মৌলভীবাজার প্রতিনিধি.
লিবিয়া থেকে ইতালিতে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবির ঘটনায় মৌলভীবাজরের বড়লেখা উপজেলার জুয়েল আহমদ (২৩) নামে এক যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। বাড়িতে চলছে কান্নাকাটি।
জুয়েল বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছাতারখাই গ্রামের জামাল উদ্দিন ছেলে।
বড়লেখার ইউএনও মো.শামীম আল আমিন বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে মোবাইল ফোনে এতথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অনেকদিন আগ থেকে নাকি নিখোঁজ। তার খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল মঙ্গলবার শুনলাম সে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ রযেছে।
জুয়েলের পরিবার জানিয়েছেন , ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর থেকে জুয়েলের কোনো খোঁজ খবর নেই। পরিবারের ধারণা, ওই নৌকা ডুবিতে জুয়েলও ছিলেন।
এদিকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, নৌকাডুবিতে নিহতদের মধ্যে ২৭জন বাংলাদেশী রয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে ১৯জনই সিলেটের। তাদের সবার পরিচয় মিলেছে। আর উদ্ধার হওয়া বাকি ১৬জনের মধ্যে ১৪জনই বাংলাদেশী।
তবে এই দুটি তালিকায় বড়লেখার জুয়েলের নাম পাওয়া যায়নি।
জুয়েলের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ইতালিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়া পাড়ি দেন বড়লেখা উপজেলার জুয়েল আহমদ। কিন্তু ইতালিতে যাওয়া হয়নি জুয়েলের। লিবিয়ায় কেটে যায় প্রায় দেড় বছর। এখানে দীর্ঘদিন থাকার পর এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় ইতালিতে বসবাসরত বিশ্বনাথ উপজেলার দালাল পারভেজের সঙ্গে।
দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে জুয়েলকে ইতালিতে নেওয়ার আশ্বাস দেন পারভেজ। চুক্তি অনুযায়ী জুয়েলের বাবা জামাল উদ্দিন গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের দালাল পারভেজের বাবা রফিক উদ্দিনের কাছে নগদ আড়াই লাখ টাকা তুলে দেন।
গত ৯ মে নৌকাযোগে জুয়েলসহ অনেকে ইতালিতে উদ্দেশ্যে রওয়ান দেন। তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ভূমধ্যসাগরে এই নৌকা ডুবির পর থেকে জুয়েলের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
জুয়েলের বাবা জামাল উদ্দিন বছর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে জুয়েলকে ইতালিতে নেওয়ার কথা বলে বড়লেখা বেয়ালীয়া গ্রামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে বিয়ানীবাজার উপজেলার দালাল বদরুল ইসলাম ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয় । তারা প্রথমে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠায়। কথা ছিল সেখান থেকে তাকে ইতালিতে পাঠানো হবে। কিন্তু দেড়বছরেও আমার ছেলেকে তারা ইতালিতে পাঠাতে পারেনি। লিবিয়ায় থাকা অবস্থায় জুয়েলের এক বন্ধুর মাধ্যমে বিশ্বনাথ উপজেলার পারভেজ নামে আরেক দালালের সাথে পরিচয় হয়। পারভেজ ইতালিতে থাকেন। সেও আমার ছেলেকে ইতালি নেওয়ার জন্য আড়াই লাখ টাকা নিয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমি বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পারভেজের বাবা রফিক উদ্দিনের হাতে নগদ আড়াই লাখ টাকা দেওয়া হয় ।
তিনি আরও জানান, ১০ মে ইতালিতে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে যে নৌকাডুবি হয়েছে, সেটিতে তার ছেলে জুয়েলও ছিল। আগেরদিন জুয়েল তাকে ফোন করে জানিয়ে ছিল , নৌকা করে ইতালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবে।
বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য কবির আহমদ বলেন, ছাতারখাই গ্রামের জামাল উদ্দিন বছরের ছেলে জুয়েল আহমদের কোনো খোঁজ মিলছে না। তিনিও ওই নৌকায় ছিলেন বলে তার পরিবার বলেছে। আমরা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা জুয়েলের খোঁজ খবর নিয়ে তার তথ্য পেলে জানাবে।