এসআই রশিদুলের সহযোগিতায় মায়ের কোলে ফিরছে চুরি হওয়া দুই শিশু
কুলাউড়া প্রতিনিধি: কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে উদ্ধার হওয়া পিতৃহারা দুটি শিশু রাহাত ও সুরমাকে রেলওয়ে থানার এসআই রশিদুল ইসলামের সহযোগিতা এবং তত্ত্বাবধানে তাদের মায়ের বুকে ফিরে যাচ্ছে। ভিক্ষাবৃত্তির জন্য চুরি করে নিয়ে আসা এক মহিলার কাছ থেকে উদ্ধারের পর শিশু দুটিকে তাদের আপন ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন এই পুলিশ।
এদিকে শিশু দুটিকে উদ্ধার করতে পারলেও পুলিশের তৎপরতা টের পেয়ে তাদের চুরি করা ওই মহিলাটি পালিয়ে যায়। জানা যায়, বুধবার ১৫ মে বিকেলে কুলাউড়া রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে এক মহিলার সাথে একটি মেয়ে ও একটি ছেলে শিশুকে দেখতে পান রেল থানার এসআই রশিদুল ইসলাম। বিষয়টি সন্দেহ হলে ওই মহিলা ও শিশু দুটিকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শিশু সুরমা জানায়, ওই মহিলা তাদেরকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে চট্টগ্রামের বিরলাপাড়া থেকে নিয়ে এসেছে। পরে তাদেরকে মারধর করে এবং কাউকে কিছু বললে মেরে ফেলা হবে বলে শিশু দুটিকে হুমকী দিতে থাকে। ৫দিন আগে তাদেরকে ট্রেনে করে এখানে(কুলাউড়ায়) নিয়ে আসে। এরপর থেকে তার ভাই রাহাতকে আটক করে ভয় দেখিয়ে ওই মহিলা বলে ‘ভিক্ষা করে টাকা এনে দিবি, নয়তো তোর ভাইকে মেরে ফেলবো’।
রেল থানায় উদ্ধার হওয়া আপন ভাই বোন শিশু রাহাত ও সুরমা জানায়, তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের বিরলাপাড়ায়। তাদের পিতার নাম অহিদুল ও মায়ের নাম শিল্পী। তাদের আরো দুই ভাই তিন বোন রয়েছে। বাবা রিকশাচালক ছিলেন। বাব মারা যাওয়ার পর মা বাসাবাড়িতে কাজ করেন। তারা জানায়, ‘ওই মহিলা তাদেরকে বেড়ানোর কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে এবং পরে আমাদের মারধর করে এবং ভিক্ষা করতে টাকা এনে দিতে বলে। সুরমা জানায়, ‘কাউকে কিছু বললে এবং টাকা না এনে দিলে আমার ভাইকে মেরে ফেলা হবে এই ভয় দেখায় ওই মহিলা’। কুলাউড়া রেলওয়ে থানার এস আই রশিদুল ইসলাম বলেন, গত ৪দিন ধরে ওই শিশুদুটিকে অমানবিক নির্যাতন চালায় মহিলা। বুধবার বিকেলে মহিলার কাছে শিশু দুটিকে দেখতে পেয়ে আমার সন্দেহ হয়। তখন আমি জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ওই মহিলা বলে, ‘শিশু দুটিকে আমি এখানে খুঁজে পেয়েছি।’ এক পর্যায়ে মহিলাটি পালিয়ে যায়। এসময় শিশু দুটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করিয়ে খাওয়া দাওয়া ও গোসল করানোর জন্য স্থানীয় পৌর শহরের জয়পাশা গ্রামের এক মহিলার কাছে তাদেরকে দেই। তারা আপন ভাই বোন। তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। রাতে জালালাবাদ ট্রেনে রেল পুলিশের মাধ্যমে চট্টগ্রাম রেল থানার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সেখানকার রেল থানা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ওই শিশু দুটিকে তাদের মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, ভিক্ষাবৃত্তির জন্য এই শিশু দুটিকে চুরি করে নিয়ে আসে এবং তাদেরকে পাশবিক নির্যাতন চালায়। মানবিকতার জন্য আমাদের উদ্যোগে শিশু দুটিকে তাদের মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি।
কুলাউড়া রেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক বলেন, যেহেতু শিশু দুটির পরিচয় পাওয়া গেছে তাই তাদেরকে আমাদের তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি।