বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো ওরাও। জীবনের শুরুতেই দারিদ্রতা আর নানা অসঙ্গতির সঙ্গে নিত্য লড়াই যেন ওদের নিয়তি। তবে নানা প্রতিকূলতার সাথে নিরন্তর সংগ্রাম করেও জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছে এ সকল মেধাবীরা। ভাল ফলাফলে দুচোখ ভরা উচ্ছ্বাস থাকলেও উচ্চ শিক্ষার ব্যয় কিভাবে মিটবে সে দুশ্চিন্তাও প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফিরছে তাদের। তবে সব প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে সফল হওয়ার চেষ্টা তাদের অব্যাহত। ভবিষৎতে আরো ভালো ফলাফল করে দেশ গড়ার কাজে অংশীদার হতে চান তারা। কিন্তু আর্থিক সংকটে তাদের ওই স্বপ্ন কি পূরণ হবে?
পিএসসি ও জিএসসি সহ এবারের এসএসসি পরীক্ষায়ও এপ্লাস পেয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দরিদ্র মেধাবীরা। সহপাঠী, শিক্ষক, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন আর শুভাকাঙ্খীদের সহমর্মিতা ও পরামর্শ তাদের সাফল্যের পেছনে প্রেরণার বাতিঘর হিসাবে ভূমিকা রেখেছে। এমনই কয়েকজন মেধাবীর গল্প তুলে ধরা হলো।
মাহফুজা জান্নাত মিমিঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বঙ্গবন্ধু আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তির্ণ হয়েছে মাহফুজা। বাবা মইন উদ্দিন দুবাই প্রবাসী। মা অফিয়া বেগম গৃহীনি। ২ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের দক্ষিণ পাশের ভুকশিমইল ইউনিয়নের বাদে ভুকশিমইল গ্রামের বাসিন্দা মাহফুজা। নানা প্রতিকূলতা ও গ্রামের বৈরি পরিবেশের মধ্যেও প্রভল ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মাহফুজা তার এ সাফল্য অর্জন করেছে। সে লেখাপড়া করে ডাক্তার হয়ে হাকালুকি হাওর পারের অবহেলিত মানুষের জীবনমানের এবং দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে চায়।
তাহমিদা আক্তারঃ মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার রাজনগর আইডিয়েল হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তির্ণ হয়েছে তাহমিদা। তাহমিদার বাবা নজরুল ইসলাম একজন রাজ মিস্ত্রী। পাকার কাজ করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকম চলছে তাদের পরিবার। ৩ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে তাহমিদা তৃতীয়। তাহমিদার বাবার পক্ষে লেখাপড়ার ব্যয় বার বহন করতে না পারায় বড় দুই বোনকে ইতি মধ্যে পাত্রস্থ করেছেন দরিদ্র বাবা। তাহমিদার স্বপ্ন লেখাপড়া করে ডাক্তার হওয়া। কিন্তু টাকার অভাবে এস্বপ্ন কতটুকু বাস্তবায়ন হবে বুঝে উঠতে পারছেন না তাহমিদা। সে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতেও এপ্লাস পেয়েছে।
আজমল হোসেন ঃ মৌলভীবাজারের রাজনগর পোর্টিয়াস মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তির্ণ হয়েছে আজমল। বাবা বেলাল আহমদ দীর্ঘ দিন ধরে প্যারালাইসিস রোগী। মা অনেক আগেই মারা গেছেন। আজমল মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বাবার দেখাশোনা, চিকিৎসা ব্যয় বার ও পরিবারের খরচ সব কিছুই তাকে বহন করতে হয়। স্কুল ছুটি হওয়ার পর ৪/৫টি টিউশনি করতেন আজমল। টিউশনির টাকা দিয়েই চলতেন। বোর্ড বই’র বাহিরে নিজের ছিলনা কোনো গাইড বই। তার পরেও নিজের চেষ্টা ও আন্তরিকতায় এই ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্য তিনি আল্লাহ তায়ালার শুকুরিয়া আদায় করার পাশাপাশি শিক্ষ, সহপাঠি ও আত্মীয়স্বজনের কাছে কৃতজ্ঞ। আগামী দিনের লেখাপড়ার জন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।