শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়ায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে মোবাইল টাওয়ার নির্মাণের প্রতিবাদে শ্রীমঙ্গল শহরে মানববন্ধন করেছে ‘লাউয়াছড়া জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলন’ সংগঠনের কর্মীরা।
বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেন তারা।
রবিবার সকাল ১১টায় শ্রীমঙ্গল শহরের চৌমুহনা চত্বরে ‘লাউয়াছড়া জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলন’ এর আয়োজনে মানববন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
সংগঠনের আহবায়ক জলি পালের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাসানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- শ্রীমঙ্গল মহিলা পরিষদের সভাপতি প্রভাসিনী সিনহা, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সদস্য সৈয়দ আমিরুজ্জামান, আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক কাজী শামছুল হক, যুগ্ম আহবায়ক তাপস দাস, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) এর মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক আ স ম সালেহ সোহেল, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক জহর লাল দত্ত, লাউয়াছড়া খাসি (খাসিয়া) পুঞ্জির গ্রাম প্রধান ফিলা পত্মী, জেলা যুব ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর জয়েস, কবি ও নাট্যকার জহিরুল মিঠু, নাট্য নির্দেশক ফয়সল আহমেদ, কবি ও লেখক জাবেদ ভুঁইয়া প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, লাউয়াছড়া একটি অতি সংবেদনশীল বন। এ বনে মোবাইল টাওয়ার বসালে এখানকার পশু পাখি জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। লাউয়াছড়ায় টাওয়ার বসানোর সিদ্ধান্ত বন ধ্বংসের পায়তারা বলেই মনে হচ্ছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে টাওয়ার বসালে যে মোবাইল নেটওয়ার্কের রেডিয়েশনের প্রভাবে প্রাণীদের জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। বন্যপ্রাণীদের জন্য হুমকিস্বরুপ। এর প্রভাবে পাখির ডিমসহ বন্যপ্রাণীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বক্তারা বলেন, আমরা মোবাইল টাওয়ার বসানোর বিপক্ষে নই। তবে সেটা যেন বনের বাইরে হয়। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে উনার মন্ত্রীসভার একজন মন্ত্রী এ রকম বক্তব্য কিভাবে ফেসবুকে লিখেন? আইসিটি মন্ত্রীর হয়তোবা ধারণাই নেই লাউয়াছড়ায় মোবাইলের টাওয়ার বসালে কি ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের। রাস্ট্রের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আশা করা যায় না। ফেসবুকে এ ধরনের মন্তব্য করার জন্য তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।
মন্ত্রীরা এসি রুমে বসে এরকম সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এই জায়গায় এসে দেখে যাবার আহবান জানালেন বক্তারা।
মানববন্ধন শেষে সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে বাংলাদেশ বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
তবে এ নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বুধবার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে মোস্তাফা জব্বার লিখেন-
”আমি অন্তত একটি বিষয় বুঝতে পারি না যে, ডিজিটাল যুগে বসে আমাদের ভাবনাটা এতো পেছনে কেন? লাউয়াছড়ায় টেলিটকের টাওয়ার বানানো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই টাওয়ারে গাছপালা ও বণ্যপ্রাণীর নাকি ক্ষতি হবে। আমি বুঝি না, টাওয়ার ছাড়া লাউয়াছড়ায় মানুষ কিভাবে নেটওয়ার্ক পাবে। ওখানে যদি টাওয়ার ক্ষতিকারক হয় তবে মানুষ যেখানে বাস করে সেখানে টাওয়ার কেন? সব টাওয়ার বন্ধ করে দিলে কেমন হয়!”।
মৌলভীবাজারের সহকারী বন সংরক্ষক (বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) আনিসুর রহমান বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটারের ভিতরের ভিতরে এমন মোবাইল টাওয়ার বসানোর কোন অনুমতি নেই। কোম্পানির টাওয়ারের রেডিয়েশনের প্রভাবে পাখির ডিম ও বন্যপ্রাণির জীব-বৈচিত্র্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এছাড়াও বনে টাওয়ার বসালে নেটওয়ার্ক শক্তিশালী থাকে। এতে গাছচোর চক্র নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সহজেই বনে অপকর্ম করতে পারে। আমরা এখানে কোন অবস্থাতেই টাওয়ার বসাতে দেবো না।