাছে এসে ফিরে যায়। ভিমরুল আঘাতে আঘাতে কামড়ানোর আত্মশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এবার শেয়ার মার্কেটে অবস্থানকারী ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অবস্থা ভিমরুলের ন্যায় । তারা আত্মশক্তি হারিয়েছে। প্রতিবাদের শক্তি হারিয়েছে। অতএব, শেয়ার মার্কেট ভিন্ন পর্বে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।