প্রতিবাদ করায় ‘বলির পাঠা’ আবেদ রাজা!

  • শাকির আহমদ, কুলাউড়া প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে প্রতিবাদ করায় মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবেদ রাজাকে ‘বলির পাঠা’ বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নেতাকর্মীরা।

    আবেদ রাজাকে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা কমিটি। পাশাপাশি ওই পদে বিএনপির অন্য এক নেতাকে দায়িত্ব দিয়ে উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে জেলা বিএনপি।

    মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম নাসের রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জেলা বিএনপির সভাপতির বিরুদ্ধে আবেদ রাজার ‘কটুক্তি’ ও ‘আপত্তিজনক’ বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে রেজুলেশন নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. এ. জেড. এম জাহিদ হোসেন। কিন্তু জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ুনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আবেদ রাজা কোনো ধরনের দুঃখ প্রকাশ, অনুশোচনা ও রেজুলেশন করতে অপরাগতা জানান। এ পরিপ্রেক্ষিতে ও আবেদ রাজা ‘বিতর্কিত’ হওয়ায় তাকে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহবায়কের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

    তবে ওই বিজ্ঞপ্তিতে আবেদ রাজাকে তার বক্তব্যের জন্য ‘দুঃখ প্রকাশ করার’ জন্য কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ. জেড. এম জাহিদ হোসেন নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে যে তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, এ ব্যাপারে ‘কিছুই জানেন না’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি (জাহিদ হোসেন)।

    এদিকে আবেদ রাজাকে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর থেকে কুলাউড়ার তৃণমূল বিএনপিতে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এ নিয়ে কুলাউড়া বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে হতাশাও কাজ করছে।

    কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, দীর্ঘদিন পর কুলাউড়া বিএনপির গ্রুপিং ভেঙে ঐক্যবদ্ধভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। এর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা। এরকম অবস্থায় তাকে আহবায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেয়া সঠিক কাজ হয়নি।

    জানা যায়, গত ১৫ জুন কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন ধার্য করা হয়। ওই সম্মেলনকে ঘিরে কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার মোট ১২৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিল ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৩টি ইউনিয়নে ও পৌরসভায় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ গোপন ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলার আহ্বায়ক কমিটির ১৩ জনসহ ১৩ ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২৬ জন মিলে মোট ৩৯ জন কাউন্সিলরের গোপন ভোটের মাধ্যমে উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ওইদিন সকালে ‘অনিবার্য কারণবশত’ জেলা কমিটি তা স্থগিত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

    এরপর সম্মেলন স্থগিতের বিষয়টিকে ‘অগণতান্ত্রিক’ আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমানের পদত্যাগ দাবি করেন আবেদ রাজা। এরপর তাকে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহবায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

    আবেদ রাজাকে অব্যাহতি দিয়ে জেলা বিএনপির বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র এবং উক্ত কাউন্সিলের সভাপতি প্রার্থী কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুলাউড়া বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত করা হয়। কিন্তু আবেদ রাজা নেতাকর্মীদের কাছে সভাস্থলে জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।’

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, ‘গত কয়েক বছর আবেদ রাজা এককভাবে কুলাউড়া বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে কুলাউড়া বিএনপিতে এখন ঐক্যের সুর। দু-একজন সুবিধাবাদী নেতার ব্যক্তি স্বার্থে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত কুলাউড়া বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই কেন্দীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’

    আবেদ রাজাকে অব্যাহতির সত্যতা নিশ্চিত করে এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘এটা জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত।’

    অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আবেদ রাজার নেতৃত্বে গঠিত বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। তাই গ্রুপিং হওয়ার সম্ভাবনা নাই।’

    এ ব্যাপারে আবেদ রাজা বলেন, ‘আমরা যখন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি ঠিক তখন এরকম অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত যারা নিচ্ছেন তারা ইতিহাসের আস্থাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। এ ধরনের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত যারা নিচ্ছেন তাঁদেরকে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা প্রতিহত করবে।’

শেয়ার করুন