বিএনপির নবগঠিত জেলা কমিটির প্রথম সভা ॥ উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা

 

ইমাদ উদ দীন
দীর্ঘ দিন থেকে বিভক্ত থাকা মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি এখন ঐক্যবদ্ধ। ভেদাভেদ ভুলে এখন তারা একইমঞ্চে।
২ মে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে নবগঠিত জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ একমঞ্চে বসে প্রথম সভা করছেন বক্তব্যও রেখেছেন। গতকাল মৌলভীবাজার পৌর জনমিলন কেন্দ্রে নবগঠিত জেলা কমিটির প্রথম সভাটি বিএনপি ঘরণার নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল “টক অবদ্যা জেলা”। গেল ক’দিন থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে ছিল নবগঠিত জেলা কমিটি ও প্রথম সভা। বাদ যাননি অন্যরাও। সমমনা দল, ২০ দলীয় জোট ও অনান্য দলের নেতাকর্মীদের মুখেও ছিল এনিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা। তবে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়াকে সকলেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে বয়ে চলা গ্রুপিং দ্বন্ধ কিছুতেই থামছিলনা। দলের দূর্দিনে কেন্দ্রীয় নানা কর্মসূচী পালন হত পৃথক পৃথক ভাবে। এনিয়ে দলের নিবেদীত প্রাণ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কষ্ঠ ও ক্ষোভের অন্ত ছিলনা। জেলার কমিটির ওই দ্বন্ধ প্রভাবিত করেছিল উপজেলা পর্যায়ে সহযোগী সংগঠন গুলিতেও। অবশেষে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে আর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের আন্তরিকতায় দীর্ঘদিনের জিয়ে থাকা অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ অবসান হল।
জানা যায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন আগে থেকেই দ্বন্ধ নিরষসনে নমনীয় হতে থাকেন গ্রুপিং দ্বন্ধে থাকা নেতৃবৃন্দ। জাতীয় নির্বাচনে তারা পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামেন। এর বাস্তবতা হল ওই নির্বাচনে নানা প্রতিকূলতা ও অভিযোগের পরও এজেলার ৪টি সংসদীয় আসনেই সম্মানজন ভোট পাওয়া এমনকি একটি আসনে ধানের শীষ প্রতীক জয়লাভও করে। এর ধারাবাহিকথায় নির্বাচনের পর অপূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রীয় অনুমোদন দেয়। এতে বিবাদমান গ্রুপের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরাই স্থান পান। ওই কমিটি ঘোষণার পর দু’একজন ছাড়া সকলেই নবগঠিত কমিটিকে স্বাগত জানান। নবগঠিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আয়োজনে পৌর জনমিলন কেন্দ্রে জেলার নবগঠিত কমিটির প্রথম সভায় একই মঞ্চে বসেন নেতৃবৃন্দ। প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের পুত্র,সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান মিজান এর পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হাসান,বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবন।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন জনগণের মধ্যে বিএনপির জনপ্রিয়তা ১শত গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থা ৯১ সালেও ছিল না। মানুষের আস্তা অর্জন করতে পেরেছে বিএনপি। নির্বাচনের পর সংকট অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বিএনপি তৃণমূলকে শক্তিশালী করে স্বৈরাচারী পতন করবে”। বেগম খালেদা জিয়াকে আইনি মামলা নয় প্রতিহিংসার মামলা কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। মানুষ এখন আর ভোট দিতে চায় না। এখন আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই নির্বাচন শুরু হয়। প্রশাসন আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, ঘোষণার জন্য আছে নির্বাচন কমিশন। কোন অবস্থাতেই জনগণ সম্পৃক্ত নির্বাচন হয়নি। তাই নির্বাচনে এখন জনগণের আস্থা নেই। এর অন্যতম উৎকৃষ্ঠ উদাহরণ উপজেলা নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন। তাই ভোটারের উপস্থিতি আর ভোট কাস্টিং পাসেন্টিজও হতাশাজনক। খুন,গুম,ধর্ষণ,মিথ্যা মামলা,হামলা,রাহাজানি,ব্যাংক ডাকাতি,উন্নয়নের নামে লুটপাঠ, শিক্ষাব্যবস্থা,গণমাধ্যম,আদালত ও বিচার বিভাগ দখল,গণতন্ত্র ও মানুষের বাক স্বাধীনতাও হরনকারী ভোট চোর জালিম সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের নূন্যতম আস্থা নেই। একারনেই মাঠ পর্যায়ে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এটা ধরে রাখতে হবে। সকল ভেদাভেদ ভূলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন সংগ্রাম আন্দোলন ছাড়া কোন দিনও কোন স্বৈরশাসকের পথন ঘটনো সম্ভব হয়নি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা: সাখায়াত হাসান জীবন বলেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে মিথ্যা সাজানো মামলায় কারাঅন্তরীণ রাখা হয়েছে। নানা ষড়যন্ত্র আর কুট কৌশল করে তারেক জিয়াকেও দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছেনা। তিনি বলেন আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনার হাতে দেশ,জনগণ ও গণতন্ত্র আজ অনিরাপদ। দেশের এই সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলন ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সম্মানিত সদস্য হাজ্বি মুজিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ফয়জুল করিম ময়ুন,জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, মৌলভী আবদুল ওয়ালী সিদ্দিকী, মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: হেলু মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক বকসী মিছবাহ উর রহমান, আলহাজ্ব মতিন বক্স, অর্থবিষয়ক সম্পাদক মনোয়ার আহমদ রহমান, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান, জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক কুলাউড়া পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন আহমেদ জুনেদ, আবুল হাফিজ, আইনুল হক মিনু, জিতু মিয়া, গোলাম কিবরিয়া শফি, মাস্টার দুরুদ আহমদ, ইয়াকুব আলী ও নুরুল আলম সিদ্দিকী প্রমুখ। সভায় নবগঠিত জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে আন্দোল সংগ্রামে আহত, নিহত ও বেগম খালেদা জিয়াসহ অসুস্থ নেতাকর্মী দেশ ও জাতীর কল্যাণে দোয়া করা হয়।
শেয়ার করুন